<p>১১১. স্মরণ করো ওই দিনকে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি উপস্থাপন করতে আসবে এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে, আর তাদের ওপর জুলুম করা হবে না। (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১১)</p> <p><strong>তাফসির :</strong> আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, যারা নির্যাতিত হয়ে হিজরত করে, লড়াই করে ও ধৈর্য ধারণ করে, মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন এবং তাদের ওপর দয়া করেন। আল্লাহর পরিপূর্ণ দয়া ও ক্ষমা কবে পাওয়া যাবে, আলোচ্য আয়াতে সে প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিদান পরকালে পাওয়া যাবে। কিয়ামতের দিন অত্যন্ত ন্যায়পূর্ণভাবে প্রত্যেককে প্রতিদান দেওয়া হবে। সেদিন কারো ওপর জুলুম করা হবে না। পৃথিবীতে মানুষ অনেক সময় ভোগবিলাস ও ইন্দ্রিয় সুখের প্রত্যাশায় নিজের অস্তিত্বই ভুলে যায়। পরকালের জন্য তারা পাথেয় সঞ্চয় করে না। এ ধরনের মানুষ কিয়ামতের দিন শূন্য হাতে আল্লাহর কাছে আসবে। সেদিন নানা অজুহাত পেশ করে তারা আজাব থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে। প্রত্যেকে ‘ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি অর্থাৎ হায়! আমার কী হবে, হায়! আমার কী হবে’ বলতে থাকবে। সেই বিভীষিকাময় দিনে নেক আমল ছাড়া কোনো কিছুই কাজে আসবে না।</p> <p>প্রতিটি ক্রিয়ার যেমন প্রতিক্রিয়া আছে, তেমনি প্রতিটি কাজেরও প্রতিফল কাছে। ভালো কাজের যেমন পুরস্কার আছে, তেমনি মন্দ কাজের শাস্তিও অনিবার্য। এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর বিচার অত্যন্ত ন্যায়সংগত। তিনি কারো ওপর জুলুম করেন না। কারো প্রতিদানে কম-বেশিও করেন না। আলোচ্য আয়াতে এ বিষয়ের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী থাকবে। কেউ অন্যের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের পালনকর্তার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি সেসব বিষয়ে বলে দেবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬৪)</p> <p>আলোচ্য আয়াতে এদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে কিয়ামতের আদালতের আইন-কানুন দুনিয়ার আদালতের মতো নয়। দুনিয়ায় কেউ অপরাধ করলে তার দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানো যায়। কিন্তু আল্লাহর আদালতে এর কোনো সুযোগ নেই। সেখানে একজনের পাপের জন্য অন্যকে দায়ী করা হবে না। দুনিয়ায় যে যেমন কাজ করবে, পরকালে সে তার কাজ অনুযায়ী ফল ভোগ করবে। ভালো কাজ করলে ভালো প্রতিদান পাবে। আর মন্দ কাজ করলে ফলও পাবে অনুরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে, সে তার শাস্তি পাবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া নিজের কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আর নারী-পুরুষের মধ্য থেকে যারাই সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। অণু পরিমাণও তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত :  ১২৩-১২৪)</p> <p>গ্রন্থনা : <strong>মাওলানা কাসেম শরীফ</strong></p>