নিয়োগপ্রক্রিয়ায় জালিয়াতির কারণে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত তনুসহ ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত (বরখাস্ত) করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছেন আরো ২৬ জন। পবিপ্রবিতে ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করল। অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র ২০২১ সালের ১৭ মে থেকে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন।
পবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য ড. কাজী রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন না নিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগ প্রকাশ করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। সে অনুযায়ী ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। ইউজিসির অনুমোদন না থাকায় ওই কর্মকর্তারা সাময়িক বরখাস্তকালীন খোরপোশও পাবেন না।
’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘শুধু কর্মকর্তা নন, কর্মচারী নিয়োগেও অনিয়মের বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে। অনেকের ফাইলে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁদের কাগজ পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৬ কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (সাময়িক বরখাস্ত) গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। চাকরিচ্যুতির বিষয়টি উচ্চ আদালতকে লিখিতভাবে জানোনো হবে।
আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের ছেলে তানভীর হাসান স্বাধীন সেকশন অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, “২৭ ফেব্রুয়ারি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে ‘কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে আমি রেজিস্ট্রার দপ্তরে জবাব দিয়েছি।”
পবিপ্রবির সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদের নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না, এর কারণ জানতে সাবেক উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ চারজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
শামসুল হুদা রিফাত নামের এক চাকরিপ্রত্যাশীর দায়েরকৃত রিট পিটিশনের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত ওই রুল জারি করেন। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২৭ ফেব্রুয়ারি ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
এর আগে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ইউজিসিকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে তৎকালীন উপাচার্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চাকরিপ্রার্থী ইসরাত জাহান অনি পটুয়াখালীর আদালতে মামলা করেন। দুটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।