<article> <p style="text-align: justify;">নদীর জলে নৌকায় ভেসে আছে জীবন। নদীতে নৌকায় ঘর-সংসার। জীবন-জীবিকা সব নৌকায়। আর পেট বাঁচানোর লড়াই করে মাছ শিকার করে। আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচে জীবন। বর্ষায় ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস। আবার শীত মৌসুমে হাড়-কাঁপানো শীতের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। নদীতে মাছ শিকার করে যা পাওয়া যায় তাতে সংসার চালানো দায়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বছরজুড়ে লজ্জা ঢাকতে পরিধানের কাপড় কেনা হয় দায়সারাভাবে। সাবান-তেলের ব্যবহার তাদের কাছে যেন বিলাসিতা। অভাবের কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার আনন্দ এদের স্পর্শ করতে পারে না। এভাবেই দিন-মাস-বছর যায় ভাসমান জনগোষ্ঠী মান্তা সম্প্রদায়ের। যেখানে মাছের সন্ধান বেশি সেখানে নৌকা নোঙর করে দু-চার মাস বসবাস করে। পরে আবার স্থান পরিবর্তন করে নৌকা নিয়ে। স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় এ মানুষগুলো অনেকেই ভোটার হতে পারে না। তাই সরকারি সব সুবিধা থেকেও এরা বঞ্চিত। বঞ্চিত হয় দানশীল লোকদের দান-দক্ষিণা থেকেও।</p> </article> <p style="text-align: justify;">এবারের হাড়-কাঁপানো শীতে ৭০ মান্তা পরিবারকে খুঁজে বের করেছেন বসুন্ধরা শুভসংঘ বাউফল শাখার সদস্যরা। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগি খালে নোঙর করা ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৭০টি কম্বল বিতরণ করেছেন তাঁরা।</p> <article> <p style="text-align: justify;">পঙ্গু আশরাফ আলী সরদার বলেন, ‘আমরা তো ভাসা মানুষ। কেউ আমাগোরে জিগায় না। নদীতে মাছ নাই। এ্যাহন অভাব আমাগো নৌকায় লাইগ্যাই থাহে। ভাই খাওনে খুব কষ্ট অয়, কাপড় কিন্যা শীত ঢাকমু ক্যামনে? এই কঠিন শীতে আমাগো আতে (হাতে) একটা কোম্বল দেওয়া মানুষগুলো ফেরেশতার মোতো। আল্লাহর বিশেষ হুকুম ছাড়া তো আমাগোরে কেউ কিছু দিতে পারে না। মাছও পাই আল্লাহর হুকুমে। আইজ এই কোম্বল পাইছি আল্লাহর হুকুমে। এই শীতে কোম্বল দিয়া বসুন্ধরা আমাগো যে উপকার করছে, দোয়া করি আল্লায় হ্যাগোরে আমাগো পাশে রাহুক সব সময়।’ </p> <p style="text-align: justify;">মান্তা পরিবারের বৃদ্ধা কদভানু বলেন, ‘এত দিন দেখছি তরের মাইস্যে (মূল ভূখণ্ডের মানুষ) কোম্বল পায় আরো কত কিছু পায়। আমরাও এ্যাহন মানুষের কাতারে পরিছি। এই লইগ্যা আমাগোরেও মানুষ মোনে কইরগ্যা কোম্বল দেছে। বুড়া বয়সে আইজ বোঝলাম আমরা মানুষ অইছি। যেই বসুন্ধরা আমাগোরে কোম্বল দিয়া শীতের তন গরমের ব্যবস্থা করছে আল্লায় হেগোরে সব সময় আগলাইয়া রাহুক।’ </p> <p style="text-align: justify;">একটা কম্বল হাতে পেয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে আনন্দে চোখের পানি ঝরল মান্তা পরিবারের বৃদ্ধ নুর মোহাম্মদের। তিনি বলেন, ‘আহা রে লঙ্গি আর ছিঁড়া খাতা পইগ্যা থাহি। আইজ গায়ে কোম্বল গায় দিয়া ঘুমামু। ভাসা মানুষের পাশে মানুষ আছে আইজ বোঝলাম।’ এসব কথা বলতে বলতে চোখের আনন্দাশ্রু ঝরছিল বৃদ্ধ নুর মোহাম্মদের।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/February/03-02-2024/2/kalerkantho-ss-2a.jpg" height="362" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/February/03-02-2024/2/kalerkantho-ss-2a.jpg" width="1000" /></p> <p style="text-align: justify;">সোমবার ওই বগি খালে নোঙর করে থাকা মান্তা জনগোষ্ঠীর শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল পৌঁছে দেন বাউফল বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মু. হুমায়ুন কবির, উপদেষ্টা প্রভাষক এ এস এম এনামুল হক, ডা. এ এস এম সায়েম, মো. কামরুজ্জামান খান ফিরোজ, প্রভাষক মো. অহিদুজ্জামান সুপন ও কৃষিবিদ প্রভাষক সুইন আহম্মেদ।</p> <p style="text-align: justify;">বসুন্ধরা শুভসংঘ বাউফল উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. মারনুচ তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোর্শেদ আরিফ, সহসভাপতি মো. কামরুল হাসান, মো. আরিফুর রহমান জুলহাস, মো. রেজাউল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফাত হোসেন জিসান ও খায়রুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল হোসেন এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক  মো. সাহেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিহাদুল ইসলাম সিকদার, কোষাধ্যক্ষ সাইফুজ্জামান সাইফুল, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মৌ দেবনাথ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক সানজানা খান সিথী, সহসমাজকল্যাণ সম্পাদক রাকিবা আক্তার, আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক রুকাইয়া ইসলাম পায়েল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. কাইমুর রহমান খান সবুজ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. মুদাচ্ছির, সদস্য মো. তানভির হোসেন, মো. রাকিবুল হাসান, মো. ইলিয়াস, মো. মুবিন মোল্লা, মো. জোবায়ের হোসেন, মো. অপু খান, ইব্রাহিম হাসান, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. রিফাত গাজী, সীমান্ত, মো. রবিউল, মো. আব্দুর রহমান (ইব্রাহিম মুন্সী), রমেন চন্দ্র দাস ও মো. ফয়সাল সিকদার।</p> </article>