ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরিব ও দুস্থদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বিশেষ সুবিধার ভিজিএফ কার্ড লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোটার ভিত্তিতে বণ্টন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রকৃত দুস্থ মানুষের চেয়ে দলীয় লোকেরাই বেশির ভাগ এই কার্ডের চাল হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের গরিব ও দুস্থের জন্য ৪৫২ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এর বিপরীতে ৪৫ হাজার ১৯৯টি কার্ডে জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল পাবে তারা।
গেল সপ্তাহে ইউনিয়ন পরিষদের সভায় উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ‘কোটার’ ভিত্তিতে কার্ড বণ্টনের দাবি করেন। তাঁদের রোষ থেকে বাঁচতে দাবি মেনে নেয় পরিষদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের গরিব ও দুস্থের জন্য পাঁচ হাজার ৫০০টি ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিএনপি এক হাজার, জামায়াত ৫০০, গণ অধিকার পরিষদ ২০০টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রায় দুই হাজার কার্ড রাজনৈতিক কোটায় হাতিয়ে নিয়েছে।
তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের সাড়ে পাঁচ হাজার কার্ডের মধ্যে বিএনপি ৬০০, জামায়াত ১৫০, জেএসডি ১৫০, ইসলামী আন্দোলন ৫০, নাগরিক পার্টি ১৫০ ও খেলাফত মজলিস ১৫০টি কার্ড বরাদ্দ পেয়েছে।
অন্যদিকে চরমার্টিন ইউনিয়নের ছয় হাজার কার্ডের মধ্যে বিএনপি ৮৫০, জামায়াত ১৫০ ও জেএসডি ১৫০টি বরাদ্দ নিয়েছে। ইউনিয়নটির প্রশাসক উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার টিপু সুলতান রেখেছেন ৭০০ কার্ড। এ ছাড়া চরকাদিরা ইউনিয়নের সাত হাজার ৫০০ কার্ডের মধ্যে বিএনপি ৯০০, জামায়াত ৫০০ ও জেএসডির জন্য ৪০০টি কার্ড দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার চরমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ‘সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই রাজনৈতিক দলের জন্য ওই সব কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ নিজের নামে ৭০০ কার্ড রাখার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু নাম রেখেছি। যাতে গরিব-অসহায় মানুষকে দিতে পারি।’ চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে দলীয়ভাবে কার্ডগুলো ভাগ করে দিয়েছি।
তারা তাদের মতো করে এগুলো বিতরণ করবে।’ জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়ের তা অস্বীকার করে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সব সময় কোটার বিরুদ্ধে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম কাদের বলেন, ‘কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কোটা সিস্টেমে বরাদ্দ নিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘সরকারি সহায়তায় এ ধরনের কোটা থাকলে গরিব মানুষ বঞ্চিত হয় এবং এতে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাহাত উজ জামান বলেন, ‘এ ধরনের সিস্টেম কারা চালু করছে, খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’