ভারতে পাচার করা হয় নারী, বিনিময়ে আসে গরু!

  • ► পাচারে সহযোগিতায় ইজি বাইকচালক ৫০০, নৌকা চালক ৩০০ টাকা পেতেন
মাসুদ রানা
মাসুদ রানা
শেয়ার
ভারতে পাচার করা হয় নারী, বিনিময়ে আসে গরু!
সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় মা-বাবা ও চার বোনের সঙ্গে থাকতেন বৃষ্টি (ছদ্মনাম)। টানাটানির সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় চাকরি খুঁজছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে ফেসবুকে নদী আক্তারের সঙ্গে পরিচয়। নদী তাঁকে পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে ভারতে পাচার করেন।

বৃষ্টিকে সেখানে অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

বৃষ্টিকে ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। পাঁচ মাস পর তিনি বেঙ্গালুরুর বন্দিদশা থেকে পালান। ২০২১ সালের মে মাসে বৃষ্টি কলকাতা হয়ে সীমান্ত পথে দেশে ফেরেন।

এ ঘটনায় একই বছর ১৯ জুন পাচার করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও আইনে মামলা হয়।

বৃষ্টির এই ঘটনা শুধু একজন-দুজনের নয়। সংঘবদ্ধ পাচারচক্র এমন আরো অনেক তরুণীকে চাকরি দেওয়াসহ নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীকে ভারতে পাচারে করে বিনিময়ে সেখান থেকে গরু নিয়ে আসা হয়।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার দুই বান্ধবী মরিয়ম (ছদ্মনাম) ও মুক্তার (ছদ্মনাম) ক্ষেত্রেও বৃষ্টির মতো একই ঘটনা ঘটে। পাচারকারীরা মূলত এসব তরুণীর আর্থিক দুর্বলতার বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে।

ভারতে মানবপাচারের ঘটনায় ২০২১ সালে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা পৃথক চারটি মামলার তদন্ত শেষে সম্প্রতি ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, সিটিটিসির পরিদর্শক মো. সেলিম আকতার ও উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আব্দুর রউফ তালুকদারের দেওয়া অভিযোগপত্রে আসামি রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় ও আসামি নদী আক্তার ওরফে ইতি ওরফে নূরজাহানসহ ৫১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আরো ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও তাঁদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি৷ এ জন্য তাঁদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে আসামি রুবেল সরকার রাহুল ও আশরাফুল ইসলাম রাফি এখন কারাগারে। ২৮ আসামি পলাতক ও অপর আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

ভারতে মানবপাচারে জড়িত অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন মো. ইসরাফিল হোসেন খোকন, মো. তরিকুল ইসলাম, মো. আল আমিন হোসেন, আব্দুল হাই ওরফে সবুজ, সাইফুল ইসলাম, বিনাস সিকদার, মো. আমিরুল ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম রাফিসহ অন্যরা।

ইজি বাইকে বহন করে ৫০০ টাকা :

অভিযুক্তদের একজন মো. তরিকুল ইসলামের বাড়ি বেনাপোল। পেশায় ইজি বাইকচালক। তার ইজি বাইকে নদী নামের এক নারী যাতায়াত করতেন। পরে তিনি জানতে পারেন, নদী নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। ভারতে যাতায়াত আছে। নদীর মাধ্যমে তরিকুলও নারী পাচারে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তরিকুল বলেন, ‘নদী, ইসরাফিল হোসেন,  খোকন, মামুন ও বিনাশ মিলে ভারতে মেয়ে পাচার করতেন। তাঁরা ঢাকা কিংবা অন্য কোনো স্থান থেকে মেয়েদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে ধোঁকা দিয়ে নিয়ে আসতেন। পরে খোকনের মাধ্যমে আমি মেয়েদের বুঝে নিয়ে আল আমিন নামের একজনের বাড়িতে পৌঁছে দিতাম। আমাকে প্রতিটি মেয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে দেওয়া হতো। আমি শুধু এই কাজটুকু করতাম। এ পর্যন্ত ২০-২৫ জন মেয়েকে আল আমিনের বাড়ি দিয়ে এসেছি।’ 

নারী পাচার করে গরু আনা হয় :

মানবপাচার চক্রের সদস্য আল আমিন হোসেনের বাড়ি যশোরের শার্শায়। স্বল্প শিক্ষিত এই ব্যক্তি জমিজমা সব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পাচারে সক্রিয় হন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করলে তিনি আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। ভারতে তাঁর নিয়মিত যাতায়াত আছে।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘ভারতে আমি মেয়ে নিয়ে যেতাম এবং গরু নিয়ে ফিরতাম। আমার সঙ্গে মূলত শফিকুল, আক্তারুল, অলি, জয়ন্ত, শহীদ কাজ করে এবং তারা সবাই আমার গ্রামের। নদী চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকা থেকে মেয়েদের এনে ভারতে পাচার করতেন।’

আল আমিনের তথ্য মতে, নদীর সঙ্গে ইসরাফিল হোসেন, খোকন, বিনাশ ও মামুন পাচারের সঙ্গে জড়িত। সীমান্তের ওপারে সবুজ, সাগর, বিউটি ও হৃদয় বাবুর যোগাযোগ ছিল। খোকনের মাধ্যমে তিনি এসব নাম জেনেছেন। তারা মেয়েদের ভারতে নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে রেখে খারাপ কাজ করাত বলে তিনি শুনেছেন।

আল আমিন বলেন, ‘ঢাকা বা বিভিন্ন স্থান থেকে মেয়েদের বর্ডারে নিয়ে এলে আমিরুল, আব্দুল হাই ও সিরাজুল আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তরিকুলের ইজি বাইকে করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিত। মেয়েদের আমার বাড়িতে রাখতাম। বিনিময়ে জনপ্রতি ২০০ টাকা পেতাম। খোকন নিজে কিংবা সাইফুলের মাধ্যমে বিকাশ করত।

পুলিশ এলাকায় ঢুকলে নেছার উদ্দিন ও সাইফুল সতর্ক করে দিত। আমরা একটা মেয়ে ভারতে পাচার করতে পারলে জনপ্রতি এক হাজার টাকা পেতাম এবং নেছার উদ্দিনকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা দিতে হতো। আমি প্রায় ৫০-৬০ জন মেয়েকে বর্ডার দিয়ে পার করেছি।’

৩০০-৫০০ টাকা পেতেন নৌকার চালক :

শার্শা থানার ভুলাটে মো. আমিরুল ইসলামের বাড়ি। তিনি নৌকা বা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌযানে করে ভারতে পারাপারের কাজ করতেন৷ এ জন্য তিনি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পেতেন। গ্রেপ্তারের পর জবানবন্দিতে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কমবেশি ৭০ থেকে ৮০ জনকে ভারতে পার করেছি। নেছার মেম্বারের সহযোগিতায় মেয়েদের আমরা ভারতে পলক মণ্ডল, বকুলের কাছে পৌঁছে দিতাম। পারাপারে কোনো মেয়ে ধরা পড়লে নেছার মেম্বার ছাড়িয়ে আনতেন।’

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা দেশের বাইরে থাকে, তারা স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে মানবপাচার করে থাকে। এ ক্ষেত্রে মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অনেকে জামিন পেয়ে ফের এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাই ভারতে পাচারের ঘটনায় করা মামলাগুলোর তাড়াতাড়ি বিচার করা উচিত।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সালমা আলী বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধ আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নজরদারি নেই। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সংঘবদ্ধ চক্র নারীদের ভারতে পাচার করে। এদের সঙ্গে সরকারের লোকজনও জড়িত। অত্যন্ত দ্রুত সময়ে বিচার শেষ করে দোষীদের সাজা নিশ্চিত করতে হবে। 

ডিএমপির (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মামলার মেরিট অনুযায়ী তদন্তকাজ করি৷ মানবপাচারে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, আইনগত দিক বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

২ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ শতাংশ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
২ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৩৭ শতাংশ

দেশে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েই চলেছে। হত্যা ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গত দুই বছরে ৩৭ শতাংশ বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পেলেও সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাতেগোনা কয়েকটি গবেষণা থাকলেও কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা রোধে যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়, তারও বাস্তাবায়ন নেই। ফলে ক্রমে মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে হত্যাযজ্ঞের মতো বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোর।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে। ২০২৪ সালে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ছিল ২৩৭টি।

এসব গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা অন্তত দুই হাজার ৩৮২ জন। ২০২২ সালে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ছিল ১৭৩টি, সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। অর্থাৎ দুই বছরে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৬৪টি বা ৩৭ শতাংশ। একই সময়ে এসব গ্রুপের সদস্য বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার, যা আগের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
তবে পুলিশ সদর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে কিশোর অপরাধীদের পৃথক কোনো ডেটা পাওয়া যায়নি।

আইন বিশেজ্ঞরা বলছেন, কিশোর অপরাধ ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও ছিল। তবে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপত্তি ও বিস্তৃতি নজরে আসার বিষয়টি খুব বেশি দিনের নয়।

আরো পড়ুন
আন্দোলন নয়, জনগণ চায় নির্বাচন

আন্দোলন নয়, জনগণ চায় নির্বাচন

 

সরকারি তথ্য ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন বলছে, মাদক সেবন, চুরি ও ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে সমাজের বড় বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এসব শিশু-কিশোর। 

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ জার্নালে প্রকাশিত ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে।

ছয় বছরে এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬ শতাংশ। ২০২০ সালে অপরাধে জড়িত শিশুদের ৬১ শতাংশই ছিল ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে, যা ২০১৪ সালে ছিল ২৪.৭ শতাংশ।

২০২৩ সালে জার্নাল অব এমার্জিং টেকনোলজিস অ্যান্ড ইনোভেশন রিসার্চে (জেইটিআইআর) প্রকাশিত মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের ‘স্টাডি অব চিলড্রেন ক্রাইমস এট আরবান এরিয়াজ ইন বাংলাদেশ’ গবেষণায় বলা হয়, অপরাধে শিশুদের সম্পৃক্ততা বর্তমান সময়ে সত্যিই উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মুষ্ঠিমেয়দের কর্মকাণ্ডে সমাজ আক্রান্ত হচ্ছে, যা অদূর ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর।

আরো পড়ুন
একনজরে আজকের কালের কণ্ঠ (৯ এপ্রিল)

একনজরে আজকের কালের কণ্ঠ (৯ এপ্রিল)

 

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে শিশুদের ৭৫ শতাংশই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাদকাসক্তি, মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, আগ্নেয়াস্ত্র বহন, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে এসব শিশু। অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হলো দরিদ্রতা ও শিক্ষার অভাব। অধিকাংশ শিশু ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সে অপরাধে যুক্ত হয়। যেসব অপরাধের জন্য শাস্তি অনিবার্য, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তাদের উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানো ছাড়া বড় কোনো শাস্তি দেওয়া হয় না। কিশোর অপরাধের ধরন ও পর্যায় বিবেবেচনায় একটি দেশের আইনের শাসনের মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়।

গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, মাদক ব্যবসার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অধিকাংশ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে কিশোর গ্যাংগুলোর অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রায়ই ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা, বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। তবে এসব অপরাধের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জমি দখল, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি বিভিন্ন থানায় মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের পৃথক তালিকায় এমন অনেক কিশোর অপরাধীর নাম উঠে এসেছে। 

আরো পড়ুন
আজকের নামাজের সময়সূচি, ৯ এপ্রিল ২০২৫

আজকের নামাজের সময়সূচি, ৯ এপ্রিল ২০২৫

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লবী থানায় মাদক বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর পৃথক তালিকায় অন্তত দুই ডজন কিশোর অপরাধীর নাম ওঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়া বাঁধ ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসার অন্যতম হোতা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য মুসা (২১)। সে নিজে আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজার থেকে মাদক এনে ব্যবসা করে। কিশোর অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী সরদার সামিউল ইসলাম সামি (২০) ও অনিক ওরফে নাইক্কা অনিক (২২)। তারা প্রত্যেকেই এক থেকে একাধিক মামলার আসামি। এ ছাড়া অস্ত্রধারী কিশোর অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম মো. অনিক ইসলাম (২১)। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আট মামলা ও একটির ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আশিকুল ইসলাম শান্ত (১৯)।

এশিয়ান জার্নাল অব সোশিয়লজিক্যাল রিসার্চে ২০২১ সালে প্রকাশিত ‘প্রসেস অব ক্রিমিনালাইজিং স্ট্রিট চিল্ড্রেন ইন বাংলাদেশ; এন এমপায়রিকাল স্টাডি ইন দ্য সিটি অব ঢাকা’ গবেষণায় বলা হয়, অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশুদের ৯০.৫ শতাংশই মাদক ব্যবসা এবং ৩০.১ শতাংশ হত্যার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ছিনতাইয়ে জড়িত ৬৬ শতাংশ ও চুরির সঙ্গে জড়িত শতভাগ শিশু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। কারণ কিশোররা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই আসবে না। এ ছাড়া অপরাধী চক্রও তাদের ব্যবহার করে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার বা উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠালেই সব সমাধান হবে না। এ জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। রাতারাতি এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব না।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঢাকার সঙ্গে প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা বাড়াতে চায় মস্কো

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঢাকার সঙ্গে প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা বাড়াতে চায় মস্কো
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। উভয় পক্ষ দুই দেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য পারস্পরিক সংকল্প ব্যক্ত করেছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাদ দিয়ে ঢাকার রুশ দূতাবাস এসব জানায়।  

রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্নেল জেনারেল আলেকজান্ডার ফোমিনের সঙ্গে মস্কোতে একটি কার্যকর বৈঠক করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

 

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। রাশিয়া ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য পারস্পরিক সংকল্প ব্যক্ত করেছে।

বৈঠকটি উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্তব্য

আন্দোলন নয়, জনগণ চায় নির্বাচন

শেয়ার
আন্দোলন নয়, জনগণ চায় নির্বাচন

নির্বাচন না আন্দোলন, এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে নানা আলোচনা, হিসাবনিকাশ। নির্বাচন কমিশন আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্ররা এতে সন্তুষ্ট নয়।

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে বিএনপিসহ মিত্ররা নতুনভাবে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে। বিএনপির দাবি, তারা নির্বাচনের পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজ করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দলটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে। দলটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে কথা বলবে বলেও জানিয়েছে।
সুনির্দিষ্ট রূপরেখা না পেলে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এটাকে যদি আপনারা আন্দোলন মনে করেন তাহলে সেটি আন্দোলন।’ ঈদের পর থেকেই বিএনপির মধ্যে এক ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছে।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণার জন্য সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বিএনপি। তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো দ্বিমত নেই। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উত্তরণে নির্বাচনের বিকল্প নেই, এ কথা যেমন ঠিক, তেমন এও সত্য, আমাদের বর্তমান বাস্তবতা অনুভব করতে হবে। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। দীর্ঘ ১৭ বছর তারা বিভিন্ন রকম নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রাম করছে।
এ সময় বিএনপির বিরুদ্ধে হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। তার পরও বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি প্রতিপক্ষ। বিএনপি ভাঙার বহুবার চেষ্টা হয়েছে। রাজনীতি থেকে বেগম জিয়াকে মাইনাসের চেষ্টা হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এ সবকিছুর পরও বিএনপির দৃঢ় মনোবল নিয়ে জনগণের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রাজপথে থেকেছে। কাজেই বিএনপির যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা, তার যৌক্তিকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আবার আন্দোলন শুরু করুক, এটা জনগণ চায় না। দেশ এখন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয়।

বিএনপির রাজনীতির অন্যতম দর্শন হলো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। এখন আন্দোলনের আগে বিএনপিকে দেশের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এক কঠিন সময় পার করছে। এ কঠিন সময়ে বিএনপির আন্দোলন গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে দেশের রাজনীতিতে অনভিপ্রেত একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল নয়। ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগসহ পতিত স্বৈরাচারের দোসররা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় রাজপথে আন্দোলনের সূচনা হলে পতিত স্বৈরাচার পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তারা রাজনীতির মাঠে আবার অনুপ্রবেশ করবে এবং ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবে। এ বাস্তবতাটা বিএনপিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এর ফলে গণ অভ্যুত্থানের যে চেতনা এবং আকাঙ্ক্ষা তা ব্যাহত হতে বাধ্য। দেশের রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্য। এ ঐক্যে ফাটল ধরুক এমন কোনো কর্মসূচি বিএনপির মতো সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল নেবে না, এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। পুলিশ বাহিনী এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি। বিভিন্ন স্থানে খুন, রাহাজানি, ছিনতাই কিছুটা কমলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আর বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম অনভিপ্রেত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এ রকম পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী দিনরাত একাকার করে পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারপর মব, লুটপাটও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বাড়ছে খুন, ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ। এ রকম একটি ভঙ্গুর সময় বিএনপির মতো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল যদি আন্দোলনে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। এটি কোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল করতে পারে না বলেই জনগণ বিশ্বাস করে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে একটা কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতিতে একটি বড় ধাক্কার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পোশাক খাতের বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি পাচ্ছে। কেউ কেউ কার্যাদেশ স্থগিত করছে। এ বাড়তি শুল্ক সামাল দেওয়াটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। এতে পোশাক খাতে একটা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এমনিতেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শ্রমিক ঈদে বেতন-বোনাস পাননি। পোশাক খাত যখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন মার্কিন এ শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের হুমকি। তা ছাড়া সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্রটাও ভালো না। আমাদের অর্থনীতিতে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন প্রবাসী ভাইবোনেরা, যারা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি মোটামুটি একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রেখেছেন। কিন্তু আমরা সবাই জানি, শুধু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দিয়ে একটি দেশের অর্থনীতি সচল এবং ভালো থাকতে পারে না। এ কারণে আমাদের রপ্তানি আয় যেমন বাড়াতে হবে, তেমন দেশি শিল্প উদ্যোক্তা এবং বেসরকারি খাত সচল করতে হবে। কিন্তু বেসরকারি খাত এখন পর্যন্ত সচল হয়নি। সরকার তাদের আস্থায় নিয়ে আসতে পারেনি। অনেক বেসরকারি উদ্যোক্তা নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা জটিলতার কারণে কেউ কেউ ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন না। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এ অবস্থা অর্থনীতির জন্য অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো ধুঁকছে। অর্থনীতির গতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এ সময় আইএমএফের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছে। তারা বাংলাদেশের জন্য যে ঋণ বরাদ্দ করেছিল তার কিস্তি ছাড় দেবে কি না তা নিয়ে এখন সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণখেলাপি কমিয়ে আনা এবং কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। আইএমএফের ঋণ পেতে বাংলাদেশকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের দিকে যেতে হতে পারে। এ ধরনের সংস্কার অর্থনীতির ওপর সাময়িকভাবে হলেও একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে কারও কারও শঙ্কা। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের কিছুটা লাগাম টেনে ধরলেও চালের দাম নিয়ে শঙ্কা কাটেনি। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়তির দিকে। এ পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোয় অর্থনীতির গতিপথ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে এগোচ্ছে। শিল্পকারখানাগুলোয় বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহের স্বাভাবিকতা নিয়েও সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে।

আন্তর্জাতিক পরিম লেও বাংলাদেশ এখন একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো নতুন করে কথা বলা শুরু করেছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করা হয়েছে বটে, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিম লে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে একটি মনগড়া অপপ্রচার এখনো সচল। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদীদের আস্ফালন লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তির সামনে দাঁড় করানোর চেষ্টা দৃশ্যমান। বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানকে বদলে কেউ কেউ এটিকে জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করছে। এ ধরনের ঘটনা সামনের দিনগুলোয় আরও বাড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরাজিত ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি নতুন করে আন্দোলন করে তাহলে একদিকে যেমন হিযবুত তাহ্রীরের মতো উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নতুন করে ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিএনপির আন্দোলন জুলাই বিপ্লবের সব অর্জন নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে বিএনপির আন্দোলনের ফলে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় সেটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিম লে একটা নতুন চাপের মধ্যে ফেলবে বলে অনেকে মনে করেন। এ বাস্তবতায় বিএনপি যা-ই করুক না কেন, তাদের দেশের কথা চিন্তা করতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বিএনপির দায়িত্বই এখন সবচেয়ে বেশি। গত আট মাসে বিএনপি অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তারা সরকারের সঙ্গে একদিকে যেমন আলাপ-আলোচনা করছে, অন্যদিকে বিরুদ্ধমতের সঙ্গে যুক্তিভিত্তিক বিতর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মানুষ প্রত্যাশা করে। আর সে কারণেই বিএনপির ধৈর্যহারা হলে চলবে না। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ ১৭ বছর তারা ধৈর্য ধরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের এ রকম কোনো মনোভাব দেখা যায়নি যে, তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকতে চায় বা এ রকম কোনো অভিপ্রায় আছে, বরং প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সবাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়ার কথা বলছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু বাংলাদেশই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও একজন শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। কাজেই তাঁর ওপর আস্থা রাখতেই হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার ওপর আস্থাশীল থাকার কথা বলেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার ওপর যদি বিএনপি আস্থা হারায় এবং রাজপথে আন্দোলন করে সেটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য হবে এক ধরনের অশনিসংকেত। এর ফলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ যেমন ব্যাহত হবে, তেমন বাংলাদেশ পথ হারাবে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নিশ্চয় এ রকম কোনো কিছু করবে না।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন। 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

একনজরে আজকের কালের কণ্ঠ (৯ এপ্রিল)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

সর্বশেষ সংবাদ