<p>রোজার অর্ধেক চলে যাওয়ায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটার বাজার। ফ্যাশন হাউসসহ বিপণিবিতানগুলো সাজিয়ে বসেছে নতুন নতুন নকশার পোশাক, জুতা ও অন্যান্য সামগ্রী। বিক্রিও হচ্ছে ভালোই। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব ধরনের পোশাকের দাম অনেক বেশি।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও উত্তরার ঈদ বাজারে সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এসব এলাকার বিপণিবিতানে উচ্চ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত ক্রেতাদেরই ভিড়। বিক্রেতারা বলছেন, ১০ রোজার পর থেকেই বিক্রি বেড়েছে।</p> <p>গুলশান-২-এ অবস্থিত পিংক সিটি শপিং মলে মূলত গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকার বাসিন্দারা কেনাকাটা করেন।</p> <p>এই শপিং মলের নিচতলায় থাকা ইনফিনিটি মেগা মলের বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের ১৫ থেকে ২০ ধরনের শার্ট এসেছে। এগুলোর দাম আড়াই হাজার থেকে চার হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া নতুন নকশার পাঞ্জাবি এসেছে ৩০টি। দাম চার হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকার মধ্যে।</p> <p>ইনফিনিটিতে থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ ধরনের, যার দাম তিন হাজার ৮৫০ টাকা থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে। শাড়ি এসেছে ৪০ থেকে ৪৫ ধরনের, দাম আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকার মধ্যে।</p> <p>ইনফিনিটির বিক্রয়কেন্দ্রের সিনিয়র সেলসম্যান কালের কণ্ঠকে জানান, গত দুই-তিন দিন ধরে বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। আর শেষের দিকে এই বিক্রি চার গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বললেন, সুতাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও শার্টের দাম বেড়ে গেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।</p> <p>পিংক সিটি শপিং মলে রয়েছে টপ টেন ফ্যাব্রিকস অ্যান্ড টেইলারের শাখা। টপ টেনের দাবি, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত—সবার বাজেটের শার্ট, প্যান্টের কাপড় পাওয়া যায় তাদের কাছে। রোজার আগে ও শুরুতে সবচেয়ে ভালো বিক্রি হয়েছে বলে জানান এই শাখার ম্যানেজার সুমন সরকার। এখন বিক্রি কিছুটা কমে গেছে। কারণ ক্রেতারা ঈদের আগমুহূর্তে তৈরি পোশাক কেনার দিকেই মনোযোগ দেন। সুমন সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আমাদের ক্রেতা তেমন নেই। ঈদের যে একটা প্রভাব সেটা দেখছি না।’</p> <p>সুমন সরকার বললেন, ‘আমাদের এখান থেকে সব ধরনের ক্রেতা পোশাক নিতে পারবেন। যদি একজন রিকশাচালকও আসেন তিনিও একটি পোশাক কিনে নিতে পারবেন। আমাদের এখানে শার্ট বা প্যান্টের পিস সাড়ে ৪০০ বা ৫০০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে।’</p> <p>উত্তরার জসীমউদদীন এলাকায় অবস্থিত আরএকে শপিং কমপ্লেক্স। এই ভবনের দোতলায় রয়েছে ক্যাটস আইয়ের একটি বিক্রয়কেন্দ্র। ফ্যাশনসচেতন তরুণদের কাছে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডটির এই শাখায় ২৫০টি নতুন ডিজাইনের শার্ট এসেছে। দাম দুই হাজার ৩৯০ টাকা থেকে তিন হাজার ২৯০ টাকা পর্যন্ত। পাঞ্জাবি এসেছে ২০ থেকে ২৫ ধরনের। দাম পড়বে দুই হাজার ৫৯০ থেকে তিন হাজার ৭৫০ টাকার মধ্যে। জিন্স আছে ১৫ থেকে ১৮ রকমের। দাম দুই হাজার ৪৯০ থেকে দুই হাজার ৫৭৭ টাকার মধ্যে।</p> <p>ক্যাটস আইয়ের এই শাখার ব্যবস্থাপক মো. রেজা বলেন, ‘রোজার বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। গত দুই-তিন দিন ধরে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে। গতবার ঈদের মধ্যে যেমন বিক্রি করেছিলাম, এখন সে রকমই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকার বিক্রি হচ্ছে। সামনে আরো বাড়বে। শার্টের দাম কিছুটা বেড়েছে। আগে যে শার্টের দাম দুই হাজার ২৯০ টাকা ছিল, সেটা এখন দুই হাজার ৬৯০ টাকা।’</p> <p>আরএকে শপিং কমপ্লেক্সে শার্ট কিনতে এসেছিলেন শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বললেন, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানে গিয়েছি। সব জায়গাতেই দাম বেশি। কিছুদিন আগেও যে শার্ট কিনেছি ৭০০ টাকায়, তা এখন এক হাজার টাকা দেখা যাচ্ছে। এর পরও কিনতে হচ্ছে। ব্র্যান্ডের পোশাকগুলোর দাম অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে।’</p> <p>বনানীর একটি পোশাকের দোকানের সামনে কথা হয় পেশায় চাকরিজীবী তৃষ্ণা ইসলামের সঙ্গে। তিনিও বললেন, ‘এবার দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। আমাদের তো সীমিত আয়। যেমন—একটা থ্রি-পিসের দাম ছয়-সাত হাজার টাকা। এটা কেমন দাম! এ মানের পোশাক গতবারও চার হাজারের মধ্যে কিনতে পেরেছিলাম।’</p>