<p style="text-align:justify">সাদিয়া আফরিন তৃষা, বয়স ১২ বছর, পড়ে ক্লাস সেভেনে। ওর বড় ভাই কামরুল আরেফিন কাঞ্চন পড়ে ক্লাস টেনে, বয়স ১৫ বছর। জেলা শহরে বালক বিদ্যালয়ে পড়ে ছেলেটি আর বালিকা বিদ্যালয়ে মেয়েটি। কাঞ্চন এখন একাই স্কুলে যায়, কিন্তু তৃষাকে নিয়ে যান ওর আম্মু।</p> <p style="text-align:justify">স্কুল থেকে ফিরে কিছু খেয়েই কাঞ্চন বাইরে যায় খেলতে আর তৃষা বসে টিভির সামনে বা মোবাইল নিয়ে। মেয়েরও যে খেলাধুলা প্রয়োজন, সেই কথাটি মায়ের কাছে গুরুত্বহীন। তাঁর কাছে মেয়ের নিরাপত্তার বিষয়টিই বড়। অর্থাৎ বাড়ির বাইরে কন্যাশিশু কম নিরাপদ।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সাবেক কৃষিমন্ত্রীর ভাই বদরুল আটক" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727663623-853b031a43495200d111d6f5239398a3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সাবেক কৃষিমন্ত্রীর ভাই বদরুল আটক</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/09/30/1430402" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">পরিবারে কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্য দৃশ্যমান। প্রাইভেট পড়াতেও ছেলের অগ্রাধিকার। লক্ষ করা যায়, খাওয়ার সময় তার মা বড় বা ভালো মাছটি তুলে দেন ছেলের পাতে, পোশাক কিনতে গেলেও প্রায় একই অবস্থা। পাড়া-মহল্লায় বখাটেদের উপদ্রব উদ্বেগজনক; কন্যাশিশুকে নিয়ে মা-বাবার উৎকণ্ঠার শেষ নেই।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে নানা শঙ্কা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727665027-6a67c2870c9d940ea2cebccff3a8f8e8.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে নানা শঙ্কা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/09/30/1430407" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এসএসসি পাস করতে না করতেই দরিদ্র মা-বাবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান। বাল্যবিবাহ; অতঃপর বছর শেষে অপুষ্টিতে ভোগা মা, সমাজের কোনো কাজেই আসে না।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/30-09-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" height="210" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/30-09-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" width="350" />প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ পালন করা হয়। শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালিত হয় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস হিসেবে। এর বাইরে প্রতিটি দেশ নিজেদের সুবিধামতো জাতীয়ভাবে আরেকটি দিন কন্যাশিশু দিবস পালন করে।</p> <p style="text-align:justify">ডটার্স ডে হঠাৎই কয়েক বছর ধরে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এটি জাতিসংঘের নির্ধারিত দিবস না।  ১৯৯০ সালে কন্যাশিশু দশক নির্ধারিত হয়। দশকের শেষ বছরে ২০০০ সাল থেকে বেসরকারিভাবে দিবসটি পালন শুরু হয়। ২০০৩ সালে মন্ত্রণালয় সার্কুলার দিয়ে এই দিনটিকে সরকারিভাবে পালনের কথা ঘোষণা করে। বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের রাষ্ট্রগুলো প্রতিবছর ১১ অক্টোবরে পালন করে। এই দিবসকে মেয়েদের দিনও বলা হয়। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবরে প্রথম এই দিবস পালন করা হয়। জাতীয় কন্যাশিশু দিবসের তাৎপর্য কিন্তু ব্যাপক। তাদের সুরক্ষা, শিক্ষার অধিকার, পুষ্টি, ন্যায়প্রাপ্তির জন্য আইনি সহায়তা, চিকিৎসা সুবিধা, বৈষম্য রোধ, নির্যাতন থেকে রক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনসহ সব ধরনের বৈষম্য দূর করাই এর লক্ষ্য।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শেয়ারবাজারে লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727665124-c22febb739158ebfd895fcb43d8f3d03.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শেয়ারবাজারে লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘরে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/stock-market/2024/09/30/1430408" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">প্রতিনিয়তই কন্যাশিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে নিম্নবিত্ত কোথাও নিরাপদে নেই, সারা জীবন তারা নিরাপত্তাহীনতার ভেতর দিয়ে বড় হতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাওয়াদাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছেদ, এমনকি সামাজিক মর্যাদায় কন্যাশিশুরা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। শিশু সুরক্ষার জন্য শিশু নীতিমালা, শিশু অধিকার আইন থাকলেও তা দেশে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কন্যাশিশুদের ক্ষেত্রে এই আইনি সুবিধা সহজলভ্য নয়। অনেকে বলেন, কন্যাশিশুর সমতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি পরিবার থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু যে সংসারে কন্যাসন্তান কাঙ্ক্ষিত নয়, সেখানে তাকে অভিশাপ বা বোঝা মনে করা হয়। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারে কন্যাশিশু চরম অবহেলার শিকার। এ ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, মানসিক নির্যাতনে নারীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রীয় সুবিধাবঞ্চিত অশিক্ষিত মানুষ স্বভাবতই অসচেতন। তাদের জন্য কন্যাশিশু জন্মের পরপরই সরকারি বিশেষ সহায়তা প্রদান আবশ্যক।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="খারাপ শেয়ারে বন্দি আইসিবি উত্তরণে চাই নতুন ফান্ড" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727666375-87ddd23fa98272f0c0e937fd12a3bd70.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>খারাপ শেয়ারে বন্দি আইসিবি উত্তরণে চাই নতুন ফান্ড</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/business/2024/09/30/1430410" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা সর্বাধিক। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ কন্যাশিশু। একই সময়ের মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৮১ এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৩৩ কন্যাশিশু। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন’ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ধর্ষিতাদের মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হয় ১৩৪ জন, গণধর্ষণের শিকার হয় ৩৩ জন এবং প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু ৯ জন। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী ভেদে কেউ বাদ যায়নি এই জঘন্যতম বর্বর আচরণ থেকে। ধর্ষণ ছাড়াও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে কন্যাশিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতা। তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিশুরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে—এটি মোটেও কাম্য নয়। পরিবার, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রের ওপরও এর দায়ভার এসে পড়ে। এসব আত্মহত্যার পেছনে মূলত হতাশা, পারিবারিক মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনাকে দায়ী করা হয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পরিপত্রের অপেক্ষায় সংস্কার কমিশনের প্রধানরা!" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727666490-d6719e9f4c0e5db0d608d72698827fad.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পরিপত্রের অপেক্ষায় সংস্কার কমিশনের প্রধানরা!</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/09/30/1430411" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। ২৮(১) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। ২৮(২) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। এ ছাড়া কন্যাশিশু তথা নারীদের প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহ রোধ, শিক্ষার ব্যবস্থা করাসহ নিরাপত্তায় সরকার নানা বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে। তার পরও কন্যাশিশুরা নিরাপদে নেই। এর কারণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে দুস্তর পার্থক্য রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণকামী রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থায় জনগণ যে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়, তা আমাদের দেশে কখনো ছিল না। ফলে সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অধিকসংখ্যক মানুষ দিনরাত গাধার খাটুনি খেটেও মানসম্পন্ন খাবার, পোশাক, শিক্ষা ও বাসস্থান পায় না। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসা ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুর হারও বেশি। দেশে কুশাসনের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চলে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাব ও বেকারত্বের কারণে অনেক মা-বাবা কন্যাশিশুর প্রতি যত্নবান হতে পারেন না।</p> <p style="text-align:justify">কন্যাশিশুর জন্য বছরে একটি দিন তেমন কোনো উপকারে আসে বলে মনে হয় না। তবু হতদরিদ্র প্রায় অশিক্ষিত যে মা হাজারো সমস্যা-সংকট সামলে তাঁর কন্যাশিশুটিকে আগলে রেখেছেন, তাঁকে তো কুর্নিশ জানাতেই হয়। তাদের সচেতন করার জন্যই দিবসটি যথাযথভাবে পালন করা প্রয়োজন। তারা জানুক—এই দেশ তারও, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সব উপকরণের ওপর তারও অধিকার আছে।</p> <p style="text-align:justify">লেখক : সাংবাদিক</p> <p style="text-align:justify">rezaul.bd1956@gmail.com</p>
