অলিম্পিকের শুরু থেকেই টম ক্রুজের দেখা মিলেছিল প্যারিসে। সিমোন বাইলসকে উৎসাহ দিতে দেখা গেছে তাঁকে। ‘মিশন ইমপসিবল’ তারকা আরো গুরুত্বপূর্ণ মিশনে যে প্যারিসে, সেটি দেখা গেল পরশু রাতে স্তাদ দি ফ্রান্সের সমাপনীতে। ছাদ থেকে লাফিয়ে নামেন তিনি অনুষ্ঠান মঞ্চে।
পরের অলিম্পিক লস অ্যাঞ্জেলেসে। হলিউল তারকা অলিম্পিক পতাকা নিয়ে এরপর রওনা হন এলএর পথে।
প্রথমে মোটরবাইকে স্টেডিয়াম ছাড়েন, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে হলিউডের আকাশে। নিজেই নিজের স্টান্ট করে অভ্যস্ত ক্রুজ সেখানে বিমান থেকে নামেন প্যারাশুটে।
প্যারিসকে বিদায় জানিয়ে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিককে স্বাগত জানানোর এমন নাটকীয় মঞ্চায়নই দেখা গেছে পরশুর সমাপনীতে। পাঁচ মহাদেশ আকৃতির মঞ্চ বানানো হয়েছিল মাঠের মাঝখানে। পতাকা হস্তান্তরের সময় সিমোন বাইলসও ছিলেন মঞ্চে। ৩ সোনা ও ১ রুপায় প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সফল
অ্যাথলেট তিনি। ৩ সোনা জিতেছেন তাঁর স্বদেশি সাঁতারু টরি হাস্কও, সঙ্গে দুটি রুপা তাঁর। সোনার দিক দিয়ে এবারের অলিম্পিকের সবচেয়ে সফল অ্যাথলেট আর কেউ নন, ফ্রান্সেরই লিওঁ মারশাঁ। ব্যক্তিগত ৪ সোনায় আসরটা নিজের করে নিয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই সাঁতারু। এদিন তাঁর হাত দিয়েই ১৭ দিন ধরে জ্বলা মশাল নিভেছে প্যারিস অলিম্পিকের।
সমাপনী মার্চ পাস্ট এদিন পদকজয়ীদের উৎসবের উপলক্ষ হয়ে উঠেছিল যেন।
গলায় পদক ঝুলিয়েই নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে ঢুকেছেন তাঁরা। পদক পাননি, এমন অ্যাথলেটরাও ছিলেন। বাংলাদেশের কেউই অবশ্য ছিলেন না, লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে মাঠে ঢুকতে দেখা গেছে একজন স্বেচ্ছাসেবককে। সমাপনী অনুষ্ঠানের পরিষ্কার দুটি বিভাগ—একটি প্যারিসকে বিদায় জানানোর, অন্যটি পরের স্বাগতিক শহরকে স্বাগত জানানোর। টম ক্রুজকে দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় ভাগ। তার আগে প্যারিসের মঞ্চ মাতিয়েছেন রক ব্যান্ড ফিনিক্স, বেলজিয়ান শিল্পী অ্যাঞ্জেলে। মাঠে সেই সুরের তালে দুলেছেন অ্যাথলেটরা। ৭১ হাজার আসনের গ্যালারিও ছিল পূর্ণ। গ্রিসের প্রাচীন অলিম্পিক থেকে আধুনিক অলিম্পিকের যাত্রাটাও সমাপনীর একটা অংশে ফুটিয়ে তোলা হয় মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লেতে।
সমাপনী ভাষণে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন প্যারিসের আয়োজকদের, ‘রোমাঞ্চকর, অসাধারণ এক অলিম্পিক উপহার দিয়েছে প্যারিস। আমরা জানতাম, এটা দারুণ কিছু হবে, কিন্তু এটা ছিল রীতিমতো জাদুকরী এক আয়োজন।’ এই পর্বে মঞ্চে বাখের সঙ্গী হয়েছিলেন পাঁচ মহাদেশ এবং শরণার্থী অলিম্পিক দলের একজন করে অ্যাথলেট। আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করছিলেন টানা ৫ অলিম্পিকে সোনা জেতা কিউবান কুস্তিগীর মিহাইন লোপেজ। ইউরোপ থেকে পাঁচ অলিম্পিক সোনা জেতা ফরাসি জুডোকা টেডি রাইনার ও ম্যারাথনবিদ এলিয়ুড কিপচোগে ছিলেন আফ্রিকার প্রতিনিধি। এশিয়া থেকে ছিলেন চীনা টেবিল টেনিস তারকা সুন উইংশা, প্যারিসে যিনি জোড়া সোনা জিতেছেন। ২০১৬ সাল থেকে অংশ নিচ্ছে শরণার্থী অলিম্পিক দল। এই প্রথম তাঁদের মধ্য থেকে প্যারিসে সোনা জিতেছেন বক্সার সিন্ডি এনগাম্বা, তিনিও ছিলেন মঞ্চে। আরেক শরণার্থী সিফান হাসান, যিনি ইথিওপিয়া ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডসে। এবার মেয়েদের ম্যারাথনের সোনা উঠেছে তাঁর গলায়। সেই পদক প্রদান অনুষ্ঠানও হয়েছে এদিন সমাপনী আয়োজনের মাঝে।
চোখ এখন লস অ্যাঞ্জেলেসে, চার বছর পর ক্রীড়া-বিনোদন যেখানে নতুন মাত্রা পাবে। তার একটি ঝলক এদিনই দেখা গেছে। টম ক্রুজ সেখানে পতাকা নিয়ে পৌঁছার পর মিনি কনসার্টও হয়ে গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার সাগরতীরে। বিলি আইলিশ, স্নুপ ডগ, ব্যান্ড ‘রেড হট চিলি পিপার্স’ যে মঞ্চ মাতিয়েছে। অলিম্পিকডটকম