<p>কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এক উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান মিস্ত্রিসহ ঠিকাদারের লোকজনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের নির্মাণাধীন রাঙ্গালীকুটি ব্রিজের স্লাব ঢালাই নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।</p> <p>এ সময় এক সহকারীকে আটকে রাখে মিস্ত্রির লোকজন। পরে পুলিশ এসে ওই সহকারী ও তার মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।</p> <p>স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ওই ব্রিজের স্লাব ঢালাইয়ে কথা ছিল। এ উপলক্ষে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান, সহকারী শ্যামল কুমার কুন্ড, তপন কুমার সরকার ও লিটন মিয়া কাজ তদারকিতে আসেন। </p> <p>কাজ শুরুর আগে স্লাব জয়েন্টের বিশেষ পাতের পুরুত্ব ১০ মিলিমিটারের পরিবর্তে ৫ মিলিমিটার দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাকসহ স্থানীয় লোকজন ঢালাই বন্ধ রাখতে বলেন। এ সময় উপ-প্রকৌশলী আতাউর রহমানসহ তার তিনজন কর্মসহকারী মিস্ত্রিকে ঢালাইয়ের অনুমতি না দিয়ে ফিরতে চাইলে তাদের বাধা দেন ঠিকাদারের সাইড ম্যানেজার জুয়েল, প্রধান মিস্ত্রি সবুজ মিয়া ও তার সহযোগী মিস্ত্রিরা। </p> <p>এসময় উভয় পক্ষের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রকৌশলীকে কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকেন মিস্ত্রি সবুজ মিয়াসহ তার সহযোগীরা। তাদের চারজনকে আটকিয়ে রাখেন তারা। এসময় প্রকৌশলী আতাউর রহমান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা সদরে পাঠান স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।</p> <p>এদিকে কর্মসহকারী শ্যামল কুমার ও তপন কুমার সেখান থেকে সটকে পড়লেও মোটরসাইকেলসহ আটকে পড়ে কর্মসহকারী মিলন মিয়া। পরে কচাকাটা থানার পুলিশ এসে মোটরসাইকেলসহ মিলন মিয়াকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।</p> <p>উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কর্মসহকারী শ্যামল কুমার কুন্ড জানান, ঢালাই শুরুর আগে স্লাবের বিশেষ জয়েন্টের পাতের পুরত্ব নিয়ে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেয়। এসময় আমরা ফিরতে চাইলে মিস্ত্রি ও ঠিকাদারের লোকজন আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায় এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমাদের ওপর কিল-ঘুষির ঘটনাও ঘটে।</p> <p>মারধরের শিকার উ-সহকারী প্রকৌশলী আতাউর রহমান জানান, প্রধান মিস্ত্রি সবুজ মিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় বেশ কিছু মিস্ত্রি তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।</p> <p>তবে অভিযুক্ত প্রধান মিস্ত্রি সবুজ মিয়া মারধরের ঘটনার কথা অস্বীকার করে জানান, একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মাত্র। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও জয়েন্টের পাত না থাকায় ওই প্রকৌশলী কাজ বন্ধ করে দিয়ে গেছেন। সেদিন আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আজ তাদের পরামর্শে ৫ মিলিমিটার পাত লাগানো হয়েছে। সেই পাতের পুরুত্ব কম হওয়ায় স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের ভুলে বারবার কাজ বন্ধ রাখলে আমাদের অনেক টাকা ক্ষতি হয়। জনগণকে বুঝিয়ে ঢালাই শুরু করতে তাদের পথ আটকানো হয়েছিল মাত্র।</p> <p>কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বদেব রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা হবে।</p> <p>উপজেলা প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p> <p>উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে টেন্ডার হওয়া ৮২ মিটারের গার্ডার ব্রিজটির কাজ পেয়েছে যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট কম্পানি লিমিটেড। পরে এটি সাব-কন্ট্রাক্ট নেয় লালমনির হাটের পটগ্রামের রফিকুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার বিভাগের এই ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।</p>