অর্থনীতিতে ইবনে খালদুনের চিন্তাধারা যেমন ছিল

আসআদ শাহীন
আসআদ শাহীন
শেয়ার
অর্থনীতিতে ইবনে খালদুনের চিন্তাধারা যেমন ছিল

মানব ইতিহাসে ইবনে খালদুনের অনন্য স্থান আছে। তিনি ইতিহাসবিদ ও সমাজতত্ত্ববিদ (Sociologist) ছিলেন। জ্ঞানের অন্য ক্ষেত্রেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান (Sociology)  দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইবনে খালদুনের চিন্তাধারা অত্যন্ত প্রভাবশালী, যা তাঁর দর্শনের বিস্তৃতি এবং তাঁর যুগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে পূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ইবনে খালদুন তাঁর যুগে তেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি, ফলে তাঁর যুগে তাঁর চিন্তাধারা, দর্শন ও কর্মপন্থা সমৃদ্ধি ঘটাতে পারেনি। কিন্তু  যখন আমরা এই আধুনিক বিশ্বে ইবনে খালদুনের চিন্তাধারা, দর্শন ও কর্মপন্থা অনুযায়ী চলি, তখন নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে তিনি অর্থনীতিসহ আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

বিখ্যাত অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ জে জে স্পেংলার  (J.J Spengler) Zuvi eB ‘Economic Thoughts of Islam’-এ তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন যে ইবনে খালদুন নিঃসন্দেহে একজন মহান অর্থনীতিবিদ এবং ইসলামী অর্থনৈতিক চিন্তাধারার সর্বোত্তম প্রবক্তা ছিলেন। (খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৬৮)

অ্যাডাম স্মিথের  (Adam Smith)  বহু আগে ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন’ গ্রন্থে লিখেছেন যে সম্পদের একমাত্র উৎস হলো উৎপাদন।

একটি দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে তার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। (আল মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠা-২৭২)

তিনি ভাগ্যের প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন না এবং দারিদ্র্য দূর করার জন্য উৎপাদনশীল কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেন। এ ছাড়া তিনি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শ্রম বিভাজনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং এ বিষয়ে তিনি ‘মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

যখন একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় মানুষের কার্যক্রম শামিল হবে, তখন এর মজুরি বা লাভ নির্ধারিত হয় তার শ্রমের উৎপাদনশীলতার (মূল্য) ওপর ভিত্তি করে।

উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যত বেশি শ্রম বৃদ্ধি হবে, মজুরি তত বেশি হবে। তবে মজুরিতে সমতা সম্ভব নয়। (আল মুকাদ্দামা, পৃষ্ঠা-২৭৫)

ইবনে খালদুন মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে জোগান ও চাহিদায় বিশ্বাস করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইবনে খালদুন স্বর্ণ ও রৌপ্যকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতেন না, এগুলোকে শুধু ধাতু হিসেবেই বিবেচনা করতেন। তাঁর মতে, সম্পদ শুধু উৎপাদন।

তিনি এই মুদ্রাগুলো বিনিময়ের একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেছেন, যেখানে ক্রয়ক্ষমতা পাওয়া যায়। একটি সমাজ যত বেশি সমৃদ্ধ হয়, সেখানে সেবার বাজার তত বেশি বিকাশ লাভ করে।

ইবনে খালদুন লাভবর্ধককে অর্থনৈতিকের একমাত্র ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেছেন এবং তাঁর সমগ্র অর্থনৈতিক দর্শন এটিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি আয়ের  (Tax)  ন্যূনতম স্তরে বিশ্বাস করেন, তবে উচ্চ করকে লাভবর্ধক এবং উৎপাদনশীলতার ঘাতক হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁর দৃষ্টিতে একটি সুস্থ অর্থনীতি হলো, যেখানে ব্যবসা মুনাফা অর্জন করবে এবং লাভবর্ধক অর্থনৈতিক কার্যক্রম অগ্রগামী করবে।

ইবনে খালদুন অবকাঠামো নির্মাণ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন প্রকল্পকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মনে করেন। তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ধ্বংস করে দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা ও রাষ্ট্রের আলোচনায় তিনি রাষ্ট্রকে সবচেয়ে বড় ক্রেতা মনে করেন এবং বলেন যে সরকার যত বেশি ক্রয় করবে উৎপাদন প্রক্রিয়া তত বৃদ্ধি হবে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তত বাড়বে। তাঁর মতে, সরকার কেনাকাটা বন্ধ করে দিলে অর্থনীতিতে সংকট দেখা দেবে।

রাষ্ট্র সম্পর্কে পশ্চিমা চিন্তাবিদদের মতো ইবনে খালদুনেরও একটি সংশয় আছে, জাতির উত্থান-পতনের আলোচনায় তিনি রাষ্ট্রীয় করকে (Tax)  পতনের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন এবং লিখেছেন যে রাষ্ট্র তার নিজস্ব ব্যয়ের জন্য কর আরোপ করে থাকে। কেননা কর যত বেশি হবে, ব্যয়ও তত বেশি হবে। আর এভাবেই সরকারের মধ্যে বেশি ধন-সম্পদ সংগ্রহ ও উচ্চ করের সাহায্যে অধিক ব্যয় করার লোভ দেখা দেয়। সে জন্যই তাদের কর বৃদ্ধির প্রণোদনা আছে।

যদি কর কম হয় এবং ব্যাবসায়িক কর্মপদ্ধতিতে মুনাফা বেশি হয়, তাহলে অর্থনীতির উন্নতি হবে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সরকারকে সার্বিকভাবে বেশি কর  (Tax) দেবে, যা উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি করবে। এভাবেই বেশি উৎপাদন আরো সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে, এটিই উন্নতির একমাত্র উপায়।

অধঃপতনের পথ হলো রাষ্ট্র যদি তাড়াহুড়া বা লোভ বা অন্য কোনো কারণে কর (Tax) বাড়ায়। কর বৃদ্ধির ফলে ব্যাবসায়িক কার্যক্রমে মুনাফা কমে যায়। মুনাফা হ্রাসের ফলে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম হ্রাস পায়, ব্যাবসায়িক কার্যক্রম হ্রাসের ফলে আয়ের (Tax) পরিমাণ হ্রাস পায়।

সুতরাং এ ধরনের ব্যবসায় লোকসান আছে। ফলে রাষ্ট্র অন্যান্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে উচ্ছেদ করে দেয় এবং নিজস্ব একচেটিয়া প্রতিষ্ঠান দাঁড় করায়। এতে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম আরো ব্যাহত হয় এবং সরকারি কর আরো হ্রাস পায়। এভাবে রাষ্ট্র ও সমাজ আরো দরিদ্র থেকে দরিদ্র হয় এবং জাতি অধঃপতনের কবলে পড়ে। সেখান থেকে তাদের একমাত্র মুক্তির পথ হলো কর হ্রাস করা, ব্যবসার সুযোগ প্রসারিত করা, উৎপাদনশীলতা ত্বরান্বিত করা এবং সরকারের উচিত যুক্তিসংগত কর ও ব্যয়ের মাধ্যমে চাহিদা বৃদ্ধি করা। আর দেশে শতভাগ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখা।

তথ্যঋণ

মুকাদ্দামায়ে ইবনে খালদুন/আল্লামা ইবনে খালদুন

The Economic Thought of Ibn Khaldun/Mohammad Abdul Qadir  

Economic Thoughts of Islam: Ibn Khaldun/J.J Spengler

Ibn Khaldun’s Analysis of Economic Issues/Charles Issawi

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শহীদ ফিলিস্তিন!

মূল: ইমাম আবদুল হামিদ বিন বাদিস ও অনুবাদ: হোসাইন মুহাম্মদ নাঈমুল হক
মূল: ইমাম আবদুল হামিদ বিন বাদিস ও অনুবাদ: হোসাইন মুহাম্মদ নাঈমুল হক
শেয়ার
শহীদ ফিলিস্তিন!
সংগৃহীত ছবি

[শাইখ আব্দুল হামিদ বিন বাদিস (রহ.) (জন্ম: ৪ ডিসেম্বর ১৮৮৯, মৃত্যু: ১৬ এপ্রিল ১৯৪০) ছিলেন আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তিনি মসজিদে নববীতে আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ শিক্ষক মাওলানা মাদানির কাছে নিজের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ করলে শাইখ মাদানি তাঁকে দেশে ফিরে গিয়ে ফরাসি উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন। উস্তাদের আদেশ অনুযায়ী তিনি স্বদেশে ফিরে যান এবং ‘জমইয়াতুল উলামা আল-জাযাইরিয়্যিন’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

এ সংগঠন স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বহু শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে গণকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

১৩৫৭ হিজরি মোতাবেক ১৯৩৮ সালে তিনি ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে ‘শহীদ ফিলিস্তিন’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লেখেন, যা পরবর্তীতে তাঁর রচনাসমগ্র ‘আসারু আব্দুল হামিদ বিন বাদিস’-এর ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩-৪১৬-এ সংকলিত হয়। প্রবন্ধটি আজ থেকে প্রায় ৮৭ বছর আগে প্রকাশিত হলেও প্রায় ৯ দশক পরও আমরা একই বাস্তবতার মুখোমুখি—বরং আরো ভয়াবহরূপে। এই প্রবন্ধ যেন আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ফিলিস্তিনের ব্যথা শুধু তাদের একার নয়—সমগ্র উম্মাহর ব্যথা।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবন্ধটি অনুবাদ করা হয়েছে।]

আল-আক্বসা প্রাঙ্গণ, মক্কা ও মদিনা প্রাঙ্গণের মতোই পবিত্র। আল্লাহ তাআলা সুরা ইসরাতে বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, {الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ}

অর্থ : ‘যার আশপাশকে আমরা বরকতময় করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)

যেন আমরা সে পবিত্র ভূমির মর্যাদা অনুধাবন করতে পারি।

অতএব, মসজিদুল আকসা প্রাঙ্গণে যা কিছু ঘটছে, তা যেন মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণেই ঘটছে।

ইসলাম শুরু থেকেই সে পবিত্র ভূমিকে রক্ষা করেছে এবং সব ধর্মের উপাসনালয়কে সম্মান দিয়েছে। এক সম্প্রদায়কে অন্যের ওপর জুলুম করার সুযোগ দেয়নি। ফলে দীর্ঘ শতাব্দী ধরে ইহুদিরা মুসলিম শাসনের ছায়াতলে এই ভূমিতে নিরাপদে, শান্তিতে ও স্বাধীনতার সঙ্গে বসবাস করে এসেছে।

কিন্তু লোভী ও বর্বর জায়নবাদ এবং নিষ্ঠুর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মিলে ইহুদি জাতির এক বড় অংশের মধ্যে অন্ধ লোভ তৈরি করে তাদের নিরাপদ ফিলিস্তিন ভূমিতে নিক্ষেপ করে।

ফলে ইহুদিরা দীর্ঘকাল ধরে ভোগ করে আসা সেই সুযোগ ও অনুগ্রহের কথা ভুলে যায় এবং ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে আগ্রাসন শুরু করে। এর ফলে এই শান্তিপূর্ণ ভূমি এক অসহ্য নরকে পরিণত হয়, যা মুসলিম ও আরব জাতির হৃদয়ে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে।

আমরা বলি ‘ইহুদি জাতির এক বড় অংশ’। কারণ তাদের অনেকেই এই অন্যায়, অত্যাচার ও উন্মত্ততাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ইসলামের অধীনে তাদের প্রাপ্ত শান্তির স্বীকৃতি দেয়। যেমন হাইফা, জাফা ও আল-কুদসে আরবদের বিরুদ্ধে চালানো বর্বর হামলার প্রতিবাদে সামারিয়ান ইহুদিদের প্রধান, নাবলুসের গভর্নরের কাছে পাঠানো এক প্রতিবাদপত্রে লিখেছেন,

‘আমরা, সামারিয়ান সম্প্রদায়ের সদস্যরা—নারী-পুরুষ উভয়ই— হাইফা, জাফা এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে নিরপরাধ আরবদের ওপর কিছু ইহুদির বর্বর আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং এসব ভয়াবহ ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাই। আমরা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছি, সংখ্যায় স্বল্প হওয়া সত্ত্বেও আমরা কয়েক হাজার বছর ধরে আমাদের আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছি এবং কখনো তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করেনি বা নির্যাতন চালায়নি।’

অভিশপ্ত জায়নবাদ ও ব্রিটিশ উপনিবেশ একত্র হয়ে এই বিপর্যয় ডেকে আনার আগ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে এই ছিল ফিলিস্তিনের সাধারণ অবস্থা।

এখানে সমস্যা সব ইহুদি ও সকল মুসলমানের মধ্যে নয়; বরং এক পক্ষে জায়নবাদ ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা, আর অন্য পক্ষে ইসলাম ও আরবদের মধ্যে সংঘাত। ফিলিস্তিন হচ্ছে এই সংঘাতের ভুক্তভোগী। আর এই সংঘাতে শহীদ হচ্ছে আল-কুদসের মহান রক্ষকগণ। এর ময়দান হলো মসজিদুল আকসা।

তাই সেখানে যত প্রাণহানি ঘটছে, যত শিশু এতিম হচ্ছে, যত নারী বিধবা হচ্ছেন, যত সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, যত ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে এবং সর্বোপরি যত ইজ্জত-সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে—সবকিছুর দায়ভার প্রত্যেক মুসলমানের কাঁধে। তাঁদেরকে আল্লাহ তাআলার দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। তাঁরা যেন মনে রাখেন— এই ঘটনাগুলো যেন মক্কা ও মদিনাতেই ঘটছে। তাই যার যার সাধ্যানুযায়ী এই অত্যাচার বন্ধে কাজ করা জরুরি।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা জায়নবাদীদের ব্যবহার করে মুসলিমদের বিভক্ত করতে চায়। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জায়নবাদী ইহুদিদের পবিত্র ভূমিতে একত্রিত করছে এবং ফিলিস্তিনকে পদদলিত করছে। এজন্যই তারা সৈন্য জমায়েত করছে, অর্থ জোগান দিচ্ছে এবং নিরপরাধ মানুষের রক্তে আল-আকসার পবিত্র প্রাঙ্গণ রক্তাক্ত করছে।

এইসব ঘটছে আর সারা মুসলিম ও আরব বিশ্ব এর প্রতিবাদ করছে। আরব ও মুসলিম শাসকগণ ব্রিটিশদের কাছে দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু ব্রিটিশদের কানে কোনো আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না। তাদের হৃদয় পাথর হয়ে গেছে।

আমরা বলছি ‘ইসলামী ও আরব বিশ্ব’, কারণ এর বাইরে আর কারও পক্ষ থেকে কোনো প্রকৃত প্রতিবাদ বা সংহতি আমরা দেখিনি। যাদের আমরা অন্যদের দুঃখে তর্জন-গর্জন করতে দেখি এবং সম্ভবপর সব উপায়ে সাহায্য করতে দেখি, ফিলিস্তিনের প্রশ্নে তারা নীরব, তাদের হাত বন্ধ।

আমরা মুসলমানরা ইসলামের প্রকৃতি অনুযায়ী জুলুমের শত্রু। মজলুমের সহানুভূতিশীল। এমনকি সে আমাদের শত্রু হলেও। কিছুদিন আগে এক মুসলিম ব্যবসায়ী আমাকে জার্মানিতে ইহুদিদের ওপর অত্যাচারের খবর পড়ে শোনালেন এবং বললেন, ‘শাইখ! এটা তো ইসলামে হারাম। ইসলাম চায় সবাই তাদের ধন-সম্পদ নিয়ে শান্তিতে ও নিরাপদে থাকুক।’ উত্তরে আমি বললাম, ‘অবশ্যই।’ এবং তাকে বোঝালাম, ইতিহাসে ইহুদিরা কীভাবে ইসলামের ছায়ায় শান্তিতে বসবাস করেছে। অথচ এই ব্যবসায়ী একজন সাধারণ ধার্মিক মুসলিম, যিনি আল-কুদসে ইহুদিদের হাতে চলমান হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে অবগত। তারপরও সে তাদের ওপর নির্যাতনে দুঃখ প্রকাশ করছে এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

দেখুন, আজ জার্মানি থেকে ইহুদিদের বিতাড়িত করা হয়েছে। তাদের সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সম্পত্তি অধিগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চিকিৎসা পেশা থেকে সম্পূর্ণভাবে তাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গ্রিস তাদের নিজের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না—এমনকি পর্যটক হিসেবেও না। ইতালি তাদের ওপর ‘বৈজ্ঞানিক’ পদ্ধতিতে নির্যাতন চালাচ্ছে। ফ্রান্সেও একই হাওয়া বইছে।

এই পরিবর্তিত অবস্থায় ইহুদিরা আজ খ্রিস্টীয় ইউরোপে অবাঞ্ছিত। মধ্যযুগের মতোই তারা নিজেদের স্ত্রী-পরিবার ও ধন-সম্পদের বিষয়ে মুসলিম বিশ্ব ছাড়া আর কোথাও নিরাপদ বোধ করছে না। তা সত্ত্বেও তারা আল-কুদসের ভূমিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে। এতদ্বসত্ত্বেও তাদের আদেশ-উপদেশ দেওয়ার মতো যেন কেউ নেই!

এমনও হতে পারে যে, ইউরোপে তাদের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন নেমে এসেছে, তা হয়তো ফিলিস্তিনের ভূমিতে তাদের অন্যায়-অত্যাচারের ফল। পবিত্র ভূমিতে তাদের ন্যায়ের অস্বীকার এবং অন্যায়ে নীরব থাকার শাস্তি। আল্লাহ জালেমকে জালেম দিয়েই শাস্তি দেন। তারপর উভয় পক্ষকে পাকড়াও করেন।

{وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ} 

‘আর তোমার এমন ফিতনার ভয় করো, যা কেবল তোমাদের মধ্যে জালেমদের পাকড়াও করবে না। এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৫)
 

মন্তব্য

মোহরানার বকেয়া শোধে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ

মুফতি মীযানুর রহমান এখলাসপুরী
মুফতি মীযানুর রহমান এখলাসপুরী
শেয়ার
মোহরানার বকেয়া শোধে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ

বিবাহের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ মোহর। বরের পক্ষ থেকে কনেকে বিবাহের সময় যে অর্থ বা সম্পদ প্রদান করা হয় বা পরে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাকে মোহর বলা হয়। মোহর ছাড়া ইসলামে বিবাহ সংঘটিত হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে মোহর প্রদান করা স্বামীর কর্তব্য এবং এটি স্ত্রীর অধিকার।

মোহর পরিশোধ না করা কবিরা গুনাহ। বিবাহের প্রথম দিনেই পূর্ণ মোহর পরিশোধ করা উত্তম। পূর্ণ পরিশোধ করতে অক্ষম হলে কিছু হলেও পরিশোধ করতে হবে। স্ত্রী যদি কিছু মোহর পরিশোধ ছাড়া স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে অসম্মত হয়—এটি তার অধিকার হিসেবে পূরণ করা জরুরি।

পূর্ণ বা আংশিক মোহর পরিশোধ ছাড়াই যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীর সংসার করে—এতেও কোনো অসুবিধা নেই। এ ক্ষেত্রে অপরিশোধিত পূর্ণ বা আংশিক মোহর স্বামীর ওপর স্ত্রীর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। এটি এমন ঋণ, যা পরিশোধ বা সন্তুষ্টচিত্তে ক্ষমা করা ছাড়া মাফ হয় না। এ জন্য কেউ তার স্ত্রীর ওপর চাপ প্রয়োগ করে বা নারীত্বের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে মোহরের টাকা মৌখিক মাফ নিলেও স্বতঃস্ফূর্ত মাফ না করার কারণে অপরিশোধের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারবে না।

ফতোয়ার কিতাবে আছে—‘বিবাহের কারণে স্বামীর ওপর পূর্ণ মোহর পরিশোধ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে এমনভাবে যে তা আদায় করা বা স্ত্রী কর্তৃক মাফ করা ছাড়া রহিত হয় না।’ (ফাতওয়ায়ে শামি : ৫/৩০২)

প্রশ্ন হলো, অপরিশোধিত মোহর, যা স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত, স্বামী যদি তা বিবাহের ১০ থেকে ২০ বছর বা আরো পরে পরিশোধ করে কিংবা স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর পরিশোধ করে অথবা স্বামী মারা যাওয়ার পর তার সম্পদ থেকে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা হয়, তাহলে তা কিভাবে পরিশোধ করা হবে? অর্থাৎ এতে মুদ্রাস্ফীতির ধর্তব্য হবে কি না?

উদাহরণস্বরূপ—বিবাহ সংঘটিত হলো ২০০০ সালে এবং মোহর ধার্য ছিল দুই লাখ টাকা। আর তা পরিশোধ করা হচ্ছে ২০২৫ সালে। ২০০০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি হলো ১০ শতাংশ। তাহলে কি মুদ্রাস্ফীতির আলোকে দুই লাখের সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ করে দুই লাখ বিশ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে, নাকি বিবাহের সময় যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা-ই আদায় করতে হবে?

মোহর পরিশোধে মুদ্রাস্ফীতি ধর্তব্য নয়

এ ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালার আলোকে দুটি বিষয় স্মরণীয়—

এক. অপরিশোধিত মোহর স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে যায় এবং এটি পরিশোধ করা স্বামীর ওপর এমন কর্তব্য, যেমন স্বামী যদি স্ত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা ঋণ নেয় আর পরে তা পরিশোধ করে।

দুই. শরিয়ত মোতাবেক কোনো ধরনের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রাসংকোচ ধর্তব্য নয়। সর্বাবস্থায় ঋণ পরিশোধ করতে হবে পরিমাণ হিসেবে—মূল্য হিসাবে নয়। এ পর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে মোহর পরিশোধের ক্ষেত্রেও মুদ্রাস্ফীতি গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন মুদ্রাসংকোচ গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং দুই লাখ টাকা মোহর ধার্য হওয়ার ৫০ বছর পর পরিশোধ করা হলেও দুই লাখ টাকাই পরিশোধ করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে মুদ্রার মূল্য ১০ শতাংশ কমে গেলেও দুই লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে না এবং কোনো স্ত্রী বা তার পক্ষ থেকে কেউ এমন দাবি করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের একটি ফতোয়া হলো—‘মোহরানা তলব করলে প্রচলিত টাকায় পরিশোধ করবে।’ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে—বিবাহের সময় যে ধরনের টাকা প্রচলন আছে তার দ্বারা সেই পরিমাণ আদায় করতে হবে। সুতরাং যদি বিবাহের সময় ১০ হাজার টাকা মোহর নির্ধারণ হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর ওপর ১০ হাজার টাকা আদায় করা আবশ্যক। চাই ১০-২০ বছর পরেই পরিশোধ করা হোক। পরিশোধের সময় স্বর্ণের মূল্যের তারতম্যের সঙ্গে মেলাতে হবে না। কারণ ফিকহের মূলনীতি অনুযায়ী ঋণ তার সাদৃশ্য দ্বারাই আদায় করতে হয়। (দারুল দেওবন্দের ওয়েবসাইট, ফতোয়া নং ১৬৩৩১৬)

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

আজ বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহর সময় শুরু- ১২টা ২ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩০ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ২৪ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৪১ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ২০ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৩৬ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা। 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

সাহু সিজদার আদায় পদ্ধতি কী?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
সাহু সিজদার আদায় পদ্ধতি কী?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : আমি হানাফি মাজহাবের আলোকে সাহু সিজদা আদায় পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই। দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

-আবুল হোসেন, কুমিল্লা

উত্তর : নামাজের মধ্যে ভুলবশত কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে বা নামাজের ফরজ ও ওয়াজিবের পরস্পর ধারাবাহিকতায় আগে-পরে হলে বা ফরজ ও ওয়াজিব দ্বিগুণ আদায় করলে অথবা ফরজ ও ওয়াজিব আদায়ে বিলম্ব হলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। তা আদায়ের পদ্ধতি হলো, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ তথা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর ডান দিকে এক সালাম ফেরাবে, অতঃপর নামাজের মতো দুটি সিজদা দেবে এবং পুনরায় তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামাজ শেষ করবে।

(আদ্দুররুল মুখতার : ১/১০১)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ