<p style="text-align: justify;">জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে যখন যৌথ অভিযান চলছে ঠিক তখনই এক শ্রেণির বনদস্যুরা রাতে আঁধারে আলো জ্বালিয়ে ছয় কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি জবরদখল করছে। এই সংবাদ পেয়ে বন বিভাগ ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন যৌথভাবে আজ জবরদখলে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা গুড়িয়ে দিচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দখলের বিষয়টি গতকাল দুপুরে জেনেছি। জমিটি বন বিভাগের গেজেট নোটিফিকেশনভুক্ত। আজ শনিবারের মধ্যে নির্মাণ করা বেষ্টনী ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে আর. এস. রেকর্ড সংশোধনী মামলা করব।’</p> <p style="text-align: justify;">শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিন গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বিধাই গ্রামে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট। প্রায় ২০০ ফুট ব্যবধানে দুই স্থানে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করে তড়িঘড়ি করে চলে বেষ্টনী নির্মাণকাজ। এক পাশে বড় বড় গর্ত করে ঢালাই দিয়ে লোহার অ্যাঙ্গেলের খুঁটি পোঁতা হচ্ছে। আরেক পাশে পোঁতা খুঁটিতে অ্যাঙ্গেল দিয়ে কাঠামো তৈরি করছে ঝালাই (ওয়েল্ডিং) মিস্ত্রিরা। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বিদাই আবদার এলাকায় গতকাল শুক্রবার চিত্রটি চোখে পড়ে।</p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জমিটি বন বিভাগের গেজেট নোটিফিকেশনভুক্ত। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে রাত-দিন পাহারা বসিয়ে টিন দিয়ে নির্বিঘ্ণে সীমানা বেষ্টনী করে ওই এলাকার আব্দুল মতিনসহ তাঁর তিন ভাতিজা দখল করছেন জমিটি। জমির পরিমাণ ১০ বিঘা। এর বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা।</p> <p style="text-align: justify;">শ্রীপুর ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বন বিভাগের কাউকেই ‘ম্যানেজ’ সম্ভব নয় দাবি করে গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জমিটি বন বিভাগের গেজেট নোটিফিকেশনভুক্ত। অবৈধ দখলের বিষয়টি জেনেছি, আজ শনিবারের মধ্যে নির্মাণ করা বেষ্টনী ভেঙে দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, আগামী রবি-সোমবারের মধ্যে আমরা আদালতে আর. এস. সংশোধন মামলা করব।’</p> <p style="text-align: justify;">তবে জমিটির মালিকানা দাবি করে আব্দুল মতিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সি. এস. এস. এ. ও আর. এস রেকর্ডমূলে জমিটির মালিক তাঁরা। তবে জমিটি গেজেট নোটিফিকেশনভুক্ত হওয়ার কারণে সীমানা নির্ধারণের (ডিমারকেশন) জন্য গত ২২ সালে তাঁরা আবেদন (নম্বর ৯৪/২২) করেন। গত প্রায় দুই মাস আগে ঢাকা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এই জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।’ তবে কী প্রতিবেদন দিয়েছেন তা জানাতে পারেননি তাঁরা।</p> <p style="text-align: justify;">গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, লাল পুকুর পার-বিদাই প্রাথমিক বিদ্যালয় পাকা সড়ক ঘেঁষা জমির পূর্ব পাশে এরই মধ্যে সীমানা বেষ্টনীর কাজ শেষ। পেছনে বড় বড় গর্ত করে ঢালাই দিয়ে অ্যাঙ্গেলের খুঁটি পোঁতার কাজও শেষ। সেখানে ১০ থেকে ১২ জন ঝালাই (ওয়েল্ডিং) মিস্ত্রি কাঠামো তৈরি করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">ঝালাই মিস্ত্রি সোলায়মান জানান, গত তিন-দিন ধরে ১০ থেকে ১২ জন মিস্ত্রি রাত-দিন কাজ করছেন। কাজ শেষ করতে তাঁদের আরো ১০ থেকে ১২ দিন লাগতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে পশ্চিম পাশে প্রায় ১৩০ ফুট জমিজুড়ে গর্ত। সেখানে ঢালাই দিয়ে অ্যাঙ্গেল পোঁতার কাজ চলছে। নির্মাণশ্রমিক নজরুল ইসলাম জানান, এইমুহূর্তে তাঁরা ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। গতকাল অন্য শ্রমিক কাজ করেছেন। তিনি জানান, দ্রুত কাজ করতে হচ্ছে। তাই নির্মাণশ্রমিকদের কয়েকটি দল পালা করে কাজ করছেন তাঁরা। তিনি আরো জানান, তাঁদের বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। রাতেও কাজ করতে হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">তবে কী কারণে রাতেও কাজ করতে হচ্ছে তা তাঁর জানা নেই বলে জানান।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে আব্দুল মতিনের চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলাম ও আতাউর রহমান জানান, তিনটি রেকর্ড থাকলেও জমিটি বন বিভাগের গেজেট নোটিফিকেশনভুক্ত হওয়ার কারণে তাঁরা ওই জমি বিক্রি করতে পারেন না। তাঁদের জমি ভাগ বাটোয়ারাও হয়নি। কিন্তু ১০ বিঘা জমি তালতলী এলাকার রুহুল নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন আব্দুল মতিনসহ তাঁর তিন ভাতিজা। ওই ব্যক্তিকে জমি বুঝিয়ে দিতেই তড়িঘড়ি সীমানা বেষ্টনী নির্মাণ করছেন তাঁরা (আব্দুল মতিনসহ ভাতিজারা)।</p> <p style="text-align: justify;">শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, রাত-দিন পাহারা বসিয়ে ওই জমির সীমানা বেষ্টনী দিচ্ছেন তাঁরা।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে ওই কাজ চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘গত বুধবার থেকে রাত-দিন সীমানা বেষ্টনীর নির্মাণকাজ চললেও গতকাল রাত পর্যন্ত বন বিভাগের কোনো কর্মী সেখানে যায়নি। বরং নির্মাণকাজে জড়িত শ্রমিকদের অভয় দিয়ে আব্দুল মতিনসহ তাঁর ভাতিজারা বলে দিয়েছেন, ‘বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করা আছে, আপনারা নির্ভয়ে কাজ করেন।’</p> <p style="text-align: justify;">এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে কাওরাইদ ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা বনি শাহাদাতকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফোন দেওয়া হলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলে আছি। পরে ফোন দিচ্ছি।’ এরপর ফোন দেওয়া হলেও সাড়া দেননি তিনি।</p>