<p>স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তার মূল কারিগর কারা? নিঃসন্দেহে এরা হলেন, বাংলাদেশের অগণিত শ্রমজীবী মানুষ। এরাই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।</p> <p>প্রথমেই বলতে হয়, বাংলার কৃষি শ্রমিকদের কথা। মাঠে ময়দানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তাঁরা দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করেছেন। দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা। এই মৌলিক নিরাপত্তাটি না থাকলে দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যেত। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তটি তাঁরাই পূরণ করেছেন। </p> <p>এরপর আছেন শিল্প শ্রমিক। কলকারখানায় উদয়াস্ত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে তাঁরা সচল রেখেছেন। বিশেষ করে বলব, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের অগণিত নারী শ্রমিকদের কথা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তাঁদের কঠোর শ্রমের ফলেই বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প একটি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। </p> <p>সবশেষে বলব, অগণিত  দক্ষ এবং অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের কথা। যারা তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর দেশে, কঠিন পরিবেশের মধ্যে রাত দিন কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা প্রবাসে থেকে দেশের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।</p> <p>মোদ্দা কথা হল, অগণিত শ্রমজীবী মানুষের সম্মিলিত কঠোর পরিশ্রমের ফলেই বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করছে।  আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক উন্নয়নশীল দেশকেই ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বভাস দিয়েছেন। <br /> অথচ আমাদের দেশে শ্রমজীবী মানুষদের যে সামাজিক সম্মানটুকু প্রাপ্য ছিল, তার ন্যূনতমটাও তাঁরা পান না। অর্থনৈতিকভাবেও তাঁরা বঞ্চনার শিকার। দেশে শ্রমিক তাঁর শ্রমের মূল্য ও মর্যাদা পান না। প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে এবং বিদেশে নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হন। আদম ব্যাপারীদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যান। অনেকে অত্যাচারিত হয়ে ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। অনেকে ফিরে আসেন লাশ হয়ে। </p> <p>বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি এই উন্নতির যারা মূল চালিকাশক্তি তাদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়ন এখনো হয়নি। তাঁরা এখনো সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী।</p> <p>আজ মহান মে দিবসের অঙ্গীকার হোক, শ্রমিকের নিশ্চিত অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকার। শ্রম শোষণ বন্ধ হোক। সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য রইল শ্রদ্ধা ও শুভ কামনা।</p>