<p style="text-align:justify">নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সাতুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মোস্তাকিম (১৯)। তার বাবা বাচ্চু মিয়া প্রায় ১১ বছর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক পা হারান। তখন থেকে বাবা অচল হওয়ায় মোস্তাকিমদের অভাবের সংসার। বসত ভিটে ছাড়া সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। পঙ্গু অবস্থায় বাড়ির কাছে ছোট একটি টং দোকান পরিচালনা করে সংসার চালায় বাচ্চু মিয়া। স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাস করে পরিবারের অভাব ঘোচাতে গাজীপুরের পোশাক কারখানায় কাজ নেন মোস্তাকিম। তার আয়েই চলছিল পাঁচ সদস্যের পরিবারটি।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০ জুলাই দুপুরে গাজীপুরের বড়বাড়ি মোড় এলাকায় বাজার করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় মোস্তাকিম। আহত অবস্থায় তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় পায়ে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে এক দিন পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ক্ষতস্থান শুকানোর পর অস্ত্রোপচার করার কথা জানান চিকিৎসক। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেননি। কিনতে পারছেন না প্রয়োজনীয় ওষুধ। গ্রামের বাড়ির বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মোস্তাকিম।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা ও মোস্তাকিমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ জুলাই সারাদেশে যখন কারফিউ চলছিল সেই দিন দুপুরে বাজার করতে গাজীপুরের বড়বাড়ি মোড় এলাকায় যান মোস্তাকিম। কারফিউ ভেঙে আন্দোলনকারীরা সড়কে বিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এ সময় একটি গুলি মোস্তাকিমের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে লেগে বের হয়ে যায়। </p> <p style="text-align:justify">মুহূর্তেই মোস্তাকিম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন ঢাকার পঙ্গু (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পায়ে ব্যান্ডেজ করে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে পরদিন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। </p> <p style="text-align:justify">সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মোস্তাকিমের পায়ের রগ ছিঁড়ে গেছে। ক্ষতস্থান শুকানোর পর অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেই থেকে ব্যান্ডেজ প্যাঁচানো পা নিয়ে বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মোস্তাকিম। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না তার।</p> <p style="text-align:justify">মো. মোস্তাকিম জানান, ‘আন্দোলনের জন্য কারখানা বন্ধ ছিল। দুপুরে একটু শান্ত পরিবেশে দেখে খাবার আনতে বাসা থেকে বের হই। হঠাৎ সড়কে আন্দোলনকারীরা চলে আসায় মুহূর্তে তাদের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে পুলিশ। আমার পাশে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে দৌড় দিলে একটি গুলি এসে পায়ের হাঁটু বরাবর এক পাশে লেগে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। তখন আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পর কি হয়েছে তা আর বলতে পারব না।’</p> <p style="text-align:justify">মোস্তাকিমের মা পুষ্প আক্তার জানান, ‘আমার স্বামী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে পঙ্গু হয়েছে। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে। মোস্তাকিমের আয় করা টাকা দিয়ে সংসার চলত। দুই মাস ধরে মোস্তাকিমও বিছানায় পড়ে আছে। হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে না। সংসারও চলছে না। সরকার বা বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।’</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল আরিফ বলেন, ‘মাদ্রাসা থেকে হাফেজি পাস করে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিল মোস্তাকিম। আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন সে বিছানায় শুয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সবার একটু সহযোগিতা পেলে মোস্তাকিম সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরতে পারতেন।’</p> <p style="text-align:justify">মোহনগঞ্জ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানিক তালুকদার জানান, 'মোস্তাকিম আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ঢাকার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু অবস্থায় বাড়িতে রয়েছে সে। টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসাও হচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন যে যেমন পারেন তেমন সহযোগিতা করছেন। মোস্তাকিমের আয় রোজগার বন্ধ হওয়ায় পরিবারটি বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’</p>