<article> <p style="text-align: justify;">মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার দরগাবাড়ি গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন এক মসজিদ। সিপাহিপাড়া-মিরকাদিম প্রধান সড়ক ধরে যেতে দূর থেকেই নজর কাড়ে। ইটের সঙ্গে সুরকি, চুন আর তেঁতুলের পানি দিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি। মসজিদটি ‘বাবা আদমের মসজিদ’ নামে পরিচিত।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মক্কার অদূরে এক জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলায় ইসলাম প্রচারে এসেছিলেন সৈয়দ বাবা আদম (র.)। ধারণা করা হয়, দ্বাদশ শতকের কোনো একসময় তিনি পূর্ব বাংলায় আসেন। বাংলায় তখন সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেনের শাসন। ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ না থাকলেও স্থানীয় লোকশ্রুতি থেকে জানা যায়, বল্লাল সেনের সময়ই বাবা আদমকে হত্যা করা হয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ কারণেই তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘শহীদ’ কথাটি। বাবা আদমকে তাঁর দরগার পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর ৩১৯ বছর পর সেই সমাধির পাশেই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। চমৎকার নির্মাণশৈলীর মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট আর প্রস্থ ৩৬ ফুট। এর দেয়ালগুলো সাড়ে ছয় ফুট পুরু। দুই দেয়ালের মাঝখানে আট ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা ও সাড়ে পাঁচ ফুট ব্যাসার্ধের দুটি কালো পাথরের স্তম্ভ পুরো কাঠামোর ভার বহন করছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মসজিদের সম্মুখভাগে কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের শীর্ষে উত্কীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, এর নির্মাণকাল ৮৮৮ হিজরি বা ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দ। সুলতান ফতেহ শাহের শাসনকালে মালিক কাফুর নামের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেন। মসজিদ ভবনটির সামনের দিকে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">প্রবেশপথের ওপরে আছে ফারসি অক্ষর খোদাই করা কালো পাথরের ফলক। ভেতরে মেহরাবের দুই পাশের দুই দেয়ালে খোদাই করা কারুকাজ রয়েছে। মেঝেতে ইট বিছানো। মাঝেমধ্যেই এখানে দূর-দূরান্ত থেকে বিদেশি পর্যটকসহ দর্শনার্থীরা দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি দেখতে আসে। এখানে এখনো নামাজ আদায় করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">খতিব ও পেশ ইমাম মাওলানা মাহবুবুর রহমান সালেহী জানান, মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম দেয়ালে কিছুটা ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে ইট খুলে গেছে। ১০০ বছরের কিছু বেশি সময় আগে, ১৯০৯ সালে শেষবারের মতো মসজিদটির বড় সংস্কার করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">ছয়টি গম্বুজ থাকলেও বাবা আদমের মসজিদে কোনো মিনার নেই। মসজিদটিতে বাংলায় সুলতানি শাসন আমলে বিকশিত স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য ও অলংকরণশৈলী দেখা যায়। বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে, বস্তুত এ অঞ্চলের মসজিদ স্থাপত্যে সুলতানি স্থাপত্য রীতি পরিণত রূপ লাভ করেছে বাবা আদমের মসজিদে। এটি একটি ছয়গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং এ ধরনের আর একটিমাত্র নিদর্শন সাতগাঁও মসজিদ (১৫২৯ খ্রি.)। এই মসজিদের ছাদের কার্নিশে বক্রতা লক্ষ করা যায়। এই বৈশিষ্ট্য জাহানিয়া মসজিদ (১৫৩৫ খ্রি.) ছোট সোনা মসজিদ, ষাট গম্বুজ মসজিদ ও শাহাজাদপুর মসজিদে দেখতে পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align: justify;">বাবা আদম মসজিদটি বর্তমানে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত ইমারত। মসজিদটি দেখতে আসা পর্যটক মোহাম্মদ সেলিম কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রাচীন এই মসজিদের ইতিহাস জানার জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পর্যটকদের একটি পুস্তিকা পর্যন্ত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখেনি। শুধু সাইনবোর্ড লাগিয়েই খালাস।’</p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয় প্রবীণরা জানান, গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে মসজিদের চারপাশে সীমানাবেড়া দেওয়া হয়। তখনই সরকারের ডাক বিভাগ মসজিদের ছবিসংবলিত ছয় টাকা মূল্যমানের একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। এতে মসজিদটির পরিচিত আরো ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর সংরক্ষণ বা পর্যটকদের কাছে আরো ভালো করে তুলে ধরায় উল্লেখযোগ্য কাজ করা হয়নি।</p> </article>