<p style="text-align: justify;">আমাদের দৈনন্দিন কাজে যেসব পণ্য ব্যবহার করা হয় তার সর্বত্রই ছেয়ে আছে প্লাস্টিক। প্রতিদিন যে টুথপেস্টে দাঁত মাজছে মানুষ তাতেও প্লাস্টিক, শ্যাম্পু-সাবানের মধ্যেও রয়েছে অতিসূক্ষ্ম প্লাস্টিকের বল। মাটি, পানি বা বাতাসের সঙ্গে সহজেই এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক মিশে যাচ্ছে। বৃষ্টি, বন্যা, স্রোত বিভিন্ন উপায়ে এগুলো পুকুর, নদী ও সমুদ্র্রে গিয়ে জমা হচ্ছে। এতে উষ্ণতা বাড়ছে আর পানিতে আশঙ্কাজনক হারে কমছে অক্সিজেনের পরিমাণ। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের বাস্তুসংস্থান। ফলে ধ্বংসের মুখে বহু প্রজাতি। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।</p> <p style="text-align: justify;">সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিল্প এলাকা গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ ও টঙ্গীর যত্রতত্র ময়লার স্তূপ। বিশেষ করে পুকুর, রাস্তার পাড়, জলাশয়, খাল, নদী, বিল- এসব জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ফেলা হচ্ছে ময়লা ও আবর্জনা। এসব আবর্জনা ও ময়লার সাথে মিশে আছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। স্তূপগুলোতে দেখা যায়, অসংখ্য ছোট ছোট প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিন রয়েছে। বিশেষ করে জনবহুল ও ঘনবসতি এলাকায় ময়লার স্তূপ তৈরি করা হচ্ছে। পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলার কথা থাকলেও অনেকেই সেখানে ময়লা ফেলছেন না। বাড়ির আশপাশে ডোবা-নালা, জলাশয়, রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ফলে পরিবেশদূষণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">জানা যায়, টঙ্গী শিল্প এলাকা হওয়ায় অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পাইপ দিয়ে বা খাল, বিল ও  নালার মাধ্যমে নদীতে পড়ছে। কালো রঙের বিষাক্ত এসব দূষিত পানি তুরাগ নদে পড়ে তুরাগের পানিকে কালচে রঙের তৈরি করে ফেলছে। নদীর তীরে আবর্জনা ফেলে রাখার ফলে বৃষ্টিতে নরম হয়ে ময়লা আবর্জনা তুরাগের পানিতে পড়ছে। এতে ময়লার সাথে মিশে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক সহজেই নদীতে পড়তে পারছে। ফলে দূষিত হচ্ছে পানি, পরিবেশ বাতাস ও জনস্বাস্থ্য।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া টঙ্গীর অসংখ্য জলাশয় ও পুকুর সংস্কার না হওয়ায় ময়লা আবর্জনায় ভরে গিয়ে পুকুর নালায় জমে থাকা পানির রঙ কালো হয়ে গেছে। এই সকল জলাশয়ের বিষাক্ত পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ভাসতে ও মশা-মাছির উপস্থিতি দেখা গেছে।</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করা জানা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের তিন শিক্ষক সম্প্রতি একটি গবেষণা করেন। তাতে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের সব কয়টি ভূগর্ভস্থ পানির উৎসেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাাস্টিকের উপস্থিতি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিলেছে টঙ্গী খাল ও বালু নদে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের ঝুঁকি কমাতে পরিবেশসম্মত উপায়ে এর রিসাইকেল নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহতা দিন দিনই বাড়বে। টঙ্গীর পাশাপাশি শতিলক্ষার পাড়ে কালিগঞ্জ, ও গাজীপুর সদরের বিভিন্ন নদনদী খাল বিল ও জলাশয়ের তীরে  ও জনবহুল জায়গায় যথতত্র অসংখ্য প্লাস্টিক পড়ে আছে।</p> <p style="text-align: justify;">গবেষণার তথ্যমতে, সাংহাই নদীর তলদেশে জমাকৃত প্রতি কেজি পলিতে মাইক্রোপ্লাাস্টিকের পরিমাণ ৮০২টি এবং ইয়াংঝাং নদীর পলিতে ২৮৫ পিস। ধানমন্ডি লেকের প্রতি কেজি পলিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে ৩০ হাজার পিস, টঙ্গী খালে ৬৫ হাজার এবং ২০ হাজার পিস বালু নদে। তবে বুড়িগঙ্গা নদী, গুলশান লেক ও টঙ্গী খালের ভাসমান পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি আরো বেশি মিলেছে।</p> <p style="text-align: justify;">দেশের আইনে প্লাস্টিক ব্যবহারের ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে না পারা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘সরকার মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে ভাবছেই না। বিশ্বের অনেক দেশ পলিথিন বন্ধ করলেও আমরা বন্ধ করতে পারিনি। অথচ আমাদের হাতে প্রচুর বিকল্প ছিল। সরকারের এখন উচিত হবে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা এবং নদীর পাড়ের এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকপণ্য বহন নিষেধ করা।</p> <p style="text-align: justify;">গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেছেন, একটি সুন্দর ও আধুনিক নগর করার কাজ চলছে। সব বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই আমাদের  পরিকল্পনা। গাজীপুর সিটিকরপোরেশনকে সীমানা দিয়ে সুরক্ষিত করা হচ্ছে। তারপর পরিবেশগতভাবে সব সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। আশা করি এ সমস্যারও সমাধান হবে তাড়াতাড়ি।</p>