প্রিমিয়ার লিগের নিচের সারির তিনটি দল ওয়ান্ডারার্স, ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স এবং চট্টগ্রাম আবাহনী দেদার পয়েন্ট ও গোল বিলাচ্ছে প্রতিপক্ষকে। এ পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৬৭ গোল হজম করেছে দল তিনটি। তাদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে, তবে সন্দেহ তৈরি হয়েছে তাদের স্বচ্ছতা নিয়েও। এএফসির ম্যাচ পর্যবেক্ষকরা এর মধ্যেই এই তিনটি দলের সন্দেহজনক ম্যাচ শনাক্ত করেছে এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মাধ্যমে তাদের চিঠি দিয়ে এর ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।
ফুটবলে পাতানো ম্যাচের অভিশাপ তো নতুন নয়। একটা সময় ‘ওপেন সিক্রেট’ই ছিল ঢাকা লিগে ম্যাচ ছাড়াছাড়ি। পেশাদার লিগে কয়েক বছর ধরে ঢুকেছে অনলাইন বেটিং ও স্পট ফিক্সিংয়ের জীবাণু। যাতে করে প্রতিপক্ষকে ম্যাচ ছেড়ে দিতে হয় না, হার নিশ্চিত জানা ম্যাচে নির্দিষ্ট একটা স্কোরলাইন ধরে রাখতে পারলেও বাজিকর এবং তাঁর ক্রীড়নকরা কামিয়ে নিতে পারেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।
ভারতীয় কয়েকজন কোচিং স্টাফের যোগসাজশে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের খেলোয়াড়রা সেই ফাঁদে পা দিয়েই ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন ২০২১ সালে। আরামবাগকেও প্রিমিয়ার থেকে দুই ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেই অনলাইন বেটিং বা স্পট ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া ফুটবল থেকে সরে গেছে বলা যাবে না, বরং সন্দেহ জোরালো হলো ক্লাব তিনটিকে দেওয়া চিঠিতে।
চট্টগ্রাম আবাহনী অভিযুক্ত হয়েছে সর্বশেষ আবাহনীর কাছে ৪-০ গোলে হারা ম্যাচটিতে।
সেই ম্যাচে প্রথমার্ধে বেশ লড়াই করা দলটি দ্বিতীয়ার্ধে বাঁধন যেন একরকম আলগা করে দেয়। দলটির কোচ সাইফুর রহমান মনি এর আগে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নিজের দলের বিপক্ষেই (আজমপুর ফুটবল ক্লাব) ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তুলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবারের অভিযোগ নিয়ে তাঁর কথা, ‘আমাদের দলটার সামর্থ্যই আসলে এটুকু। আমাকে ডাকা হলেও তাই-ই বলব।’ ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন জানিয়েছেন, মোহামেডানের কাছে ৬-০ গোলে হারা লিগের একেবারে প্রথম ম্যাচটির ব্যাপারে তাঁরা চিঠি পেয়েছেন।
ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্সকে নিয়ে সন্দেহ পুলিশের কাছে ৪-১ গোলে হারা দ্বিতীয় ম্যাচটি নিয়ে। ইয়াংমেন্স সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে সন্দেহের কথা বলা হয়েছে। আমাদের বিদেশি একজন ডিফেন্ডার ওই সময় ঠিকঠাক তার দায়িত্ব পালন করেনি, সেটি নিয়েই সন্দেহ। আসলে ভুলের কারণেই গোল হজম করতে হয়, ভুল না হলে তো গোলই হতো না। তো সেগুলো অনেক সময় অনেক রকম মনে হতে পারে। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
বাফুফের পাতানো ম্যাচ শনাক্তকরণ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এবারও আছেন হুমায়ুন খালিদ। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবেমাত্র কাজ শুরু করেছি। এএফসি তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আমরা এখন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আমরা কথা বলব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।’ ইয়াংমেন্স, ওয়ান্ডারার্স, চট্টগ্রাম আবাহনীকে নিয়ে অবশ্য নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি তিনি, ‘বেশ কয়েকটি দলের ব্যাপারেই আমরা পর্যবেক্ষণ পেয়েছি।’
জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলামের উদ্যোগে একেবারে শেষ মুহূর্তে দলবদল করে চট্টগ্রাম আবাহনী। আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে দলটি। ইয়াংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স এই মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগে উঠেছে। তারাও খুব ভালো দল গড়তে পারেনি। বেটিং কম্পানিগুলো তাদেরই নিয়ে মেতেছে কি না সেটি এখন খতিয়ে দেখার অপেক্ষা।