<p>কেরানীগঞ্জে পুলিশ কর্তৃক দফায় দফায় উদ্ধার হওয়া মানব দেহের অংশ বিশেষের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত ব্যাক্তির নাম মোঃ মফিজুর রহমান মফিজ (৫৫)। সে ঢাকা জেলার সাভার থানার ভাকুর্তা ইউনিয়নের কাউচর এলাকার বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত মতিউর রহমান। সে দুই সন্তানের জনক। নিহত ব্যাক্তি পেশায় একজন স্বর্ণকার পাশাপাশি কথিত কবিরাজ। আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা জেলা দক্ষিণ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাইদুর রহমান সাইদ। </p> <p>এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে তারানগর ইউনিয়নের বেউতা এলাকার মালয়শিয়া প্রবাসির স্ত্রী মাকসুদা আক্তার লাকি (৩২), দেবর মোঃ সালাহউদ্দিন (৩৫) ও দুর সম্পর্কের আরেক দেবর মোঃ নজরুল ইসলামকে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তারা তিনজন কবিরাজ হত্যার কথা স্বীকার করেছে। </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, গত ২ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন তারানগর ইউনিয়নের গণকবরস্থানের সামনের একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাতনামা একটি মানব দেহের হাত-পা ও মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর হরা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ নাজমুল হাসান কয়েকটি টিম নিয়ে এ মামলা কাজ শুরু  করেন। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশের দল আশপাশের থানাগুলোতে মধ্য বয়সি লোক নিখোঁজ হওয়া জিডির সন্ধান করেন। পরে তারা জানতে পারে সাভার থানায় এ রকম একটি জিডি করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ তখন ওই জিডির বাদীর নাম-ঠিকানা নিয়ে ভাকুর্তা ইউনিয়নের কাউচর এলাকায় গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে নিখোঁজ ব্যাক্তির সম্পর্কে ধারণা নেন এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগর ইউনিয়নের নিমতলী ব্রিজের নীচ থেকে একটি মস্তকবিহীন দেহ উদ্ধার করে। মস্তকটি ওই নিখোঁজ হওয়া জিডির পরিবারের লোকজনকে দেখালে তারা মস্তকটি নিখোঁজ মফিজের বলে জানান। গোয়েন্দা পুলিশ তখন নিখোঁজ মফিজের মোবাইল নাম্বার নিয়ে বর্তমান ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রেপ্তার হওয়ার মাকসুদা আক্তার লাকিকে শনাক্ত করে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক মফিজ হত্যার সাথে জড়িত তার আরো দুই দেবরকে গ্রেপ্তার করা হয়।</p> <p>গ্রেপ্তার হওয়া লাকির বরাদ দিয়ে সাইদুর রহমান বলেন, গত ১০ মাস আগে তাদের পরিচয় হয়। ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মোঃ জাকির হোসেন নামে লাকির একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তারা স্বামী মালয়শিয়ায় থাকে। সে আরো একটি সন্তানের জন্য ডাক্তার-কবিরাজ অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোথায় কোনো ফল পান নাই। পরে স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে পারেন কবিরাজ মফিজের কথা। তখন সে তার কাছে গেলে সে তাকে এক বছরের চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলে। এক পর্যায়ে লাকি রাজি হয়। এরপর মফিজ লাকির স্বামী বিদেশে থাকার কারণে তার কাছে আসতে চেষ্টা করে। প্রথমে লাকি রাজি না থাকলেও মফিজ জোড় পূর্বক তার সাথে মেলামেশা করত। এভাবে তাদের সাথে প্রায় ১০ মাস যাবত দৈহিক মেলামেশা হয়। এক পর্যায়ে এসে লাকি মফিজের এ কাজ থেকে রেহাই চায়। তখন মফিজ লাকির ছেলেকে হত্যার হুমকিসহ বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এক পর্যায়ে লাকি বাধ্য হয়ে তার দূর সম্পর্কে দেবর অটোরিকশা সিএনজিচালক নজরুল ইসলাম নজুর সাহায্য নেন। নজু পরে বিষয়টি লাকির আপন দেবর সালাহউদ্দিনকে জানান। তখন তারা তিনজন মিলে ভাবির ইজ্জত রক্ষার্থে মফিজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর গত থার্টিফাস্ট নাইটে মফিজ লাকির কেরানীগঞ্জের বেউতা এলাকার বাড়িতে আসার জন্য ফোন করলে লাকি মফিজকে আসতে বলে ছেলে জাকিরকে নানীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে ঘটনার দিন লাকি প্রথমে মফিজকে চায়ের সাথে ৪/৫টি ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ান। পরে আবার রাতে খাবারের সাথে আরো কয়েকটি ঘুমের ট্যাবলেট দেন। এরপর মফিজের ঘুম আসলে লাকি তার দুই দেবর সালাহউদ্দিন ও নজুকে খবর দেয়। তারা এসে প্রথমে লাকির ওড়না দিয়ে মফিজকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাকির পরামর্শে হাত-পা দেহ ও মস্তক আলাদা আলাদা করে ১০টি টুকরো করে তিনটি বস্তায় ভরেন। ওই রাতেই নজরুলের অটোরিকশা সিএনজিযোগে তারা বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে মফিজের মাথাটিকে নিলতলী ব্রিজের নীচে এবং স্থানীয় আক্তার হোসেন এর মাগুর মাছের খামারে বাকী অংশগুলো ফেলে দিয়ে যার যার বাড়ি চলে আসে। </p> <p>তিনি আরো বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছুরি, একটি শাড়ি কাপড় ও অটোরিকশা সিএনজিটিকে জব্দ করেছে। </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল এএসপি রামানন্দ সরকার, ওসি ডিবি মোঃ শাহজামান, ওসি কেরানীগঞ্জ মডেল শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের, ডিবি ইন্সপেক্টর নাজমুল হাসান, এস আই মোস্তাফিজুর রহমান, এস আই কাজি এনায়েত হোসেন, এস আই সালাহউদ্দিন ও এস আই বিপুল চন্দ্র দাস প্রমুখ।</p>