<article> <p>শিরোনামে করা প্রশ্নের উত্তর দুই দফা দিয়েছে মোহামেডান। ১৯ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচ অসমাপ্ত রেখে এক দফা আম্পায়ারদের ‘বিচার’, নিজ দলের একজন খেলোয়াড়ের কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং অবশ্যই ম্যাচটির পুনরায়োজনের দাবি জানিয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। এর এক দিন পর, গত পরশু ক্লাব প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে যে এর অন্যথা হলে ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির অধীনে ভবিষ্যতে আর কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেবে না মোহামেডান। লিগ কমিটির ওপর তাদের আর ভরসা নেই।</p> <p>অগত্যা মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে নিশ্চয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান এই ‘কাণ্ডে’ হস্তক্ষেপ করবেন। খেলাধুলার আইনে মোহামেডানের প্রতিটি দাবি অসার। কারণ, ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি আইনই শেষ কথা হয়ে থাকে, তবে প্রতিপক্ষ আবাহনীকে জয়ী ঘোষণার পাশাপাশি খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর দায়ে মোহামেডানের আরো বড় শাস্তি হওয়ার কথা।</p> </article> <article> <p>কিন্তু এটা বাংলাদেশ। এখানে আইনের অনুপুঙ্খ ব্যবহারের চল নেই। ‘হেভিওয়েট’ ক্লাবের জন্য নিয়ম শিথিল হয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে যেমন একবার অর্ধেক ম্যাচ খেলে বেরিয়ে গেলেও কিচ্ছু হয়নি আবাহনীর।</p> </article> <article> <p>সেই ম্যাচ হারতে বসেছিল আবাহনী। কিন্তু এবারের হকি ম্যাচটি জিতলেই শিরোপা জয় নিশ্চিত। ৩-২ গোলে তখন এগিয়েও মোহামেডান। এরপর একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে দুই দলের মারপিটের জেরে আম্পায়ার তিনজনকে মাঠ থেকে বহিষ্কার করেন। মোহামেডানের দাবি, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আম্পায়ার পক্ষপাত করেছেন।</p> </article> <p>এই দাবির পক্ষে ক্লাবটির সরবরাহকৃত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে মোহামেডানের এক খেলোয়াড় গুরুতর আহত হওয়ার পরও আম্পায়ার আবাহনীর মাত্র একজনকে বহিষ্কার করেছেন। আপাতদৃষ্টিতে মানবিক এই দাবিও যুক্তিনির্ভর নয়। রক্তপাতের পরিমাণ শাস্তির মানদণ্ড নয়। বরং ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন বলে যে দাবি মোহামেডান করেছে, তাতে কিছু সারবেত্তা আছে। যদিও ফাউল কিংবা কার্ড প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আম্পায়ারদের এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ম্যাচ কমিশনার কিংবা ডিসিপ্লিনারি কমিটি পরবর্তী সময়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে শাস্তির মেয়াদ কমাতে কিংবা বাড়াতে পারেন বড়জোর।</p> <article> <p>এই সব কিছু আমলে নিয়ে ঘোর সমর্থকরাই বলছেন, এগিয়ে থেকেও মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি জানানোটা হঠকারী সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য মোহামেডান আর আবাহনী ‘লিমিটেড’ হওয়ার পর থেকে দুটি ক্লাবের ঘোর সমর্থকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। কমেছে বলেই হকির শিরোপা ওভাবে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার পরও নির্বিঘ্নে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে পেরেছেন মোহামেডানের কর্মকর্তারা। আশি-নব্বইয়ের দশকে এভাবে ট্রফি ফেলে মাঠ থেকে ঘরে ফেরার সময় নিশ্চিতভাবেই পথে পথে বাধাগ্রস্ত হতেন মোহামেডানের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা।</p> <p>সময় বদলেছে। নামি ক্লাব দুটোর একনিষ্ঠ সমর্থকরা হারানো দিনের সোনালি স্মৃতির চর্চা করেন ফেসবুকে। সেখানেই তেমন কয়েকজন মোহামেডান অন্তপ্রাণের পোস্ট চোখে পড়েছে, সেসব আক্ষেপের শব্দগুচ্ছ। শিরোপা জয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি তাঁদের বিস্মিত ও বেদনার্ত করেছে। সুদিন সেই কবে ছেড়ে গেছে মোহামেডানকে। তবু এ মৌসুমে হকি, ক্রিকেট ও ফুটবলে দলটির নৈপুণ্য দেখে আশায় বুক বাঁধতে দেখেছিলাম সমর্থকদের। ক্রীড়াঙ্গনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুবাতাস আঁচ করা যাচ্ছিল। কিন্তু কিসের কী। ঘুণে ধরা মানসিকতা হকির সম্ভাব্য শিরোপা জিততে দেয়নি মোহামেডানকে। সত্যি বলতে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে এগিয়ে থাকা মোহামেডান সেদিন খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল! ক্রীড়া ইতিহাসে এমন ‘নজির’ আর নেই।</p> <p>শুরুতেই ম্যাচ ফেলে উঠে আসা মোহামেডানের ব্যাখ্যাগুলো অযৌক্তিক জানিয়ে দিচ্ছে খেলার আইন। মাঠ ছেড়ে আসার পর পক্ষপাতের অভিযোগ, প্রতিবাদ—এসব অর্থহীন। আরো হাস্যকর পরিস্থিতি সামাল দিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ! বিশ্বের আর কোনো দেশে কোনো ক্লাব এমন অনুরোধ করেছে বলে গুগল সার্চ ইঞ্জিনও জানাতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের হালচাল দেখলে বোঝা যায়, নাজমুল হাসান বেশ বিপদে আছেন। দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন তিনি। সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ড মিলিয়ে নাজমুল হাসানের সূচি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সূচির চেয়েও ব্যস্ত। সেখানে তিনি কি হকি লিগকে ঘিরে মোহামেডানের অনুরোধ রক্ষা করার সময় পাবেন?</p> <p>তবে নাজমুল হাসান সময় বের করতে পারলে তাঁর প্রতি বিশেষ অনুরোধ রইল, দয়া করে আপনি মোহামেডান কর্মকর্তাদের ডেকে বলে দিন, এভাবে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। পক্ষপাত নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি খেলা শেষেও করা যায়। আর আজকাল ইউটিউবে খেলার ফুটেজ সবাই দেখতে পায়। পক্ষপাত হয়ে থাকলে সমব্যথীরাও যুক্ত হবেন সমর্থক দলে। ক্লাবের করপোরেট কালচার সম্ভবত অতশত ভাবে না আজকাল!</p> </article>