<p>আমার বন্ধু আশরাফ সৈনিক হতে চেয়েছিল। আমি ওসব হতে চাইনি, আমি চেয়েছিলাম শিক্ষক হতে, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।</p> <p>সেই শৈশবে মক্তব থেকে ফেরার পথে আমাদের পূর্ব বাড়ির সুলতান মাস্টার দাদাকে দেখতাম রোজ সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে। তাঁর হাতে সিকো ফাইভ ঘড়ি। আমি তাঁকে প্রায়ই সময় জিজ্ঞেস করতাম। তিনি মুচকি হেসে দিয়ে সময় বলে দিতেন। কখনো বা মজা করে বলতেন, ‘তোর কয়টার দরকার?’</p> <p>বেশির ভাগ লোক তাঁকে সালাম দিত। দোকানের অনেকেই চেয়ার ছেড়ে দিয়ে বলত, ‘মাস্টার সাবরে চা দেও; একটা লোফও দিয়ো।’</p> <p>স্কুলে তিনি আমাদের বাংলা পড়াতেন। ‘এই যে নদী নদীর জোয়ার নৌকা সারে সারে।’ কিংবা ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।’</p> <p>তাঁর একটা লম্বা বেত ছিল। সেই বেত দিয়ে তিনি মাঝেমধ্যে প্রহার করতেন না যে তা নয়। মেম্বারের ছেলে হলেও নিস্তার নেই! সে এক বিরাট ক্ষমতা বটে!</p> <p>আমি তাই ‘মাস্টার সাব’ হতে চেয়েছিলাম, প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার।</p> <p>কাকতালীয়ভাবে আমার জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছিলাম প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদের জন্য। বহু নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলাম জেলা সদর মাইজদীতে।</p> <p>বন্ধুরা বলল, তোর চাকরি হবে না।</p> <p>আমি বললাম, কেন?</p> <p>বন্ধুরা বলল, তোর সার্টিফিকেট দেখে তাঁরা খেপে যাবেন। বলবেন, আমাদের সঙ্গে মসকরা করতে আসছেন?</p> <p>আমার ভাগ্য ভালো। তাঁরা ‘খেপে’ যাননি। বোধ করি সার্টিফিকেটও দেখেননি। খালি সহজ একখান প্রশ্ন জানতে চাইলেন, আপনাদের এমপি মহোদয়ের নাম কী?</p> <p>বিদ্যুদ্গতিতে উত্তর বলে দিলাম।</p> <p>মনে হলো তাঁরা খুশি হলেন, কিন্তু চাকরি হলো না!</p> <p>যা হোক, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে প্রায় চার বছর আগে আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত হয়েছি, যদিও খাটাখাটুনি কিঞ্চিৎ বেশি, তবে মজুরি মন্দ না। বলতে পারেন, দারা-পুত্র-পরিবার নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।</p> <p>কিন্তু স্বপ্নভঙ্গের সেই পুরনো করুণ স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে নতুন করে। পোস্টম্যান উপলালদা আমার ফোনে শক্ত ঝাড়ি দিয়ে বললেন, ‘অই মিয়া, আফনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার লইয়া ঘুরতাছি; জলদি দেখা করেন। আর শোনেন, বকশিশ লইয়া আইয়েন কিন্তু...।’</p> <p>বললাম, বিষয় কী, দাদা?</p> <p>উপলালদা বললেন, ‘কাম অইয়া গেছে, বাই। চাকরি! চাকরি! সরকারি চাকরি!’</p> <p>বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধানপূর্বক জানতে পারলাম, প্রায় চার-পাঁচ বছর আগের সেই প্রাইমারি স্কুলের চাকরিখানা অবশেষে বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি!</p> <p>ঢাকা থেকে উপলালদাকে ফোন করে বললাম, এই চাকরিতে আমার কাজ নেই, আমি জয়েন করব না।</p> <p>উপলালদা বিশ্বাস করতে পারলেন না। ভাবলেন, আমি মজা করছি।</p> <p>কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘ক্যা?’</p> <p>বললাম, আমি তো একটা বেসরকারি চাকরি করছি।</p> <p>তিনি ধমক দিয়ে বললেন, ‘আরে রাখেন আফনের বেসরকারি চাকরি। এক সপ্তার মধ্যে আইসা যোগাযোগ করেন।’</p> <p><strong>ওমর ফারুক</strong></p> <p>হীরাঝিল, নারায়ণগঞ্জ</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>