<p>এক বছর আগেও বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সন্দ্বীপ যুক্ত হবে-এটা ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। প্রচণ্ড আশাবাদী মানুষের মনেও এটা নিয়ে ছিল ঘোরতর সংশয়। তবে সেই হতাশাবাদীদের জন্য নতুন তথ্য হল সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুন মাস থেকে সন্দ্বীপের এনাম নাহার এলাকা থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সংযোগ শুরু হবে। সাগরের তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল লাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে সাগরের তলদেশে ৩৩ কেভি ক্ষমতার ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সাবমেরিন ক্যাবল লাইন বসে গেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একই ক্ষমতার আরেকটি বিকল্প লাইনও বসে যাবে বলে জানালেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে আনুষঙ্গিক কাজ শেষে তবে পুরো সন্দ্বীপ আলোকিত হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।</p> <p>বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হলে পুরো সন্দ্বীপের আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। প্রবাসী আয়ের কারণে আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও চারিদিকে সমুদ্রবেষ্টিত সন্দ্বীপে যাতায়াত প্রতিকূলতা এবং বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় জাতীয় উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল এতদিন। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে জীবনমান এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন এখানকার জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষ।</p> <p>জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হলে সন্দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি বলেন, ‘শুধু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে নানা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যসহ অনেক ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। বিদ্যুৎ আসার পর এখানে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠবে এবং সন্দ্বীপকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’</p> <p>একই কথা বললেন সন্দ্বীপ পৌরসভার মেয়র জাফর উল্লাহ টিটু। এ প্রসঙ্গে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যেকোনো এলাকা উন্নয়নের পূর্বশর্তই হল বিদ্যুত্সুবিধা নিশ্চিত করা। যেটা থেকে দ্বীপবাসী এতদিন বঞ্চিত ছিল। তবে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পেলে ছোট ছোট কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানার পাশাপাশি এখানে পর্যটনশিল্প বিকাশের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি থাকতে হবে।’</p> <p>পিডিবি সূত্র জানায়, ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়াম তঞঞ-ঝইঝঝ-ঈঈঈঊ। সাবমেরিন ক্যাবলসহ সাব স্টেশনগুলোর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে চীন থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলে এসে কাজ করছে তিনটি জাহাজ। সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপের বাউরিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার জুড়ে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে টানা হচ্ছে সাবমেরিন ক্যাবল।</p> <p>চট্টগ্রাম জোনের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গৃহীত এই প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয় গ্রিডের সাথে সন্দ্বীপের বিদ্যুৎ সংযোগের কাজটি মূলত চারটি ভাগে হচ্ছে। সবগুলো কাজই একই সাথে চলছে। সন্দ্বীপে এনাম নাহার এলাকায় সাবস্টেশন স্থাপন করা হচ্ছে। একই সাথে পুরো সন্দ্বীপ জুড়ে ৬০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন বসানো হচ্ছে। এজন্য বসানো হবে ১৮০০ খুঁটি। ইতোমধ্যে ৫০০ খুঁটি বসানো হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ইতোমধ্যে পুরো প্রকল্পের ৫০ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে।’</p> <p>সাগরের তলদেশে মাটির ১০ ফুট নিচ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল টানা হচ্ছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন্ত কুমার দেবনাথ জানান। তিনি বলেন, “ক্যাবলগুলো ‘ওয়ানটাইম’, কারণ মাটির তলদেশে এই ক্যাবলে কোনো কারণে ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামত করার সামর্থ্য আমাদের নেই। এই কারণেই একটি বিকল্প লাইন রাখা হয়েছে। তাছাড়া ক্যাবল বসানোর সময়ও নিরাপত্তার বিষয়টিকেই আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।’’</p> <p>সন্দ্বীপের আড়াই হাজার গ্রাহককে লক্ষ্যমাত্রায় এনে আপাতত ৬০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন টানা হলেও তবে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা এটিকে পর্যাপ্ত নয় বলে জানান। সমপ্রতি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সন্দ্বীপের ১০ হাজার গ্রাহকের কথা ভেবে সরবরাহ লাইন আরও ১২০ কিলোমিটার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে ৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। যদিও সন্দ্বীপের ১০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা হবে মাত্র ১০ মেগাওয়াট। বর্তমানে দুটি ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ১ দশমিক ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে সন্দ্বীপবাসী। তবে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেটও সন্দ্বীপবাসীকে উপহার দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।</p> <p>সন্দ্বীপে বর্তমানে দুটি জেনারেটরের মাধ্যমে ১ দশমিক ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় মাত্র ২২০০ আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মাঝে। তাও রেশনিং সিস্টেমে শুধু রাতে ৫/৬ ঘণ্টা করে সরবরাহ করা হয়। এ কারণে সন্দ্বীপে সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে সন্দ্বীপে প্রায় ২০ হাজার পরিবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। যা একক উপজেলা হিসেবে দেশে সর্বোচ্চ।</p>