<article> <p>বাংলাদেশের ১৩ টি সীমান্তবর্তী জেলার ৭৭টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রয়েছে। ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। কক্সবাজার এবং রাঙামাটিতেও ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশ সাতটি স্বীকৃত ম্যালেরিয়া বাহক রয়েছে, যার মধ্যে অ্যানোফিলিস বাইমাই, অ্যানোফিলিস ফিলিপিনেনসিস, অ্যানোফিলিস সানডাইকাস এবং অ্যানোফিলিস মিনিমাস প্রধান বাহক হিসেবে চিহ্নিত।</p> <p>বিভিন্ন গবেষকের তথ্য মতে অ্যানোফিলিস অ্যাকোনিটাস, অ্যানোফিলিস অ্যানুলারিস এবং অ্যানোফিলিস ভেগাস  প্রাদুর্ভাবের সময় ম্যালেরিয়া ছড়ায়। যদিও ম্যালেরিয়া গ্রামীণ ও পাহাড়ি এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তবে এটির ঐতিহাসিক উপস্থিতি এবং শহুরে এলাকায় সম্ভাব্য পুনরুত্থান নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। যদিও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত পরিবর্তন ঐতিহাসিকভাবে শহুরে ম্যালেরিয়া কমাতে পারে, তবে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ার কিছু দেশে শহুরে ম্যালেরিয়া রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বহু শহরে ম্যালেরিয়া বিদ্যমান। বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী শহর কলকাতায় ম্যালেরিয়া বাহক এবং রোগী রয়েছে।</p> <p>জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগারের গবেষণায় আমরা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশ এলাকায় ম্যালেরিয়ার বাহকের উপস্থিতি পেয়েছি। ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় ম্যালেরিয়া বাহকের উপস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আমাদের গবেষণাদল ঢাকাজুড়ে ছয়টি সেন্টিনেল সাইটে মশার প্রজাতির ও ঘনত্ব  নিয়ে মাঠ পর্যায়ে  গবেষণা শুরু করেছে। ছয়টি জায়গা হলো—উত্তরা, দক্ষিণখান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, সাভার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সব ধরনের মশা প্রাপ্তির জন্য আমরা লার্ভা স্যাম্পলিংয়ের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্ক মশা ধরতে থিংক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি ফাঁদগুলো ব্যবহার করছি।</p> <p>প্রাপ্তবয়স্ক মশা ধরার ফাঁদগুলো কার্যকরভাবে রাতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মশা ধরতে সক্ষম। ফাঁদে আটকে পড়া মশাগুলোকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কীটতত্ত্ব গবেষণাগারে নিয়ে এসে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে প্রজাতি শনাক্ত ও এর ঘনত্ব বিশ্লেষণ করা হয়। ফাঁদে যে মশাগুলো ধরা পড়ে তার মধ্যে কিউলেক্সকে সবচেয়ে বেশি, এরপর এডিস, আর্মিজেরিস, ম্যানসোনিয়া এবং অ্যানোফিলিস। এখানে উল্লেখযোগ্য যে আমরা ঢাকায় ছয়টি অ্যানোফিলিস মশার প্রজাতি শনাক্ত করেছি। প্রজাতিগুলো হলো অ্যানোফিলিস ভেগাস, সাবপিক্টাস, আমব্রোসাস, বারবিরোস্ট্রিস, অ্যানুলারিস, এবং মিনিমাস।</p> <p>ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় আমাদের গবেষণায় ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক অ্যানোফিলিস মিনিমাস (An. minimus) এবং সম্ভাব্য মহামারি বাহক অ্যানোফিলিস অ্যানুলারিস (An. annularis) এবং অ্যানোফিলিস ভেগাস  (An. vagus) পেয়েছি। ঢাকায় যেহেতু ম্যালেরিয়া বাহকের উপস্থিতি রয়েছে, তাই যেকোনো সময় তারা যদি প্লাজমোডিয়াম প্রাপ্ত হয় তাহলে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে। যাতায়াতব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলাগুলো থেকে ঢাকা শহরের যোগাযোগ এবং মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলা থেকে রোগী ঢাকায় এলে তার মাধ্যমে শহরে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ঘটার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। </p> </article> <article> <p>আমাদের পার্শ্ববর্তী শহর কলকাতায় যেহেতু শহুরে ম্যালেরিয়া আছে, তাই ঢাকা শহরে সম্ভাব্য ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব পূর্বাভাস এবং প্রতিরোধ করার জন্য ঢাকার মশার বৈচিত্র্য, প্রজাতির এবং ঘনত্ব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ যেন না হতে পারে সে বিষয়ে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।</p> <p><b>লেখক : কীটতত্ত্ববিদ</b>, গবেষক ও অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p>professorkabirul@gmail.com</p> </article>