<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">জন্মের পর থেকেই একজন মা তাঁর শিশুকে কাঁদতে ও হাসতে দেখেন। দিন-মাস-বছর পেরিয়ে যায়, শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে বাড়তে থাকে। সেই শিশুটি একদিন ধ্বনি থেকে শুরু করে শব্দ ও বাক্য বলা শেখে। তবে এ রকম সুন্দর বেড়ে ওঠার গল্প সব শিশুর ক্ষেত্রে কি এক রকম? উত্তর </span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">‘</span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">না</span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">’</span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">। কিছু শিশুর বেড়ে ওঠার বিকাশধারা থাকে ভিন্নতর। তাদের আমরা ব্যতিক্রমী শিশু, বিশেষ শিশু কিংবা প্রতিবন্ধী শিশু বলে থাকি। এসব ব্যতিক্রমী শিশুর মধ্যে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরা একেবারে ভিন্নধারার হয়ে থাকে। একটু সচেতনতা, একটু মনোযোগ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের দিতে পারে স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন। প্রত্যেক স্বাভাবিক শিশু যেভাবে জীবন যাপন করছে, তাদের সমাজ যে দৃষ্টিতে দেখছে, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের যদি আরেকটু বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়, তাহলে এই শিশুরাও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন অটিজম সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা, তাদের কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সামাজিক জীবনের সব পর্যায়ে তাদের যথাযথ মূল্যায়ন। তাহলে এই প্রতিভাধর শিশুদের শুধু বেঁচে থাকাই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হবে না। দেশের সমৃদ্ধির পথে একদিন অংশীদারও হবে তারা। এ জন্য প্রয়োজন শিশুটির নিবিড় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, মা-বাবার সচেতনতা ও যত্ন এবং সমাজের মানুষের একান্ত সহযোগিতা। এবারের ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের মূল প্রতিপাদ্যেও একই বিষয়ের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। এবারের প্রতিপাদ্য, </span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">‘</span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন : শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা</span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">’</span></span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">।</span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">বিদ্যালয় হলো যেকোনো শিশুর জ্ঞান, মনোভাব, দক্ষতা এবং অভ্যাস গঠন ও সচেতনতা বৃদ্ধির অন্যতম ক্ষেত্র। এটি এমন এক স্থান, যেখানে শিশু প্রতি মুহূর্তে শিখতে পারে দেখে, শুনে, পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ও অনুধাবন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। সাধারণত স্বাভাবিক শিশুরা, যাদের কোনো ধরনের সমস্যা নেই, সেই শিশুরা এসবের মাধ্যমে প্রচলিত বিদ্যালয় বা সাধারণ বিদ্যালয় থেকে শিখতে পারে। কিন্তু বিশেষ শিশু, যারা অস্থির, অল্প মনোযোগী, অনুভূতি দিয়ে বুঝতে সমস্যা, মনোভাব প্রকাশ করতে পারে না, সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, আচরণগত সমস্যা আছে, তারা এসব বিদ্যালয় থেকে কতটুকু শিখতে পারে, তা আজও প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে সাধারণ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অটিস্টিকসহ এনডিডি (অটিজম, বুদ্ধি, সিপি ও ডাউন্স) শিশুদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয় রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক দেশে অটিস্টিকসহ এনডিডি ও নন-এনডিডি বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদনের সংখ্যা এক হাজার সাত শর বেশি। এর সঙ্গে ৪৫ হাজারের অধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। কিন্তু অটিস্টিকসহ এনডিডি শিশুদের প্রতিভা বিকাশে বিশেষ বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি ও সরকারি অর্থায়নে পরিচালনার নির্দেশনা ১৪ বছরেও আসেনি। যারা অটিস্টিক শিশু নিয়ে বছরের পর বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাচ্ছেন, তাহলে তাঁদের উপায় কী? </span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">বিশ্বজুড়েই দুই ধরনের বিদ্যালয় রয়েছে। সাধারণ বিদ্যালয় ও বিশেষ বিদ্যালয়। কেউ কেউ মনে করে, অটিস্টিকসহ বিশেষ শিশুরা যদি স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে যায়, তাহলে অন্য শিশুদের দেখে, শুনে ও নিজেকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শিখতে পারবে। কিন্তু এ জন্য বিশেষ শিশুটি কতটা উপযুক্ত, তা ভাবা দরকার। স্বাভাবিক বিদ্যালয়ে বিশেষ শিশুর প্রয়োজনীয় শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল, ফিজিওথেরাপি কার্যক্রম, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি কার্যক্রম, সাইকো-সামাজিক কার্যক্রম, আচরণ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত, বিশেষ শিশু বান্ধব পরিবেশ, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম এবং শিখন মূল্যায়ন যথাযথভাবে না থাকা এবং একইভাবে না মেনে চলার কারণে তার সমস্যাগুলোর সমাধান হয় না। বরং অনেকাংশে তা আরো জটিল আকার ধারণ করে এবং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিশেষ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে তাদের মনোযোগ, স্থিরতা, অনুভূতি, বুদ্ধিমত্তার কিছুটা বিকাশ ঘটিয়ে অতঃপর সাধারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো যায়, তাহলে অনেক সময় শিশুর প্রয়োজনীয় সব দক্ষতা বিকশিত হয়। </span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সব শিশুই অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং তাদের সমস্যাগুলোও ভিন্ন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষ শিশুর অভিভাবককে একটি কার্যকর বিদ্যালয় খুঁজে নিতে হবে। কারণ সব বিদ্যালয় সব শিশুর উপযোগী সেবা দিতে পারে না। বিশেষ শিশুদের সঠিক পরিবেশে সমভাবে বেড়ে ওঠা এবং প্রতিভা বিকাশে সাধারণ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিশেষ বিদ্যালয়ের কোনো বিকল্প নেই। তাই অভিভাবক, সরকার ও সমাজের সচেতন প্রয়াসে দেশের বিশেষ বিদ্যালয়গুলোর সরকারি স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির মধ্য দিয়ে অটিস্টিকসহ বিশেষ শিশুরা পেতে পারে খানিকটা স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন। এতে অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার স্বীকৃতি, সামাজিক সচেতনতা ও পরিবারে মূল্যায়ন বৃদ্ধি পাবে। </span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রয়োজন উপযুক্ত তথ্য, বই-পুস্তক, গবেষণা এবং এসংক্রান্ত বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, পাঁচ বছর আগের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে এ বিষয়ে তেমন সচেতনতা, স্বীকৃতির উদ্যোগ আর এসব শিশু বা ব্যক্তি, এমনকি যাঁরা তাদের নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের আর তেমনভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা না হলে গ্রামীণ পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতার কাজগুলো করবে কারা? অশিক্ষা আর অসচেতনতা এখনো গ্রামীণ পর্যায়ে অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মাধ্যমে কাজটি করা বেশ সহজ। শিক্ষার্থীরা অটিজম বিষয়ে সংক্ষিপ্ত রচনা লিখতে পারে, অটিজমের নানা দিক নিয়ে দেয়াল পত্রিকা, পোস্টার তৈরি করতে পারে। প্রতিষ্ঠানের বিশেষ বিশেষ স্থানে সেগুলো টাঙানোর ব্যবস্থা করতে পারলে অন্য শিক্ষার্থীরা সেগুলো জানতে পারবে। দেশের পত্রপত্রিকায় দেশি কিংবা বিদেশি অটিজম বিশেষজ্ঞদের অটিজম সচেতনতা বিষয়ক অভিজ্ঞতা ও লেখা নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তহবিল গঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অটিস্টিক পরিবারের কোনো শিক্ষার্থী থাকলে তাকে প্রতিনিধি করে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ; এ ছাড়া অটিজম বিষয়ে স্কুলে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। টি-শার্টে অটিজম বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ লিখে তা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করা যেতে পারে। কিন্তু এই কাজগুলো আর আগের মতো হচ্ছে না। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে আরো গভীর করে ভাবনার সুযোগ রয়েছে। তাহলেই কেবল অটিস্টিক ব্যক্তিরা শুধু বেঁচে থাকা নয়, সমৃদ্ধির পথে যাত্রার প্রয়াস পাবে। </span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><b><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">লেখক : প্রতিবন্ধিতা</span></span></span></span></b><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt"> বিষয়ক গবেষক</span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><span style="letter-spacing:-.05pt">প্রশিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা, মৃত্তিকা প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন</span></span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><a href="mailto:mahbuburrahman77@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline"><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="letter-spacing:-.05pt">mahbuburrahman77@gmail.com</span></span></span></span></a></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"> </p>