<p>চাকরি দেওয়ার কথা বলে এক তরুণকে ডেকে নিয়ে আটকে রাখা হয়। দাবি করা হয় মুক্তিপণ। চাহিদামতো মুক্তিপণ না দেওয়ায় কিডনি বিক্রি করার হুমকি দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নেওয়া হচ্ছিল তাকে। পথে প্রাণ বাঁচাতে মোটরসাইকেল থেকে লাফ দেন ভুক্তভোগী। স্থানীয় জনতা এক অপহরণকারীকে ধরে ফেলেন। এ ঘটনায় বুধবার (২৭ মার্চ) ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।</p> <p>গ্রেপ্তারকৃত গৌরীপুর উপজেলার ভাংনামারি ইউনিয়নের সেকান্দর আলীর ছেলে মো. শাহজাহান মিয়া (৩৭)। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- একই ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে সবুজ মিয়া (২৮) ও নান্দাইল উপজেলার শেরপুর গ্রামের  মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৩০)।</p> <p>মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের মো. হাবিবুর রহমান গাজীর ছেলে মাকসিদুল গাজী (২৭) অনলাইনে 'চাকরির বাজার' নামক একটি ওয়েবসাইটে চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। এক পর্যায়ে আবেদনের এক সপ্তাহ পর চাকরিপ্রার্থী ওই তরুণকে ডাকা হয় ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের একটি স্থানে। সেখান থেকে গত ২৫ মার্চ দুপুরে কয়েকজন এসে তাকে মোটরসাইকেলযোগে গৌরীপুর উপজেলার ভাংগানামারি ইউনিয়নের সুতিরপাড় মুন্সিবাড়ি নামক বাড়িতে নিয়ে রাখে। পরে রাতে একটি নির্জন ঘরে নিয়ে হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে চলে নির্যাতন। আর্তচিৎকার মোবাইলে শোনানো হয় তার পরিবারকে। পরিবারকে বলা হয়, প্রাণ বাঁচাতে রাতের মধ্যেই পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। ছেলেকে রক্ষায় অসহায় দরিদ্র বাবা ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। বিকাশের মাধ্যমে প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠান তিনি। কিন্তু এতে অত্যাচার থামেনি। </p> <p>থানায় বসে নির্যাতিত চাকরিপ্রার্থী মাকসিদুল গাজী কালের কণ্ঠকে জানান, খুলনার বিএল (ব্রজলাল) সরকারি কলেজ থেকে ২০২২ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি চাকরি খুঁজছিলেন। ওই ওয়েবসাইট ঘেঁটে বিজ্ঞপ্তিটি দেখে আবেদন করেন এবং দুষ্কৃতিকারীদের ফাঁদে পড়েন। তাকে বলা হয়, পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দিলে কিডনি বিক্রি করে দেবে। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার ইফতারের পর তাকে একটি মোটরসাইকেলে উঠিয়ে অজ্ঞাত স্থানের দিকে রওনা হয় অপহরণকারীরা। চালকের কাছে দেশীয় অস্ত্র ও তার পেছনে বসা ব্যক্তির কাছে পিস্তল ছিল। তাকে হুমকি দেওয়া হয় যে, কিডনি বের করে নিতে যাওয়া হচ্ছে। পথিমধ্যে স্থানীয় একটি বাজারের কাছে মোটরসাইকেল থেকে লাফ দেন ভুক্তভোগী। এ সময় স্থানীয় লোকজন এসে মোটরসাইকেল চালককে আটক করতে পারলেও অন্যজন পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের খবরে পুলিশ এসে থানায় নিয়ে যায়।</p> <p>জানতে চাইলে গৌরীপুর উপজেলার ভাংগানামারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেজামুল হক অভিযোগ করে জানান, এই চক্রের মূল হোতা মুন্সিবাড়ির সেকান্দর আলী তিন ছেলে শাহজাহান, সাফি ও সফিকুল। এরা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদ পাতে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে যুবকদের বাড়িতে এনে মুক্তিপণের দাবিতে নির্যাতন করে। বাড়িতে রয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড টর্চার সেল। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জামিনে এসে এই কর্মকাণ্ডই চালিয়ে যায়।</p> <p>এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র রায় বলেন, চাকরির কথা বলে জিম্মি করে টাকা আদায় ও মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনেকে আটক করা হয়েছে। মূল হোতাসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।</p>