<article> <p style="text-align: justify;">টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশের বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পোশাকশিল্পে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং পরিবেশসম্মত টেকসই উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">২০১৩ সাল থেকে এই শিল্পটি একটি ব্যাপক নিরাপত্তা সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। উদ্যোক্তারা শিল্পের রূপান্তরকে সফল করার জন্য অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত নিরাপত্তায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন এবং বিপুল উদ্যোগ গ্রহণ করে শিল্পে নিরাপত্তার সংস্কৃতি উন্নত করেছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিএমইএ সব সময় সদস্য কারখানাগুলোকে নিবিড়ভাবে মনিটর করছে। সেই সঙ্গে নতুন সদস্য কারখানা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আইনের মৌলিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি ভবন নিরাপত্তা, অগ্নিনিরাপত্তা ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">পোশাকশিল্পে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা এবং রেমিডিয়েশন পর্যবেক্ষণ করার জন্য দেশে একক মনিটরিং সংস্থা হিসেবে আরএমজি সাসটেইনেবল কাউন্সিল (আরএসসি) গঠিত হয়েছে। আগে ব্র্যান্ডের অনুমোদন ছাড়া পোশাক কারখানাগুলো আরএসসিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারত না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এখন বিজিএমইএ/বিকেএমইএর অনুমোদনক্রমে ব্র্যান্ডের নমিনেশন ছাড়াই পোশাক কারখানাগুলো আরএসসিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে।</p> <p style="text-align: justify;">সাব-কন্ট্রাক্টিং কারখানাগুলোর জন্যও গাইডলাইন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্কৃতির চর্চায় আইএলও যুক্ত হয়েছে। আমরা আইএলওর সহযোগিতায় নিরাপত্তা বিষয়ে কারখানাগুলোর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও এ ব্যাপারে তাদের প্রশিক্ষণ  প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, যা বিজিএমইএর তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত হচ্ছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">লক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধু নিরাপদ শিল্প গড়ে তোলাই নয়, শ্রমিকদের কল্যাণের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১. তাদের অধিকারগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য ও তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য শ্রম আইন সংস্কার করা হয়েছে। ২. অনেক  প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা ন্যূনতম মজুরি ৫৬.২৫ শতাংশ বাড়িয়েছি ও তা বাস্তবায়ন করেছি। ৩. রপ্তানির বিপরীতে আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলে অর্থ জমা দিচ্ছি, যেখান থেকে শ্রমিকদের চিকিৎসায়, তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাকবলিত শ্রমিক পরিবারকে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা  প্রদান করা হচ্ছে। ৪. ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই কেন্দ্রীয় তহবিলে আমরা প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অবদান রেখেছি।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">৫. জিআইজেড ও আইএলওর সহযোগিতায় এমপ্লয়মেন্ট স্কিম পাইলট ভিত্তিতে পরিচালনা করছি, যার নজির বাংলাদেশের বাইরে কোথাও নেই। ৬. শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হয়েছে। ৭. ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালের মাধ্যমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। বিজিএমইএর মিরপুর হাসপাতালের কাজও এগিয়ে চলছে। ৮. বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে সেন্টার ফর ইনোভেশন, এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ প্রতিষ্ঠা করেছি। ৯. ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের সুবিধার্থে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য নিবন্ধনপ্রক্রিয়াটি একটি এসওপিসহ অনলাইন করা হয়েছে। শ্রম বিভাগে একটি হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে, যাতে নিবন্ধনসংক্রান্ত বিষয়ে শ্রমিকদের সহায়তা করা যায়। ১০. শ্রম আদালত এবং শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালতের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১১. আমরা পোশাক কারখানায় কাজ করা মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। বর্তমানে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে ৬০ জন নারী কর্মী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। ১২. আমাদের অনেক কারখানাই নিজ নিজ ভবনে শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মূল্যের দোকান, তাদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করছে। শিল্পে এ ধরনের আরো অনেক ভালো উদ্যোগের দৃষ্টান্ত রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">এসব উদ্যোগের কারণে বিগত এক দশকে পোশাকশিল্পে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, টেকসই উন্নয়ন ও শ্রমিকদের কল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অসাধারণ উন্নতি সাধিত হয়েছে। হংকংভিত্তিক কিমার সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী নৈতিক উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ।</p> <p style="text-align: justify;">নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা পরিবেশবান্ধব কারখানাও গড়ে তুলছি। আমাদের বর্তমানে ২১৪টি লিড সার্টিফায়েড কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে ৮০টি প্লাটিনাম রেটেড এবং ১২০টি গোল্ড রেটেড কারখানা। বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ২৩টি লিড সার্টিফায়েড কারখানার মধ্যে ২১টি বাংলাদেশে রয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন পরিচিতি এনে দিয়েছে। আমরা জলবায়ু বিষয়ে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার এবং জাতিসংঘ গৃহীত জলবায়ু পরিবর্তন উদ্যোগেও যুক্ত হয়েছি।</p> <p style="text-align: justify;">ডিউ ডিলিজেন্স বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ বিষয়ে কারখানাগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে বিজিএমইএতে রেসপন্সিবল বিজনেস হাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পোশাক কারখানাগুলোর ইএসজি পাফরম্যান্সের তথ্য সংগ্রহ ও  প্রকাশের জন্য একটি অনলাইন ইএসজি ডাটা ডিসক্লোজার প্ল্যাটফরমও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">আজকের দিনে বৈশ্বিক ব্যবসাগুলো সাসটেইনেবিলিটির পথে হাঁটছে। তাই আমরা পরিবেশের সুরক্ষায় সার্কুলার ফ্যাশন, নবায়নযোগ্য শক্তি আর জ্বালানি-দক্ষ প্রযুক্তিগুলোতেও বিনিয়োগ করছি। আরো টেকসই উপায়ে শিল্পের বিকাশের জন্য বিজিএমইএ টেকসই কৌশলগত রূপকল্প ২০৩০ গ্রহণ করে ইএসজি নীতি—এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল এবং গভর্ন্যান্সের ওপর দৃঢ়ভাবে জোর দিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">বিগত এক দশকে উদ্যোক্তা, শ্রমিক, সরকার, ব্র্যান্ড/ক্রেতা, উন্নয়ন সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট অংশীদার সবার সম্মিলিত প্রয়াসে তৈরি পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, টেকসই উন্নয়ন ও শ্রমিকদের কল্যাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে তা অব্যাহত রাখতে পোশাকশিল্প দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বে রোল মডেল। এটি শিল্পের জন্য গৌরবের বিষয়।</p> <p style="text-align: justify;">তবে আমরা জানি যে নিরাপত্তার বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর কোনো সুনির্দিষ্ট সমাপ্তি নেই। পেশাগত স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক উভয়কেই আরো সচেতন হতে হবে।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>লেখক : </strong>সদ্য সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ</p> </article>