লবণের রেকর্ড দরপতন

  • কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ৮ টাকা, মিলছে মাত্র ৩ টাকা
  • বিক্রি না করে গর্তে-গুদামে মজুদ করছেন কিছু চাষি
  • ১৭ বছরের মধ্যে দেশীয় চাষিরা এমন বিপর্যয়ে পড়েননি
ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া (কক্সবাজার)
ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া (কক্সবাজার)
শেয়ার
লবণের রেকর্ড দরপতন
উৎপাদন খরচের বিপরীতে বিক্রয়মূল্য না পাওয়ায় কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় মাঠের গর্তে ও গুদামে মজুদ করা হচ্ছে লবণ। ছবি : কালের কণ্ঠ

মধ্যস্বত্বভোগী মিল মালিক সিন্ডিকেট ও সরকারি সংস্থা বিসিক কর্মকর্তাদের সমন্ব্বিত যোগসাজশে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দেশীয় লবণ উৎপাদন শিল্প। জমি বর্গা, পলিথিন ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে লবণ উৎপাদনে যা খরচ হয়, সেই লবণ বিক্রি করে পুঁজিও থাকে না চাষিদের। উপায় না পেয়ে অনেক চাষি লোকসানে বিক্রি করলেও অনেকে দরপতনের কারণে উৎপন্ন লবণ মাঠের গর্তে, গুদামে মজুদ করে রাখছেন।

গত ১৭ বছরের মধ্যে দেশীয় লবণ চাষিরা এমন বিপর্যয়ের সম্মুখীন আর হননি।

প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে সাত-আট টাকা খরচ হয়। বিপরীতে বিক্রি করে মিলছে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা। এতে লগ্নীকৃত অর্থ তোলা নিয়েই চরম দুশ্চিন্তায় চাষিরা। ব্যাপক দরপতনের কারণে তাঁরা এখন বোবা কান্নায়।
এই পরিস্থিতিতে দেশীয় লবণ শিল্প বাঁচাতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাঁদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজারের সাত উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত মৌসুমে উৎপন্ন লবণ এখনো মাঠের গর্তে এবং বিভিন্ন গুদামে জমা আছে। যে পরিমাণ লবণ মজুদ আছে, তা দিয়ে আরো কয়েক মাস চলবে। তার ওপর চলতি মৌসুমেও উৎপাদনের ধুম পড়েছে মাঠে মাঠে।

আগামী মে মাস পর্যন্ত এই লবণ উৎপাদন অব্যাহতভাবে চলবে। সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন করেন কক্সবাজার জেলার চাষিরা। উখিয়া ও রামু ছাড়া বাকি সাত উপজেলায়ই লবণ উৎপাদন করা হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জানায়, ২০২৪ সালে শুধু কক্সবাজার অঞ্চলেই ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদন করা হয়েছে, যা বিগত ৬৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালের মৌসুমে দেশে প্রায় ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন লবণ উৎপাদন করা হয়েছিল।

এতে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনে চাষযোগ্য জমির পরিধির পাশাপাশি চাষির সংখ্যাও বেড়েছে।

২০২৪ সালে প্রতি মণ লবণ বিক্রি করে চাষিরা পেয়েছিলেন ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। মৌসুমের শেষার্ধে এসে লবণের মণপ্রতি দাম ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় নামে। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার ধুয়া তুলে কম সরবরাহ দেখিয়ে বিদেশ থেকে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।

দেশের লবণশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সম্প্রতি কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের জরুরি মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অভিযোগ করা হয়, মধ্যস্বত্বভোগী মিল মালিক ও বিসিকের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আমদানিকারক পুরনো সিন্ডিকেটটি আবারও তৎপর হয়ে উঠেছে। সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিছু লবণ মিল মালিক। তাঁরা একজোট হয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, যাতে বিদেশ থেকে যেকোনো উপায়ে লবণ আমদানি করা যায়। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চাষিরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশীয় লবণ শিল্পকে বাঁচানোর আকুতি জানান।

চাষি ও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা কালের কণ্ঠকে বলেন, চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে কেজিতে লবণের দাম নেমেছে তিন থেকে সাড়ে তিন টাকায়। কিন্তু প্যাকেটজাত করে সেই লবণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এতে খুচরা মূল্যে রয়ে যাচ্ছে বিরাট ফারাক। দালাল-মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ভারী হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা।

দেশের মধ্যস্বত্বভোগী মিল মালিকদের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়ে লবণ চাষি ও সংগ্রাম পরিষদের তোলা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য বিসিক কক্সবাজারের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চকরিয়ায় দুই নারীসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
শেয়ার
চকরিয়ায় দুই নারীসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারায় রুদ্রপল্লীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার ভোরে উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রুদ্রপল্লীর প্রয়াত হরিদাস রুদ্র মহাজনের একান্নবর্তী বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৫ সদস্যের ডাকাতদল দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে দুই নারী ও তিন পুরুষ সদস্য গুরুতর আহত হন।

আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ডাকাতরা দেড় ভরি স্বর্ণালংকার, ছয় ভরি রুপা, এক লাখ ৩১ হাজার টাকা, বেশ কয়েকটি দামি মোবাইল ফোনসেটসহ অন্তত ১০ লক্ষাধিক টাকার মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

মন্তব্য

বেঞ্চে বসা নিয়ে তর্ক সহপাঠীকে ছুরিকাঘাত

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
শেয়ার
বেঞ্চে বসা নিয়ে তর্ক সহপাঠীকে ছুরিকাঘাত

বিদ্যালয়ের বেঞ্চে বসা নিয়ে তর্কের মাঝে দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেছে তাদেরই সহপাঠী আরেক শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত অবস্থায় একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার দোহার উপজেলার লটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে এক শিক্ষক বিদ্যালয়ের পাশেই একটি বাড়িতে ওই প্রতিষ্ঠানেরই নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন।

এ সময় শিক্ষার্থী মো. রাব্বি আহমেদ ও মো. ইউসুফের সঙ্গে একই শ্রেণির মো. মশিউরের বেঞ্চে বসা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মশিউর প্রাইভেট শেষ করে সেখান থেকে চলে যায়। তার ঘণ্টাখানেক পর লটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে তার ক্লাসে ঢুকে ফের রাব্বি ও ইউসুফের বসে থাকা বেঞ্চে বসতে চায় মশিউর। তখন তাদের দুজনকে মশিউর তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই এলোপাতাড়ি কোপায়।

 

মন্তব্য
সংক্ষিপ্ত

দুই জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুইজনের মৃত্যু

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) ও দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) ও দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
শেয়ার
দুই জেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুইজনের মৃত্যু

দামুড়হুদায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে কাঠমিস্ত্রি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও পঞ্চগড়ে রুবেল ইসলাম নামে এক মেকানিকের মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কালিয়াবকরি বিশ্বাসপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। আব্দুল্লাহ আল মামুন কালিয়াবকরি বিশ্বাসপাড়া গ্রামের মৃত রহমান বিশ্বাসের ছেলে। স্থানীয়রা জানায়, মামুন কারখানায় ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে কাঠ পলিশের কাজ করছিল।

এদিকে, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে টিপার ট্রাক মেরামতের সময় হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাইনের স্পর্শে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে ট্রাকটি। এ সময় বিদ্যুৎস্পর্শে  রুবেল ইসলাম (২১) নামের এক মেকানিক নিহত হয়েছেন।

মন্তব্য

বন্দুকযুদ্ধে রাজন হত্যা মামলা তদন্তে পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
শেয়ার
বন্দুকযুদ্ধে রাজন হত্যা মামলা তদন্তে পিবিআই

ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৪ মে ময়মনসিংহে নিহত হয়েছিলেন ময়মনসিংহের পুরোহিত পাড়ার যুবক রাজন। সাত বছর পর রাজন খুনের ঘটনায় তাঁর বাবার করা মামলার তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন ময়মনসিংহের ১ নম্বর আমলি আদালত।

গত রবিবার বিকেলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক শরিফুল হক এই আদেশ দেন। মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন জেলা গোয়েন্দা শাখার সাবেক ওসি আশিকুর রহমানসহ ১৭ পুলিশ সদস্য।

জানা যায়, গত বছরের ৩১ অক্টোবর নিহত রাজনের বাবা হারুন অর রশিদ জেলা গোয়েন্দা শাখার সাবেক ওসি আশিকুর রহমানসহ ১৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। মামলার বিবরণে অভিযোগ করা হয়, জেলা গোয়েন্দা শাখার সাবেক ওসি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে রাজনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আটক করে। পরে তার লাশ পাওয়া যায়।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ