<article> <p style="text-align: justify;">দেশে হিমোফিলিয়া আক্রান্ত অনুমিত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার। এর মধ্যে শনাক্ত ও নিবন্ধিত রোগী তিন হাজার। যারা নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে থাকে, অর্থাৎ মোট রোগীর মাত্র ১৮ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনাক্ত রোগীদের অনেকে গুরুতর পরিস্থিতিতেও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। কারণ রাজধানীকেন্দ্রিক সীমিত চিকিৎসাব্যবস্থা ও এই রোগের ওষুধ সহজলভ্য নয়। চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে বেশির ভাগ মানুষ চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। এতে কম বয়সেই বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হয়। যারা বেঁচে থাকে, তাদের অনেকে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সকল রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করুন’।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">চিকিৎসকরা বলছেন, ‘হিমোফিলিয়া রক্তের একটি বিশেষ রোগ। সাধারণত জিনগত বা জন্মগতভাবে মানুষ এই রোগ বহন করে। আমাদের শরীরে কোথাও কেটে গেলে, রক্তপাত হলে স্বাভাবিকভাবেই তা জমাট বাঁধে। কিন্তু হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধতে সময় লাগে। অনেক সময় ধরে রক্তক্ষরণ চলতে থাকে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এর কারণ, রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রোটিন ফ্যাক্টর। হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এ প্রোটিনের ঘাটতি থাকে। সাধারণত ছেলেরা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর মেয়েরা হিমোফিলিয়ার জন্য দায়ী জিন বহন করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে X-linked disease, যা মানুষের শরীরের এক্স ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বংশপরম্পরায় চলতে থাকে। তাই মা যদি তাঁর এক্স ক্রোমোজোমে এই জিন বহন করেন, তবে তাঁর ছেলেসন্তানরা হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। আর মেয়েসন্তানরা এর বাহক হতে পারে। তাই পারিবারিক ইতিহাস জানা জরুরি।</p> <p style="text-align: justify;">গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগের হিমোফিলিয়া ট্রিটমেন্ট ক্লিনিকে (এইচটিসি) সন্তানের চিকিৎসা নিতে আসা ফরিদপুরের  আক্তার হোসেন বলেন, ‘ছেলের যখন ব্যথা শুরু হয়, দুজনেও ধরে রাখতে পারি না। তার কান্না যে দেখে তাঁর চোখে পানি এসে যায়। টাকা তো এ পর্যন্ত কম খরচ করিনি। ছেলে ভালো হয় না। আর কাছের কোনো হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেব, সে ব্যবস্থা নেই। ঢাকা এসে চিকিৎসা নিতে হয়।’</p> <p style="text-align: justify;">চিকিৎসকের ভাষায়, হিমোফিলিয়া হলো রক্তের একটি জিনগত বিশেষ রোগ। রোগটি মারাত্মক পর্যায়ে গেলে কোনো আঘাত ছাড়াও রক্তক্ষরণ, মাংসপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থল ফুলে প্রচণ্ড রকম ব্যথা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১০ জন মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত। সে হিসাবে দেশে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা হওয়ার কথা প্রায় ১৭ হাজার। অথচ শনাক্ত রোগী মাত্র তিন হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৮২ শতাংশই এখনো শনাক্তের বাইরে।</p> <p style="text-align: justify;">বিএসএমএমইউয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্লিডিং ডিস-অর্ডার রোগীর চিকিৎসা যদি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শুরু করা না যায় তাহলে মাংসপেশি, অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণ হয়ে সে জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে যায় এবং প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে। এ জন্য চিকিৎসা করতে হলে রোগীর নিজ এলাকায় চিকিৎসাব্যবস্থা থাকা দরকার। সেটি আমাদের নেই।’</p> <p style="text-align: justify;">অধ্যাপক ডা. মো. সালাউদ্দিন শাহ বলেন, ‘আমাদের দেশে ফ্যাক্টরগুলো আসে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়ার মাধ্যমে। এ ছাড়া দেশে কিছু সেন্টার রয়েছে, যেখানে হেমাটোলজি বিভাগ রয়েছে। যেমন—বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, শিশু হাসপাতাল ও ল্যাব ওয়ান ফাউন্ডেশন। এখানে অলাভজনকভাবে রোগীদের ফ্যাক্টর ও প্লাজমা দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পাওয়া যায়।</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, ‘হিমোফিলিয়া রোগী কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। সাধারণত তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত থাকে। এদের বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরে কাউন্সেলিং প্রয়োজন হয়। সেই কাউন্সেলিং-ব্যবস্থাও আমাদের নেই। এর প্রতিরোধের উপায় হলো ডায়াগনসিস, চিকিৎসা, আরেকটা হলো রিহ্যাবিলিটেশন, মানসিক সাপোর্ট ও থেরাপির ব্যবস্থা।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রান্তিক পর্যায়ে শুধু ব্লাড ট্রান্সফার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ডায়াগনসিস, শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শনাক্তকরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি আরো কমবে।’</p> </article>