<p>বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আয়শুল ইসলাম আফ্ফান। প্রায় দেড়শ ছোররা গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে তার শরীর। এর মধ্যে কিছু গুলি বের করা হলেও এখনো ১২০টির মতো গুলি শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে আফ্ফান। শ্বাসনালীতে কয়েকটি গুলি আটকে আছে। শ্বাসনালীতে গুলি আটকে থাকায় বিষয়টি জটিল হতে পারে বলে জানিয়েছে ডাক্তকা। সে কিছু খেতে পারছে না। <br />  <br /> বগুড়ার করতোয়া মাল্টিমিডিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই শিক্ষার্থী ১৮ জুলাইয়ের বিক্ষোভের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। বগুড়ায় যখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে তখন সকলের অগোচরে সুযোগ পেলেই যোগ দেয় আন্দোলনে। কোনো দিন বন্ধুর সঙ্গে আবার কোনো দিন তারই জমজ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলনের দিনগুলোতে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলেও বিজয়ের দিনে পুলিশের ছোররা গুলিতে ঝাঝরা হয়ে যায় তার পুরো শরীর।</p> <p>আফফানের বাবা কামরুল ইসলাম প্রবাসে থাকেন। জমজ সন্তানকে নিয়ে তার মা আয়েশা ছিদ্দিকা বগুড়ার উপশহরে থাকেন। জমজ ভাই দুজনই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আফফারের আরেক ভাইয়ের নাম অজাইরুল ইসলাম অরোয়া।<br />  <br /> বাবা সৌদিপ্রবাসী হওয়ায় মা আরো কঠোর নজর রাখতেন সন্তানদের প্রতি। মা বাড়ি থেকে বের হতে দিবে না, এমন ইঙ্গিত পাওয়ার পর শহরের ফুলবাড়িস্থ নানা বাড়িতে যায় আফফান।</p> <p>৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাড়িতে এসে কাউকে না জানিয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে য়ায়। এরপর থানা মোড় পার হতেই পুলিশ থানা থেকে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। খুব কাছ থেকে গুলি করায় তার শরীরে প্রায় ১৩০টি গুলি বিধে যায়। সেই সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে। আর কিছু বলতে পারে না আফফান।</p> <p>তার মা আয়েশা সিদ্দিকা জানান, ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে তিনি প্রায় বেহুস ছিলেন। ছেলেকে খুঁজতে চলে যান শহরে। সারা শরীর রক্তাক্ত। যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছে সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে নেওয়া হয় বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে। তারপর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বিভিন্নভাবে এক্স-রে করে দেখা যায় তারা সারা শরীরে ১৩০টির বেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পরে অপারেশনের মাধ্যমে কয়েকটি গুলি বের করা হলেও আরো ১২০টির মত গুলি শরীরে রয়ে গেছে। </p> <p>তিনি আরো জানান, ৩ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, শ্বাসনালীতে কয়েকটি গুলি আটকে আছে। শ্বাসনালীতে গুলি আটকে থাকায় বিষয়টি জটিল হতে পারে। সে কিছু খেতে পারছে না। ডাক্তারা জানিয়েছেন, এর জন্য ৪ বছরের দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। আর শ্বাসনালীর গুলি অপসারণের জন্য দেশের বাইরে নেওয়া দরকার। ডাক্তারা এ মাসের ৩০ তারিখে আবার যেতে বলেছে।</p> <p>তিনি বলেন, সরকারে পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিজেরাই লাখ টাকার বেশি ব্যয় করে চিকিৎসা করাচ্ছি। তারা আর চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন কতে পারছেন না। ঢাকা থেকে একজন সমন্বয়ক কথা বললেও চিকিৎসার ভার কেউ নিচ্ছে না।</p> <p>তিনি চিকিৎসার সহায়তা চেয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেছন। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাননি। ছেলের এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন মা। এক মাসের বেশি সময় হলো ছেলে অসুস্থ।</p> <p>তিনি জানান, ছেলে বাম হাতে সবচে বেশি গুলি লেগেছে, মাঝে মাঝে তার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। ঠিকমত কিছু ধরতে পারে না। তার বাবা প্রবাসী হওয়ায় তাকে সব সামাল দিতে হচ্ছে। তিনি সন্তানের সু চিকিৎসার জন্য বর্তমান সরকারের দৃষ্টি কামনা করেন।</p> <p>এ প্রসঙ্গে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ জানান, ‘আমরা সাধ্যমত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসহ সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যারা মোটামুটি সুস্থ হয়েছেন তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া মাঝে মধ্যে ফলোআপ করা হচ্ছে।</p>