জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ট্রাস্টের হিসাব থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অন্য হিসাবে স্থানান্তরের অভিযোগে পাঁচ বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ওই হিসাবে কী ঘটেছিল? আসলে কী লেনদেন হয়েছে? হলেও কী সেটা নিয়মবহির্ভূত ছিল কি না, এ নিয়ে নানা মহলে রয়েছে ধোঁয়াশা। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে হওয়া আগের তদন্ত রিপোর্ট ও পুনঃ তদন্তের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু কালের কণ্ঠকে বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একটি দলের প্রধানের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছিল, সেটার অবশ্যই পুনঃ তদন্ত হওয়া উচিত। পাশাপাশি যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ কমিটি বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করে সামনে আগাবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, এক অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক অ্যাকাউন্টে অর্থ গেলেও এখানে আত্মসাতের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
বরং সুদে-আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে।
২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। ওই দিনই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সরকারের নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
কিন্তু সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় থাকা ওই অ্যাকাউন্টে কী ঘটেছিল তার পুনঃ তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একাধিক সূত্র জানায়, ওই সময় একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গোয়েন্দা ইউনিট। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল খুব গোপনে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এত বড় একটি বিষয় গোপন না করে বিষয়টি আবারও তদন্ত করে জনগণের সামনে আনা দরকার।
সত্যটা প্রকাশ করা দরকার।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, খালেদা জিয়া ১৯৯১-৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সোনালী ব্যাংক পিএলসি, রমনা শাখায় ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন। অ্যাকাউন্ট নম্বর ৫৪১৬। সৌদি আরব থেকে এই তহবিলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার বা চার কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা দান হিসেবে জমা হয়। এই অর্থ একটি ডিমান্ড ড্রাফট হিসেবে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে এসেছিল। এই অর্থ এতিমদের মধ্যে বিতরণের আগে প্রাথমিক পর্যায়ে এফডিআর হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়েছিল।
এই বিনিয়োগের অর্থ তছরুপ করা হয়েছে মর্মে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ডিপার্টমেন্ট একটি ‘গোয়েন্দা প্রতিবেদন’ তৈরি করেছিল। বিএফআইইউয়ের তৎকালীন কয়েকজন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সুদৃষ্টি লাভের আশায় এবং বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেগম জিয়া কারাভোগ করেন এবং এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করার অপবাদও পান।
বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, যে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেগম জিয়া কারাভোগ করেছিলেন, জাতির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে বিষয়টির পুনঃ তদন্ত করা জরুরি।