<p>মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশকে মারধরের চিত্র ধারণ করায় সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত সাতজন সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। </p> <p>আজ বুধবার (৮ মে) সকাল সোয়া ৯টার দিকে উপজেলার হোসেন্দি ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক গুলজার হোসেন মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি। এ ঘটনায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে গজারিয়া থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল হকের সমর্থক মনিরুল হক মিঠু তার লোকজন নিয়ে জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার শঙ্কায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য মো. সোহেল সবাইকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর চাড়াও হন মিঠু ও তার লোকজন। তারা পুলিশ সদস্যকে মারধর শুরু করেন। পাশ থেকে এ ঘটনার ছবি ও ভিডিও করছিলেন এক সাংবাদিক। পরে ওই পুলিশ সদস্যকে রেখে সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন তারা। সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে মারধর করতে থাকেন মিঠু ও তার লোকজন। পরে অন্য সাংবাদিকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। </p> <p>এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নিলে পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মিঠু ও তার লোকজন। মারধরের ঘটনার পর মিঠু ও তার লোকজন কেন্দ্রে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় তারা দু-চারজন সাংবাদিক মেরে ফেললে কী হবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। ওই ঘটনার ভিডিও করতে গেল মাইটিভি ও প্রথম আলোর সাংবাদিকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।</p> <p>পুলিশ সদস্য মো. সোহেল রানা বলেন, কেন্দ্রের পাশে একটি দোকান ছিল। সেখানে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা জড়ো হচ্ছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমি তাদের সরে যেতে বলি। সে সময় আনারসের সমর্থকরা আমার ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিক ছবি তোলায় তাকেও মারধর করে।</p> <p>এ ঘটনায় আরেক ভুক্তভোগী সাংবাদিক শেখ মোহাম্মাদ রতন বলেন, সাংবাদিক গোলজারকে মারধরের পর ৩০ মিনিটের মতো কেন্দ্রের ভেতরে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আমরা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশদের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি।</p> <p>কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক রতন বৈরাগীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার পর কেন ব্যবস্থা নিলেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে কিছুই হয়নি। সব ঠিক আছে। এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারব না।</p> <p>হামলায় আহত ভুক্তভোগী সাংবাদিক মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি গুলজার হোসেন জানান, ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের পাশে কয়েকটি দোকান খোলা ছিল। দোকানগুলোর সামনে কয়েকজন আনারস প্রতীকের সমর্থক দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত দুইজন পুলিশ আনারস প্রতীকের ওই সমর্থকদের দোকানের সামনে থেকে সরে যেতে বললে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর চাড়াও হয়ে তাদের মারধর শুরু করেন। সেই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তারা আমার ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তারা আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর ছবি ও ভিডিও ডিলিট করে পুলিশের মাধ্যমে মোবাইলটি ফিরিয়ে দেয়।</p> <p>মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দেব জানান, সাংবাদিকের ওপর হালার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে মনিরুল হক মিঠু, তানভীর হক তুরীন ও ইকবাল হোসেন স্বপনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p>