আইন অনুযায়ী জন্ম ও মৃত্যু ৪৫ দিনের মধ্যে শতভাগ নিবন্ধন করার কথা বলা হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ তা মানছে না। এই সময়ে ৫৪ শতাংশ শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা হলেও মৃত্যু নিবন্ধন হচ্ছে ১ শতাংশের কম। পেনশন, উত্তরাধিকার ছাড়া কেউ মৃত আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যু নিবন্ধন করতে চায় না।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানী পল্টনে ফারস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসে এক সাংবাদিক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশে সিআরভিএস শক্তিশালীকরণে গণযোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ক তথ্য প্রচার এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের প্রভাবশালী গল্প নিয়ে এ আয়োজন করে নারী মৈত্রী।
কর্মশালায় সাংবাদিকদের বিতরণ করা কাগজপত্রে দেখা যায়, ১৬ কোটির বেশি মানুষের জন্ম নিবন্ধন ডাটাবেইসে সংরক্ষিত আছে এবং প্রতি মুহূর্তে এই সংখ্যা বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ সংখ্যা শিগগিরই ২৫ থেকে ৩০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) তথ্যে আরো বলা হয়, মৃত্যু নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় আইন থাকা সত্ত্বেও প্রক্রিয়াটিতে এখন পর্যন্ত অনেক বিড়ম্বনা ও হয়রানি করা হয়।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের প্রভাব, মৃত্যু সম্পর্কিত আচার-অনুষ্ঠান এবং দাফন প্রথা, প্রমাসনিক বাধা মৃত্যু নিবন্ধনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন নারী মৈত্রী’র নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি বলেন, জন্ম, মৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, পেনশন, ভাতা সুবিধার ক্ষেত্রে নিবন্ধন গুরুত্ব বহন করে। জন্ম নিবন্ধন শিশুদের আইনি পরিচয় প্রতিষ্ঠা করে। এর পাশাপাশি তার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই দিনের অভিযানে ৪ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
তিনি বলেন, নারী মৈত্রী বিশ্বাস করে একটি কার্যকর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন এবং সিভিল রেজিস্ট্রেশন ও ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) মূল ধারার আলোচনা ও গণমাধ্যমে যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বাংলাদেশের মিডিয়া কাভারেজ ও সিআরভিএস অ্যাডভোকেসির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি মিডিয়ার নীতিগত সংস্কারের ওপর প্রভাব বিস্তারের গুরুত্ব উল্লেখ করে কিছু সফল উদাহরণও তুলে ধরেন।
কর্মশালায় নারী মৈত্রীর প্রকল্প ব্যবস্থাপক লায়লা আরিফা খানম এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেসি অফিসার আনিকা আনজুম ঐশী সিআরভিএস এবং এর সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব সম্পর্কে ধারণা দেন, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিস বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নজরুল ইসলাম সাম্প্রতিক সিআরভিএস সংস্কার এবং চলমান সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করেন।
তিনি সরকারি সংস্থা এবং গণমাধ্যম সংস্থার মধ্যে আরো সুসংগঠিত সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যাতে জনগণের জন্য সিআরভিএস পরিষেবার সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পায়।
কর্মশালায় বক্তারা কার্যকর নিবন্ধনের জন্য কিছু সুপারিশ করেন। এর মধ্যে রয়েছে জন্ম নিবন্ধনে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্রিয় অংশগ্রহণ। অর্থাৎ হাসপাতালে জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন। বিনা খরচে নিবন্ধের বিধান জারি, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণকারী বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা, স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি প্ল্যাটফরম এবং ধর্মীয় নেতাদের জড়িত করা।