প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা যাবে না কেন, প্রশ্ন আলী রীয়াজের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা যাবে না কেন, প্রশ্ন আলী রীয়াজের
ছবি : কালের কণ্ঠ

সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে যিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সেই প্রধানমন্ত্রীকে কেন সংসদে অপসারণ করা যাবে না- এমন প্রশ্ন তুলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। 

আজ শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনে আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ : সুশাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স নামের একটি সংগঠন।

যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সেখানে এক সংসদে তিনবার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করা হয়েছে।

কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত সেই সংসদ চলমান ছিল। পৃথিবীর সব জায়গায়, যেখানে এই পদ্ধতিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সেখানে প্রধানমন্ত্রী অপসারণ করা যায়। আমাদের এখানে যায় না। আমি কোনো ব্যক্তির কথা বলছি না।
একটা ব্যবস্থার কথা বলছি।’  

তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালে যেদিন সংবিধান গৃহীত হয়েছে সেদিন থেকেই দেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ব্যবস্থা ছিল না কেন? এখনো সে ব্যবস্থা নেই। সংবিধানে ১৭ বার সংশোধনী আনা হয়েছে।

কিন্তু এক জায়গায় স্থির। এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা।’

১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা নেওয়া এবং ৯০-এর অভ্যুত্থানের পর আবার প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল একমত হয়ে পাস করেছিল। রাষ্ট্রপতির হাতের সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাও পেলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও পেলেন।

প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করা যাবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রীকে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাকে অপসারণের পথ রাখা হয়নি এবং সংসদ সদস্যদের তার অধীন করে রাখা হয়েছে।’

১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের সমালোচনা করে সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণের পথ তৈরি করা হয়। এ থেকে উত্তরণে শুধু ব্যক্তির অপসারণ নয়, কাঠামোগতভাবে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও গণতন্ত্রায়ণের যে সুযোগ রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে, সেই জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই কাঠামোগত পরিবর্তন অকস্মাৎ হবে না। সবার অংশীদারির মধ্য দিয়ে সেটা সম্ভব। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেটাই একমাত্র পথ।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘যেকোনো দেশে সাধারণত তিনভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়- সেনাশাসনের মাধ্যমে, এক দলীয়ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দুটি দুর্বলতার কারণে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরশাসন তৈরি হয়। একটি হলো প্রাতিষ্ঠানিক আরেকটি হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মূল জায়গায় আছে সংবিধান।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণরা, ছাত্ররা। তার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন রকম শক্তি জড়িত হয়েছিল। তাই আকাঙ্ক্ষার ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। সাধারণভাবে কেবল ফ্যাসিবাদী শাসন বা একজন ফ্যাসিবাদী শাসককে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য এই আন্দোলন হয়নি। তবে এটাও সত্য এই আন্দোলনে যুক্তদের কারো কারো আকাঙ্ক্ষা ওইটুকুই ছিল বা এখনো আছে।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, দুটি বিষয় স্পষ্ট, যেখানে ঐকমত্য আছে। সেগুলো হলো স্বৈরতন্ত্র যাতে আর ফেরত না আসে এবং একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। 

তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয়ে ভিন্নমত থাকবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। যে জায়গায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শুধু ব্যক্তির অপসারণ নয়, কাঠামোগতভাবে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন ও গণতন্ত্রায়ণের যে সুযোগ রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে সে জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে এক থাকতে হবে।’ 

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। এ ছাড়া আলোচনা করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান, সিডিজিজির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবু মুহাম্মদ নিপার, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির।

মন্তব্য

একনজরে আজকের কালের কণ্ঠ (০৭ মার্চ)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা আইসিসিতে পাঠানোর আহ্বান টবি ক্যাডম্যানের

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা আইসিসিতে পাঠানোর আহ্বান টবি ক্যাডম্যানের
বাঁ থেকে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও টবি ক্যাডম্যান। ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মামলা নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

বসনিয়া, কসোভো, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইউক্রেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ মামলায় কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই আইন বিশেষজ্ঞ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি এই সুপারিশ তুলে ধরেন।

বৈঠকে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এ ছাড়া, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ছত্রছায়ায় থাকা অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে পরিপূরক বিচারব্যবস্থার আওতায় আইসিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

বৈঠকের শুরুতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) কার্যক্রমের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাইব্যুনালটি পূর্ববর্তী সরকার, বিশেষত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে সংঘটিত নৃশংসতার বিচার করছে।

বৈঠকে বিভিন্ন আইনি কাঠামো, নতুন সংযোজন ও অতীতের স্বৈরাচারী শাসন থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

জি৩৭ চেম্বার্সের প্রধান টবি ক্যাডম্যান আইসিটির আইনি ও বিধিবদ্ধ কাঠামো সংশোধনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা দরকার, যাতে এটি আগের স্বৈরাচারী শাসনের ধারাবাহিকতা মনে না করা হয়।’

এ ছাড়া, মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত বিষয় ও প্রমাণ গ্রহণের নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার বিষয়েও আলোচনা হয়, যাতে ন্যায়বিচার ও সুবিচারের সর্বোচ্চ মান বজায় থাকে।

অধ্যাপক ইউনূস আইসিটি প্রসিকিউশন টিমের কাজের প্রশংসা করে বলেন, ‘তাদের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের জানা উচিত ১,৪০০ শিক্ষার্থী, বিক্ষোভকারী ও শ্রমিকদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল কে এবং মূল অপরাধীরা কারা। জাতিসংঘের তদন্ত দল শেখ হাসিনা সরকারের আসল চেহারা উন্মোচন করেছে। এখন আমাদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

বৈঠকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা ও চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারের পদক্ষেপ, আইসিটি ও প্রসিকিউশন টিমের সম্পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত করা, সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদান, অভিযুক্তদের জন্য সুবিচার নিশ্চিতে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এবং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া, আগের সরকারের আমলে লুটপাট হওয়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নিয়েও পর্যালোচনা করা হয়।

বৈঠকের শেষে অধ্যাপক ইউনূস টবি ক্যাডম্যানকে উপহার ও নতুন বাংলাদেশের প্রতীকী বার্তা ‘আর্ট অব ট্রায়াম্ফ : গ্রাফিতি অব বাংলাদেশস নিউ ডন’ বইটি উপহার দেন, যা বাংলাদেশের নতুন যুগের আশা ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

মন্তব্য

আলোচিত-১০ (৬ মার্চ)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

সেই বাচ্চা উৎপাদন করে হাসিনার উপকার কারা করছেন : ফারুকী

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সেই বাচ্চা উৎপাদন করে হাসিনার উপকার কারা করছেন : ফারুকী
সংগৃহীত ছবি

গণঅভুত্থানের পর দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে পারস্পারিক মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা গেছে। এবার এ বিষয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাইয়ে যখন হাসিনার খুনী বাহিনির বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন তখন কি পাশের জন ছেলে না মেয়ে, দাঁড়িওয়ালা না দাঁড়ি ছাড়া, হিজাব না জিন্স, বিএনপি না জামায়াত- এই খোঁজ নিয়েছিলেন কেউ?’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাই এসেছিল বহু মত, বহু পথ, বহু স্বভাব, বহু পোষাকের দেশ হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্যই। এখানে মোরাল পুলিশিংয়ের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয়নি।

আরো পড়ুন
মাদক উদ্ধারে গিয়ে ডাকাত সন্দেহে পুলিশ কর্মকর্তা আটক, অতঃপর...

মাদক উদ্ধারে গিয়ে ডাকাত সন্দেহে পুলিশ কর্মকর্তা আটক, অতঃপর...

 

‘দাঁড়ি-টুপি-বোরখাকে যখন স্টিগমাটাইজ করা হয়েছিলো তখন প্রতিবাদ করেছিলো বাংলাদেশ। আজ উল্টো দিকে যখন স্টিগমাটাইজ করা হচ্ছে তখনও বাংলাদেশকে প্রতিবাদ করতে দেখে আশাবাদী হই।’

তিনি আরো বলেন, ‘সকল প্রকার মিসোজিনিকে সোজা বাংলায় “না”! আগেও না, আজকেও না, ভবিষ্যতেও না। ধন্যবাদ।

পোস্টে তিনি আরো সংযুক্ত করেন, ‘হাসিনা কুমিরের যে বাচ্চা বারবার দেখিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলো, সেই বাচ্চা উৎপাদন করে তার উপকার কারা করছেন?’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ