<p>‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। হঠাৎ একদল পুলিশ এসে গুলি ছুড়ে। আমিসহ সঙ্গে থাকা ১৬-১৭ জন ছররা গুলিতে বিদ্ধ হই। আমার শরীর থেকে ছররা গুলি সরানো গেলেও একটি চোখে রয়ে গেছে। এটি সরাতে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। তবে এটি অনেক ব্যয়বহুল। যে কারণে একটু সময় লাগবে চিকিৎসা করাতে। আমার পরিবার চেষ্টা করছে টাকা সংগ্রহ করতে।’</p> <p>বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে শরীরে ১৭টি ও চোখে একটি ছররা গুলি লাগা মোস্তাহিদ হোসেন সামী। <br /> রবিবার (২৫ আগস্ট) কথা হলে সামী জানায়, সে বাম চোখে কম দেখে। চিকিৎসা করাতে না পারলে হয়তো তার চোখটি নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এ নিয়ে তার কোনো আক্ষেপ নেই। দেশের জন্য কিছু করতে পেরে বরং তার গর্ববোধ হয়।  </p> <p>মোস্তাহিদ হোসেন সামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের খড়মপুর এলাকার আক্তার হোসেন ভূইয়ার ছেলে। আক্তার ভূঁইয়া ঢাকাতেই মুদি দোকানি। সামী ঢাকার উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। মোট সাতটি পরীক্ষা সে দেয়। পরিবার নিয়ে তারা গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে বসবাস করেন। গত ১৮ জুলাই রাজউক স্কুলের সামনে আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন বলে দাবি সামীর।<br />  <br /> কথা হলে সামী আরো জানায়, হঠাৎ ছোড়া গুলিতে তার মুখসহ সারা শরীরে ১৭টি বিদ্ধ হয়। একটি লাগে চোখে। তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলনকারিরা তাকে উদ্ধার করে আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। এরপর কারফিউ শিথিল অবস্থায় আবারো চিকিৎসা করিয়ে শরীরে থাকা ছররা গুলি সরানো হয়। কিন্তু চোখেরটি সরানো সম্ভব হয়নি। চিকিৎসারা জানিয়েছেন দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। অন্যথায় এ চোখ দিয়ে আর দেখা যাবে না।</p> <p>চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সামী আরো জানায়, চোখ থেকে গুলি সরাতে সার্জারি খরচই আসবে ১৫ লাখ টাকা। এর বাইরে আরো কিছু খরচ আছে। এছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া-আসা করতে হলেও খরচ লাগবে। সব মিলিয়ে ২৫ লাখ টাকার মতো লাগবে। পরিবার থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করে দেশে চিকিৎসা করিয়েছে অনেক টাকা ব্যয়ের মাধ্যমে। <br /> চোখ নিয়ে কোনো ধরনের আপসোসও নেই সামীর। বলতে লাগলেন, ‘অনেকে মারা গেছে। অনেকের দুই চোখই নেই। আমার তো একটি আছে। এ নিয়ে আমার কোনো ধরনের আফসোস নেই। বরং কিছু একটা করতে পেরে আমার ভালো লাগছে।’<br />   <br /> সামীর বাবা আক্তার হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, প্রথমে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও পরে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে সামীর চোখের অপারেশন করা হয়। চিকিৎসা জানিয়েছেন গুলির একটি অংশ বাম চোখে রয়ে গেছে। তাদের পক্ষে এটি বের করা সম্ভব না। এজন্য তারা বাইরে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসা করাতে না পারলে এই চোখ নিয়ে কোনোদিন সামী দেখতে পারবে না।</p>