ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রামে ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে স্থানীয় সৌদি প্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালুর ছেলে রিফাত মিয়াকে (১৯) অপহরণ করার ১৮ ঘণ্টার মধ্যে যৌথবাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীর ছেলে অপহৃত রিফাতকে উদ্ধার করে। এ ঘটনার সঙ্গে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল ৫টার দিকে জেলার কসবা থেকে রিফাতকে উদ্ধারসহ এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ১২টা) রিফাতকে কসবা থেকে নবীনগরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছিল।
এদিকে রিফাতের বাবা ব্যবসায়ী মালু মিয়ার অভিযোগ, খোদ পুলিশের উপস্থিতিতেই আগের দিন সোমবার (৭ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে দুর্বৃত্তরা নিজেদেরকে ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে তার ছেলে রিফাতকে নির্বিঘ্নে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তবে অপহরণের চার ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয় বলেও রিফাতের বাবা সৌদি প্রবাসী শহীদুল ইসলাম মালু কালের কণ্ঠের কাছে রাতে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি (মালু) পরদিন মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) নবীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও (এজাহার) দায়ের করেন। এ ঘটনা নিয়ে গোটা জেলায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া রিফাতের বাবা সৌদি প্রবাসী শহীদুল ইসলাম মালু পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, সোমবার রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ১৭/১৮ জনের একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র দল আমার লাউর ফতেপুরের বাড়িতে হানা দেয়। এসময় তারা আমার বাড়ির তিনটি গেট ভেঙে ঘরে ঢুকে। আমি দুর্বৃত্তদের আগমন টের পেয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে সামান্য অদূরে থাকা পাশের জমিতে লুকিয়ে থাকি। তবে অন্ধকারের মধ্যে জমিতে লুকিয়ে থেকেও আমি প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে আমার বাড়িতে যে তাণ্ডব চালায় তা প্রত্যক্ষ করি।
শহীদুল ইসলাম মালু বলেন, ‘সংঘবদ্ধ ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তখন নিজেদেরকে ‘ডিজিএফআই’ পরিচয় দিয়ে বাড়িতে আমাকে খুঁজতে থাকে। এসময় তারা আমার ঘরের ভেতর তছনছ করে স্ত্রীর কাছ থেকে আলমারীর চাবি নিয়ে ঘরে থাকা ২৭ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ২ লাখ টাকা ও আমার ছোট ছেলে রিফাতকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।
এই ফাঁকে আমি জমিতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় নবীনগর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক স্যারকে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। ওসি স্যার তখন আমাকে বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। তবে পুলিশ পাঠাচ্ছেন।
এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে দুই দারোগা আবদুল মন্নাফ ও রাম কানাই সরকারের নেতৃত্বে ৭/৮ জন পুলিশ আমার বাড়িতে আসেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো- আমি দেখলাম, পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বদলে পুলিশ সেসময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে শলা পরামর্শ করল। এ সময় আমার সামান্য দূরে থাকা দারোগা মন্নাফ সাহেবকে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করি। কিন্তু তিনি আমার ফোন না ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলাপচারিতা করে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই নগদ টাকা, স্বর্ণ ও আমার ছেলেকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে আমার বাড়ি থেকে চলে যায়। এদের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও আমার বাড়ি থেকে চলে যায়।
ব্যবসায়ী মালু আরো বলেন, ‘এ ঘটনার ঠিক চার ঘণ্টা পর অপহরণকারীরা আমার ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে আমার কাছে ফোন করে নগদ ৩ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে।
পরদিন মঙ্গলবার আমি নবীনগর থানায় গিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখিতভাবে একটি অভিযোগ (এজাহার) দাখিল করি। ওই এজাহারে সন্ত্রাসীদের যে তিনজনকে আমি চিনেছি, তাদের তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ জনকে আসামি করেছি। ওই তিন আসামি হলেন লাউর ফতেপুর গ্রামের কামাল মিয়া ও কামাল খন্দকার এবং বাড়িখলা গ্রামের আবু কালাম আজাদ।
সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালু দুঃখ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ আমার বাড়িতে আসার পরপরই যদি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক না করে এদেরকে গ্রেপ্তার করতেন। তাহলে আমার ২৭ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ২ লাখ টাকা রাতেই ফেরত পেতাম। কিন্তু কেন পুলিশ উপস্থিত থেকেও আমার ছেলেকে অপহরণ করার সুযোগ করে দিলেন, আমি সেটিই বুঝলাম না।’ তবে ঘটনার ১৮ ঘণ্টার মধ্যে যৌথবাহিনী যেভাবে আমার ছেলেকে উদ্ধারসহ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে, সেজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার (এসপি) এহতেশামুল হক সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘অপহরণ হওয়া যুবক রিফাতকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং একজনকে আটকও করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আপনারা (সাংবাদিক) সহসা সবই জানতে পারবেন।’