বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে তালা ঝুলছে। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। সাত মাস ধরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) বেতন বন্ধ থাকায় মাঠ পর্যায়ে প্রভাব পড়েছে বলে দাবি কর্মকর্তাদের।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে ১৯৯১ সাল থেকে সারা দেশে ইউনিয়নের গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়।
সে লক্ষ্যে এ উপজেলায় ৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হলেও ৫২টি ক্লিনিকে কর্মরত রয়েছে ৫২ জন সিএইচসিপি। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে প্রতিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ থাকায় নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েছে ক্লিনিকগুলো। কোনো কোনো কেন্দ্র সপ্তাহে দু-চারদিন খুললেও অধিকাংশ ক্লিনিক প্রায় সময়ই বন্ধ থাকছে। দূরদূরান্ত থেকে সাধারণ রোগীরা সেবা নিতে এসে চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বলইবুনিয়া ইউনিয়নের পাতাবাড়ীয়া কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রটি দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে মূল ফটকে তালা ঝুলছে। সিএইচসিপি জামিল হোসাইন সকালে কিছু সময় খুলে রেখেছিলেন। স্থানীয়রা বলছে, ১টা বাজলেই বন্ধ হয়ে যায়।
কিসমত জামুয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল থেকেই তালাবদ্ধ ছিল।
দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপি মিনারা খাতুন কেন্দ্রে অনুপস্থিত। শ্রেনিখালী আছিয়া খাতুন কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ। অনুরূপভাবে তালাবদ্ধ রয়েছে পুটিখালী ইউনিয়নের কেন্দ্রটিও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সপ্তাহে দু-তিন দিন খোলা থাকলে সিএইচসিপি নিয়মিত থাকছেন না। দ্বায়িত্ব পালন করছেন অন্য ব্যক্তি।
হোগলাপাশা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর কেন্দ্রটির চিত্র একই রকম। সিএইচসিপি কৌশিক সপ্তাহে দু-চার দিন কেন্দ্রে এলেও দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে মূল ফটকে তালা মেরে চলে যান।
নিশানবাড়ীয়ার বাদশারহাট কেন্দ্রটি দুপুর ১টায় তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। দুপুর ১টা বজলেই বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ কেন্দ্র।
এসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দেখভালের জন্য মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এইচআই) ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এএইচআই) দায়িত্বে থাকলেও তারা রয়েছেন নিস্ক্রীয়। এই কর্মকর্তারা কেন্দ্রগুলোতে দু-চার মাসেও পরিদর্শনে যান না। এ জন্য উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের বেহাল দশা, স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামের মানুষ।
গোবিন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি কৌশিক কুমার, পাতাবাড়ীয়া কেন্দ্রের জামিল হোসেনসহ একাধিকরা বলেন, 'সাত মাস ধরে বেতন ভাতা বন্ধ। কিভাবে চলব, পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে রয়েছি। তারপরও কেন্দ্রগুলো সচল রেখেছি। মাঝে মধ্যে দু-একদিন শারীরিক অসুস্থতা ও পারিবারিক কাজের জন্য বিশেষ কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ক্লিনিক বন্ধ থাকতে পারে।'
কমিউনিটি ক্লিনিকের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, ১৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌর সভায় ৫৬টি ক্লিনিকের জন্য মাঠ পর্যায়ে মাত্র দুজন কর্মকর্তা। যেখানে তিনজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক এবং ১৩ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক থাকার কথা সেখানে রয়েছে মাত্র দুজন। জনবল সংকট থাকার কারণে প্রতিটি কেন্দ্র সুনির্দিষ্টভাবে খোঁজ খবর নেওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা-বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। যদি কোনো ক্লিনিক বন্ধ রাখা হয় এ বিষয় খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সাত মাস ধরে সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ থাকায় মাঠ পর্যায়ে কেন্দ্রগুলোতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। মানবিক কারণে এ সময়ে সিমপ্যাথি দেখানো হচ্ছে, তেমন চাপ প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। বেতনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।