<p>পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। তাদের পুষ্টির অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হলে গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ওপর বলে জানিয়েছেন বক্তারা।</p> <p>বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক এবং লিন প্রকল্পের সহ-আয়োজনে ‘অ্যাডভান্সিং নিউট্রিশন কমিটমেন্ট ফর চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক বক্তারা এসব কথা বলেন। </p> <p>অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২, অনুযায়ী বাংলাদেশ ১২১টি দেশের মধ্যে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। দেশের ১৮.৮ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। দেশের ১২ কোটিরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের সামর্থ্য নেই। ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ ৩৬.৭ শতাংশ (১৬.৮ মিলিয়ন)। ৫২.৩ মিলিয়ন মানুষ মাঝারি বা মারাত্মকভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ প্রেক্ষাপটে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা অপুষ্টিতে ভুগছে তাদের জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও টেকসই পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে, বিশেষ করে মা ও শিশুর যথাযথ পুষ্টি সম্প্রসারণে ২০১৮ সাল থেকে ‘লিডারশিপ টু এনশিওর এডিকিওট নিউট্রিশন- লিন’ প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে।</p> <p>গোলটেবিল বৈঠকে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি; অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রুহুল আমিন তালুকদার। গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন গেইন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার এবং সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সুশাসন, অধিকার ও ন্যায্যতা কর্মসূচির উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা। এ ছাড়াও নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।</p> <p>সভাপতির বক্তব্যে মহসিন আলী বলেন, পরিবেশসম্মত কৃষি উৎপাদন না হলে নিরাপদ খাদ্য হবে না। আর নিরাপদ খাদ্য না হলে সকলের পুষ্টি নিশ্চিত হবে না। তাই পুষ্টি বিষয়ক আলোচনা শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্যদেরও এতে সম্পৃক্ত করতে হবে। সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করেই স্মার্ট বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. মশিউর রহমান বলেন, ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির আগে যেখানে আমরা পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারতাম না সেখানে এখন সরকারের সহায়তায় প্রচুর উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটেছে। শুধু ভাতা বা খাদ্য সহায়তা দিয়ে পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, দরকার মানুষের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। শুঁটকি যদি পুষ্টির অন্যতম উপকরণ হয়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় গবেষণার মাধ্যমে পুষ্টি নিশ্চিতকরণে সরকার কাজ করবে।</p> <p>চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস বহুমাত্রিকভাবে চিহ্নিত করে বাস্তাবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সকল জেলা, উপজেলা, মৌজায় সমন্বয়ের মাধ্যমে পুষ্টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে তা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে।</p> <p>অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পরিবর্তন আনয়নে ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় সচেতনতামূলক বার্তাগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেই সরকারের লক্ষিত ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া সম্ভব। আর স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে আমাদের পুষ্টিসমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে হবে। </p> <p>পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাকির হোসেন আকন্দ বলেন, পার্বত্য এলাকার পুষ্টির অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হলে এখানকার জনগণকে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। </p> <p>স্বাগত বক্তব্যে ড. রম্নদাবা খন্দকার বলেন, জাতীয় জীবন থেকে অপুষ্টি দূর করতে চাইলে এমন একটি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার যা টেকসই হবে। আগামীর বাংলাদেশকে আমাদের সকলের হাতে হাত রেখে উদ্যোগ নিতে হবে।</p> <p>মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, গত ২০ বছরে পুষ্টির দিক থেকে বিশেষ করে বাংলাদেশ শিশু পুষ্টির উন্নতিতে বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। তা সত্ত্বেও জাতীয় ও বিভাগীয় অবস্থার তুলনা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিশুদের পুষ্টির অবস্থা তুলনামূলকভাবে খারাপ। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবহারের সচেতনতার অভাবের কারণে শিশুর শারীরিক বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অপুষ্টিজনিত কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বিশেষ করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার শিশুদের বয়স অনুযায়ী যে উচ্চতা ও ওজন থাকার কথা সে অনুযায়ী কম আছে। বয়স অনুযায়ী শিশুদের যে উচ্চতা থাকার কথা তা জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে আছে ১০% সেখানে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় আছে যথাক্রমে মাত্র ৯% এবং ৪%। জাতীয় ও বিভাগীয় জেলাগুলোতে নিরাপদ খাবার পানি পাচ্ছে যথাক্রমে ৯৯% ও ৯৭% জনগণ, এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা যথাক্রমে মাত্র ৫৯% ও ৫৭%।</p>