<article> <p style="text-align: justify;">দুপুর আড়াইটা। বৈশাখের তপ্ত গরম। বঙ্গবন্ু্ল আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে বিশাল মাঠে তখন দর্শনার্থীদের আনাগোনা। মেলার মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে কিছুদূর গেলে হাতের ডানে গরুর প্যাভিলিয়ন। সেখানে বিভিন্ন স্টলে রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা দুই শতাধিক গরু। সবার নজর কাড়ছে কেরানীগঞ্জের রাবিবা অ্যাগ্রো খামারের গরু ‘রাজকুমার’। সাদা-কালো রঙের প্রায় এক হাজার কেজি ওজনের ষাঁড়টি দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় আসা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গরুটি দেখতে অনেক সুন্দর। তবে দামটা অনেক বেশি। আসলে পরিবার নিয়ে কোরবানির পশুর দাম যাচাই করতেই আসা। অনেক গরম হলেও এখানকার পরিবেশ কোরবানির হাটের চেয়ে সুন্দর। কয়েকটি খামারের মোবাইল ফোন নাম্বার নিয়ে রেখেছি। পরে যোগাযোগ করব।’</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর শেষ দিনে এমন চিত্র দেখা যায়। গত বৃহস্পতিবার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় কেন্দ্রীয় প্রদর্শনীতে ভিন্ন ভিন্ন ভ্যালু চেইন ভিত্তিক প্রায় ৪০০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি, ওষুধসামগ্রী, টিকা, প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ সরঞ্জাম, মোড়কসহ পণ্য বাজারজাতকরণ প্রযুক্তি ইত্যাদির স্টলও রয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া সাতটি প্যাভিলিয়নে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, এলআরআই, কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার অংশ নিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">রাবিবা অ্যাগ্রো খামারের কর্মী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের রাজকুমারের ওজন এক হাজার কেজির বেশি। ৫০ লাখ টাকা দাম চাইছি আমরা। দামে পড়লে কোরবানির আগে বিক্রি করে দেবেন মালিক। ভারতীয় জাতের এই গরুসহ মোট ১৩টি গরু নিয়ে আমরা এসেছি।’</p> <p style="text-align: justify;">প্রদর্শনীতে নিজ নিজ উপজেলা থেকে উন্নত জাতের এবং অধিক উৎপাদনশীল জাতের গবাদি পশু গাভি, বাছুর, ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাঁস, দুম্বা, কবুতর, শৌখিন পাখি, পোষা প্রাণী ও বিভিন্ন প্রযুক্তি স্থান পায়। দেখা যায়, কোরবানির আগে এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক দর্শনার্থী গরুর দাম ও মানের বিষয়ে যাছাই করে নিচ্ছেন।</p> <p style="text-align: justify;">কথা হয় কাওলা এলাকা থেকে আসা ইউসুফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশু দেখতে এলাম। কোনো গরু পছন্দ হলে খামারির সঙ্গে কথা বলে রাখব। যেহেতু ঈদের প্রায় দুই মাস বাকি, তাই দাম ও মান দেখে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করিনি।’</p> <p style="text-align: justify;">এ সময় রাজবাড়ীর সেলো ভিস্তা ডেইরি প্রজেক্ট লিমিটেডের কর্মী আবু হায়দার বলেন, ‘মোট ছয়টি গরু নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছি। এর মধ্যে একটি বিক্রি করে দিয়েছি। যে দামে বিক্রি করমু বইলা ঠিক করছিলাম, হেই দাম পাওয়ায় দিয়া দিছি। আমাগো খামারে এক শর উপরে ষাঁড়, গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন কোরবানির পশু আছে। ঈদ হাট শুরু হইলে আবার ঢাকায় নিয়া আসমু।’</p> <p style="text-align: justify;">মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর অন্যতম লক্ষ্য হলো প্রাণিসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি, দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি, ক্ষুদ্র খামারি ও উদ্যোক্তাদের গবাদি পশু উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের মাধ্যমে জনগণ গবাদি পশু পালনের আধুনিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে পারবে।</p> <p style="text-align: justify;">খানিকটা সামনে গিয়ে আরেকটি প্যাভিলিয়নে দেখা মেলে ভুট্টি গরুর। ভি২৬ স্টলে কথা হয় লালবাগের ভুট্টি গ্রাউন্ড নামক খামারের কর্মচারী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার গরুটি তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা বিক্রি করতে চাই। আমাদের খামারে ৪০টি ভুট্টি গরু রয়েছে।’ গাভি, বাছুর, ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাঁস, দুম্বা, কবুতর, শৌখিন পাখি ও পোষা প্রাণী স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীস্থল থেকে বের হতে চোখে পড়ে ঘোড়ার অনেকগুলো স্টল। ময়মনসিংহ থেকে সাজনু হর্স ফার্মের কর্মী জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন ছয়টি ঘোড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, তিন থেকে চার লাখে এসব ঘোড়া বিক্রি হবে। পাশে চোখে পড়ে বেড়িবাঁধ এলাকার সাদিক অ্যাগ্রোর ভি৯ নম্বর স্টলে দুটি উট। বিক্রেতা জানান, প্রদর্শনীতে তাঁরাই দুটি উট এনেছেন এবং দুটি উট ২৫ লাখ করে ৫০ লাখে বিক্রি করে দিয়েছেন। ঈদের আগে ক্রেতা খামারির কাছ থেকে উট দুটি নিয়ে আসবেন।</p> <p style="text-align: justify;">গতকাল শেষ দিনে প্রদর্শনীতে গুণগত মান, জাত, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, আকার, অবদান, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, বাজারজাতকরণ, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রভাব, সার্বিক পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৯৩টি পুরস্কার, ক্রেস্ট এবং অংশগ্রহণকারীকে সনদ প্রদান করা হয়। শেষ দিনে বিশেষ আকর্ষণ ছিল গবাদি পশুর র‌্যাম্প শো।</p> <p style="text-align: justify;">প্রদর্শনীতে ফুড সেফটি কর্নারে নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুত ও করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ/গুদামজাতকরণ, পণ্য পরিবহন ও গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ পর্যন্ত সার্বিক পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং দুধ, ডিম, মাংসজাত নিরাপদ খাদ্যপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় করা হয়। প্রদর্শনীটিতে সহযোগিতায় ছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।</p> </article>