<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯৮ সালে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণে দক্ষিণ আইচা থানার চারটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সৌদি সরকারের আর্থিক সহায়তায় ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও জনবলসংকটসহ নানা কারণে হাসপাতালটি পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবায় ফিরতে পারেনি। বর্তমানে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় হাসপাতাল ভবন ও আবাসিক ভবনগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় ভূতুড়ে বাড়ি। হাসপাতালের সরঞ্জামগুলোও অকেজো অবস্থায় নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত থাকলেও হাসপাতালটির দেখভাল না করায় দিন দিন সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। হাসপাতালটির জনবলের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয় ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। ২০০০ সালে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দিয়ে ২০০১ সালের আগস্ট মাসে বহির্বিভাগ চালু করা হয়। আন্ত বিভাগ ও জরুরি বিভাগ চালু হয় ২০০৪ সালে। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আন্ত বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু ছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৩২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার একটি, মেডিক্যাল অফিসার চারটি, সিনিয়র স্টাফ নার্স চারটি, ফার্মাসিস্ট দুটি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) দুটি, প্রধান সহকারী একটি, অফিস সহকারী একটি, চালক একটি, ওয়ার্ডবয় দুটি, আয়া দুটি, নিরাপত্তা প্রহরী তিনটি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী তিনটি, মালি একটি, অফিস সহায়ক দুটি, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট একটি ও কুক বা মসলাবিট দুটি। হাসপাতালটি চালুর সময় সব কয়টি পদে জনবল থাকলেও পর্যায়ক্রমে তারা অন্যত্র চাকরি নিয়ে চলে যায়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে হাসপাতালে কর্মরত ১৬ জন কর্মচারী রাজস্ব খাতে নেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা করেন। ২০১৬ সালে সে মামলার রায় পান ওই কর্মচারীরা। আদালতের রায়ের পর তাঁরা অন্য হাসপাতালে চলে যান।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩২টি পদের মধ্যে ২৩টি পদই শূন্য রয়েছে। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) পদে রয়েছেন ডা. হুমায়ুন কবির, অফিস সহকারী পদে রয়েছেন হাবিবুল হক, কুক পদে রয়েছেন আঞ্জুমান বেগম। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সংযুক্তি হিসেবে হাসপাতালটিতে কর্মরত রয়েছে একজন চিকিৎসক ও পাঁচজন কর্মচারী।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির সীমানাপ্রাচীরের গ্রিল ও মূল ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভাঙা এবং জানালার গ্লাস ভাঙা। দোতলায় বাথরুমের বেসিন এবং কমোড ভেঙে পড়ে আছে। কক্ষগুলোতে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। তিনতলার গেট বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ছাদে মাদকের সেবনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবির হাসপাতালে কর্মরত থাকার কথা থাকলেও গত কয়েক মাসে তিনি একবারও হাসপাতালে আসেননি। লালমোহন উপজেলায় নিজ এলাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে সেখানেই রোগী দেখেন। এ ছাড়া মেডিক্যাল অফিসার ডা. তালহা সামিউল হককে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে হাসপাতালটিতে সংযুক্তি দেওয়া হলেও তিনি রোগী দেখেন দক্ষিণ আইচা একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বর্তমানে একমাত্র অফিস সহকারী হাবিবুল হক পুরো হাসপাতালটি দেখভাল করছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা আয়াতুন নেছা নামের এক বৃদ্ধা জানান, তাঁর নিজের বাত ব্যথা এবং নাতনি জোহানার সর্দিকাশির জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার না পাওয়ায় চলে যাচ্ছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয়নাল নামের আরেক রোগী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকে ভুগছেন। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছেন হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় পল্লী চিকিৎসককের কাছে যাচ্ছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে জানান, হাসপাতালটিতে মাত্র চারজন স্টাফ রয়েছে। আর বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরো কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারী সংযুক্তিতে দেওয়া হয়েছে। যেসব চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সেখানে সংযুক্তিতে দেওয়া হয়েছে তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালটির চিকিৎসক ও জনবলসংকট নিরসনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।</span></span></span></span></span></p>