চারদিকে আধাপাকা বোরো ধানক্ষেত। মাঝখানের আনুমানিক তিন থেকে চার বিঘা আয়তনের একটি জমিতে তিনটি এক্সকাভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে গভীর খনন করে কাটা হচ্ছে মাটি। একাধিক ট্রাকে তুলে ৩০-৪০ মিনিট পর পর মাটি যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। এলাকায় গিয়ে গত শনিবার সকালে এই দৃশ্য দেখা গেছে গাজীপুর মহানগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর বিলে (চক)।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাটি ব্যবস্থাপনা আইন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ইসলামপুরে চলছে কৃষিজমি থেকে মাটি লুটের মহোৎসব। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। প্রথমে টপ সয়েল, পরে গভীর গর্ত করে লুটে নিচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ওই মাটি ডাম্প ট্রাক, পিকআপ ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ইটভাটা, সিরামিক কারখানা, নার্সারি ও নিচু জমি ভরাটকাজে সরবরাহ করছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।
নির্বিচারে মাটি কেটে নেওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
ইসলামপুর এলাকার খোরশেদ আলম রিপন, মো. রনি, নজরুল ইসলাম খান, সুমন ও হাইজুদ্দিন এবং হক মার্কেট এলাকার রিপন ও মনির এই সিন্ডিকেটের সদস্য। তবে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন খোরশেদ আলম রিপন।
স্থানীয় বাসিন্দা রাতুল তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপুরের চক থেকে একটি প্রভাবশালী মহল ভেকু মেশিনের সাহায্যে কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটা, সিরামিক কারখানা ও নিচু জায়গা ভরাট ও নার্সারি মালিকদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে।
অতিরিক্ত ভারবাহী ট্রাক ও ডাম্প ট্রাকের কারণে এলাকার গ্রামীণ সড়ক-মহাসড়ক নষ্ট হচ্ছে। টপ সয়েল কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশবিদ মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি থেকে মাটি উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষেধ। অন্যদিকে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও অবৈধ। অথচ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে মাটি কেটে বিক্রির রমরমা ব্যবসা।
এতে পরিবেশ ও জনপদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
মাটি ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম রিপন কালের কণ্ঠকে বলেন, মাটি কেটে নিলেও প্রতিবছর বর্ষাকালে চক পানিতে তলিয়ে পলি জমে গর্ত ভরাট হয়। পলির সঙ্গে অনেক সময় জমিতে বালুর স্তর পড়ে। তখন ফসল হয় না। মাটি কেটে নিলে পরের বছর আবার পলি জমি গর্ত ভরাট হয়ে যায়। ছোট আকৃতির ট্রাক ও মিনি ডাম্প ট্রাক দিয়ে মাটি বহন করায় সড়ক-মহাসড়ক নষ্ট করার অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ মাটির ট্রাকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণ বালু নিয়ে মহাসড়কে ট্রাক চলাচল করে।
এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন রিসিভ করেননি।