স্ত্রী জরিনা বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের আরো যেসব তথ্য দিলেন

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
স্ত্রী জরিনা বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের আরো যেসব তথ্য দিলেন

প্রায় এক দশক আগে ৮ এপ্রিল ৪০ বছর বয়সী বিধবা জরিনাকে বিয়ে করেছিলেন ৭৩ বছর বয়সী স্বামী আলী আহমেদ। চলতি বছর ছিল তাদের দশম বিবাহবার্ষিকী। তার একদিন আগেই ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মিরপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদকে। প্রকৃতপক্ষে খুনি আবদুল মাজেদ পরিচয় লুকিয়ে আলী আহমেদ নামে কলকাতায় বসবাস করছিলেন।

১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে বাংলাদেশ সরকার।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আব্দুল মাজেদ আলী আহমেদ পরিচয়ে কলকাতায় বসবাস করছিলেন। সেখানে তিনি সুদের কারবার ও টিউশনি করিয়ে সংসার চালাতেন। সেখানে তার ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল।

পার্কস্ট্রিট এলাকার বাসিন্দারা নম্র, ধার্মিক শিক্ষক হিসাবে জানতেন এবং আধার কার্ড সহ সম্পূর্ণ পরিচয় নিশ্চিত করেছিলেন।

এমনকি প্রায় এক দশক ধরে বিবাহিত জীবন কাটালেও স্ত্রী জরিনা ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেননি তার স্বামী আলী আহমেদ আসলে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ। ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জরিনা প্রথম জানতে পারেন তার স্বামী মোস্ট-ওয়ান্টেড খুনি।

তিনি কলকাতায় নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর ২২ ফেব্রুয়ারি জরিনা স্বামীর খোঁজে স্থানীয় থানায় 'নিখোঁজ ডায়েরি’ করেছিলেন।

  কিন্তু যখন জানতে পারেন আলী আহমেদ আসলে বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ তখন হতবাক হয়ে যান। এখনো তিনি স্বাভাবিক হতে পারেননি,ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

আব্দুল মাজেদ সব সময় নীরব ও গম্ভীর থাকতেন জানিয়ে জরিনা বলেন, তিনি খুব গম্ভীর ও রাগী প্রকৃতির ছিলেন। অতীত নিয়ে কোন কথা বলতেন না। জানতে চাইলে রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে পড়তেন।

সব সময় ঘড়ির কাঁটা ধরে চলতেন। খাবার দিতে কিংবা অন্য কোন বিষয়ে একটু দেরি হলেই গালিগালাজ করতে শুরু করতেন।

জরিনা বলছিলেন যে, তিনি যখন ৩১ বছর বয়সে আলী আহমেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল ৬৪ বছর।

কলকাতা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে উলুবেড়িয়ায় গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের বিধবা নিরক্ষর মহিলা জরিনা। সেখানে তার আগের সংসারের এক কন্যা নিয়ে বসবাস করতেন। এক প্রতিবেশী আলীর সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাবটি নিয়ে এসেছিল পরিবারের কাছে। এবং তারা আলীর অতীত বা পারিবারিক ইতিহাস না জেনেই জরিনার বিয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আলী সর্বদা একজন অন্তর্মুখী মানুষ এবং কখনও বেশি কিছু বলেননি। আমি তাকে তার গ্রাম এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পর্কে অনেকবার জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করেছি, তবে তিনি রাগ করতেন।

প্রতিবেশীর প্রস্তাব আসায় আমার বাবা-মা আমাকে বিয়ে করিয়েছিলেন। আমাদের জানানো হয়েছিল যে তিনি একজন ধার্মিক ব্যক্তি এবং শিক্ষক ছিলেন। আমি তাকে সর্বদা পাঁচবার নামাজ পড়তে দেখেছি এবং একজন ধার্মিক মুসলমানের জীবনযাপন করতে দেখেছি।

জরিনার ভাই নাজিমুদ্দিন মল্লিক বলেছেন, তিনি এখন একটি গুরুতর স্নায়ুজনিত রোগে ভুগছেন। তিনি অন্যের করুণা নিয়ে বেঁচে আছেন। আমরা গরিব এবং কন্যাকে বিয়ে করানো পরিবারের দায়িত্ব। জরিনার প্রথম স্বামী একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এবং একা সন্তান নিয়ে জীবন যাপন করা অনেক কষ্টের হয়ে পড়েছিল। বছর দুয়েকের মধ্যে এই দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব এল। আমরা তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি, তবে আমাদের জানানো হয়েছিল যে তিনি একজন শিক্ষক এবং আমাদের বোন ও তার সন্তানকে সুখী রাখতে তিনি ভাল উপার্জন করেছেন। আমরা কেবল ৮ এপ্রিল সংবাদপত্রের মাধ্যমে তার পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারি।

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এমনিতে সুদের কারবার ও টিউশনির টাকায় সংসার চললেও সম্প্রতি তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট বুক করেছিলেন মাজেদ। গোয়েন্দারা মনে করছেন, সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে টাকা আসত মাজেদের কাছে। কিন্তু সেই ফ্ল্যাটে আর পা দেওয়া হল না তার। তার আগেই ফাঁসিকাঠে নিথর হলেন তিনি।

সূত্র- দ্য প্রিন্ট।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হোয়াইট হাউসের কাছে বন্দুকধারীকে সিক্রেট সার্ভিসের গুলি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
হোয়াইট হাউসের কাছে বন্দুকধারীকে সিক্রেট সার্ভিসের গুলি
প্রতীকী ছবি : এএফপি

মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টরা হোয়াইট হাউসের কাছে এক বন্দুকধারীকে গুলি করেছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র স্থানীয় সময় রবিবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ঘটনার সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো বাসভবনে অবস্থান করছিলেন।  

মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তবে তার অবস্থা ‘অজ্ঞাতপরিচয়’।

বিবৃতিতে এটি স্পষ্ট করা হয়নি যে হোয়াইট হাউস বা ট্রাম্প হামলার লক্ষ্য ছিল কি না।  

এ ছাড়া সিক্রেট সার্ভিসের কোনো সদস্য আহত হয়নি বলেও জানানো হয়েছে। সংস্থার মুখপাত্র অ্যান্থনি গুগলিলমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন।  

বিবৃতি অনুসারে, স্থানীয় পুলিশ আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, ইন্ডিয়ানা থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে আসা এক ‘আত্মঘাতী’ ব্যক্তি হুমকি তৈরি করতে পারে।

স্থানীয় সময় মধ্যরাতে হোয়াইট হাউসের খুব কাছে সপ্তদশ ও এফ স্ট্রিটের সংযোগস্থলের কাছে তার গাড়ি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ঘটনাস্থলের কাছেই পুলিশ সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করে, যার বর্ণনা পুলিশের কাছে ছিল।  

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ সদস্যরা যখন তার কাছে এগিয়ে যায়, তখন সে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ধরে। এরপর সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়, যেখানে আমাদের সদস্যরা গুলি চালায়।

’ বিবৃতিতে বলা হয়।  

সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ও তার অবস্থা জানা যায়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসি পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

থাইল্যান্ডে বন্দুক ও বোমা হামলায় নিহত ৫, আহত ১৩

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
থাইল্যান্ডে বন্দুক ও বোমা হামলায় নিহত ৫, আহত ১৩
থাইল্যান্ডে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা ৯ মার্চ নারাথিওয়াট প্রদেশের সঙ্গাই কোলোকের জেলা অফিসের বাইরে হামলাস্থল পরিদর্শন করেন। ছবি : এএফপি

থাইল্যান্ডের অশান্ত দক্ষিণাঞ্চলে দুটি হামলায় পাঁচজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ রবিবার এ তথ্য জানিয়েছে।

২০০৪ সাল থেকে থাইল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে একটি নিম্ন-স্তরের সংঘর্ষ চলছে, যা এখন পর্যন্ত সাত হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের বিদ্রোহীরা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।

নারাথিওয়াত প্রদেশের পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী সঙ্গাই কোলোক শহরের জেলা অফিসের বাইরে ১০ জনেরও বেশি হামলাকারী গুলি চালায়। এ ছাড়া তারা বিস্ফোরকও নিক্ষেপ করে এবং বোমা বিস্ফোরিত করে, যার ফলে অফিসের সুরক্ষা প্রদানকারী দুজন প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক নিহত ও ১২ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে চারজন সাধারণ নাগরিক।

অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী প্রদেশ পট্টানির সাইবুরি জেলায় শনিবার রাতে একটি রাস্তার পাশে বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুজন স্থানীয় গ্রাম সহকারী ও একজন ওই অঞ্চলের রেঞ্জার ছিলেন।

এই ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে আরো একজন আহত হন বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল এক শতাব্দীরও বেশি সময় আগে থাইল্যান্ড দখল করে, যা সাংস্কৃতিকভাবে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ থাইল্যান্ডের অন্য অংশ থেকে আলাদা। এই এলাকায় থাই নিরাপত্তা বাহিনী কঠোরভাবে নিরাপত্তা প্রদান করে। থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, হামলার পর দক্ষিণাঞ্চলে রাতের শিফটে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা ‘নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে’।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য
গাজা যুদ্ধবিরতি

হামাসের চাপের মধ্যে দোহায় প্রতিনিধিদল পাঠাবে ইসরায়েল

    কায়রোয় হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের সাক্ষাৎ
এএফপি
এএফপি
শেয়ার
হামাসের চাপের মধ্যে দোহায় প্রতিনিধিদল পাঠাবে ইসরায়েল
৫ মার্চ গাজায় ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে একটি ফ্রিজ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন দুই ফিলিস্তিনি। ছবি : এএফপি

ইসরায়েল রবিবার দোহায় একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আরো আলোচনা করার জন্য। অন্যদিকে হামাসও যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা তাৎক্ষণিকভাবে শুরুর আহ্বান জানিয়েছে, যা স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে বলে তারা আশা করছে।  

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের প্রতিনিধিদল সপ্তাহান্তে কায়রোয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। তারা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ‘কোনো শর্ত বা বিধি-নিষেধ ছাড়া’ জরুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ মারদাভি বলেন, ‘হামাস দখলদারদের (ইসরায়েল) বাধ্য করার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছে, যাতে তারা অবিলম্বে সমঝোতার আওতায় দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করে।’ এটি যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের পথ তৈরি করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  

মারদাভি আরো বলেন, হামাসের দ্বিতীয় ধাপের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার, ইসরায়েলি অবরোধের অবসান, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পুনর্গঠন ও আর্থিক সহায়তা। এ ছাড়া মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানুয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ইঙ্গিতগুলো ইতিবাচক।

আরো পড়ুন
গাজা সহায়তা না পাওয়ায় ইসরায়েলি জিম্মিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে : হামাস

গাজা সহায়তা না পাওয়ায় ইসরায়েলি জিম্মিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে : হামাস

 

অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা সোমবার দোহায় একটি প্রতিনিধিদল পাঠাবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, সরকারের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা রবিবার এ বিষয়ে আলোচনা করবে।  

ইসরায়েল বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত রাখতে চায়। এর আগে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল।

প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময়কাল ১ মার্চ শেষ হয়, যা ছয় সপ্তাহ ধরে তুলনামূলক শান্ত পরিবেশ বজায় রেখেছিল। এই সময়ের মধ্যে হামাস ২৫ জীবিত জিম্মি ও আটটি মৃতদেহ হস্তান্তর করেছিল, বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় এক হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল।

যুদ্ধবিরতিটি গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ যুদ্ধ কার্যত স্থগিত করেছিল, যেখানে ইসরায়েলের লাগাতার সামরিক অভিযানের কারণে প্রায় পুরো জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়। পাশাপাশি গাজায় জরুরি খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সহায়তার প্রবাহও নিশ্চিত হয়েছিল। ইসরায়েল ফের সেই প্রবাহ বন্ধ করার পর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা দেশটিকে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

 

গৃহহীন ফিলিস্তিনি বিধবা হানিন আল-দুরা জানান, তাঁবু পাওয়ার আগে তিনি ও তার সন্তানরা কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় কুকুর ও ইঁদুরের সঙ্গে কাটিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারের উপার্জনকারী, এটা ছিল হতাশাজনক এবং রাতে একটুও ঘুমাতে পারতাম না।’

আরো পড়ুন
গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা : নানা চ্যালেঞ্জ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া

গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা : নানা চ্যালেঞ্জ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া

 

‘শেষ সতর্কবার্তা’
এদিকে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি অবশিষ্ট সব জিম্মিকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে গাজায় আরো ধ্বংস নামিয়ে আনা হবে। তিনি এটিকে হামাস নেতাদের জন্য ‘শেষ সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেন।  

ট্রাম্প গাজার জনগণকেও হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তবে কেবল যদি তোমরা জিম্মিদের আটকে না রাখো। যদি তা করো, তবে তোমরা মরবে!’

হামাস অবশ্য বলেছে, ট্রাম্পের হুমকিগুলো কেবল ইসরায়েলকে তাদের সমঝোতার শর্ত উপেক্ষা করতে উৎসাহিত করবে।  

অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রথমবারের মতো হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও ১৯৯৭ সালে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে ৫৮ জন এখনো গাজায় রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক। চারজন মার্কিন জিম্মিকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইদান আলেকজান্ডার নামের একজনকে জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।  

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই এক বিতর্কিত পরিকল্পনা উত্থাপন করেছিলেন, যাতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের নির্বাসনে পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। এর জবাবে আরব নেতারা একটি বিকল্প প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হবে এবং রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আবার অঞ্চলটি শাসন করবে। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি নিয়ে আরো আলোচনা দরকার, তবে এটি সদিচ্ছার প্রথম পদক্ষেপ।’ এই সপ্তাহে উইটকফ সৌদি আরব সফরে যাবেন, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হবে।  

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ২১৮ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে হামাসশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় অন্তত ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগও বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘও এই পরিসংখ্যানগুলোকে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করে।

আরো পড়ুন
আরব প্রস্তাবে সমর্থন মুসলিম ও ইউরোপীয় নেতাদের

আরব প্রস্তাবে সমর্থন মুসলিম ও ইউরোপীয় নেতাদের

 
মন্তব্য

ইস্তাম্বুলে নারী দিবসের মিছিলের পর আটক প্রায় ২০০

এএফপি
এএফপি
শেয়ার
ইস্তাম্বুলে নারী দিবসের মিছিলের পর আটক প্রায় ২০০
৮ মার্চ তুরস্কের ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কয়ারের কাছে আন্তর্জাতিক নারী অধিকার দিবস উপলক্ষে সমাবেশে অংশ নিয়ে মিছিল করেন নারীরা। ছবি : এএফপি

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তিন হাজারের বেশি নারী মিছিল করার পর শনিবার রাতে প্রায় ২০০ বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি করছেন আয়োজকরা। ইস্তাম্বুল থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি রবিবার এ খবর জানিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত তাকসিম স্কয়ারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চলছে। জায়গাটি সাধারণত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা থাকে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থায় তাকসিম স্কয়ারের কাছাকাছি স্থানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তাকসিম স্কয়ারে স্থানীয় সময় শনিবার সূর্যাস্তের সময় ফেমিনিস্ট নাইট মার্চ নামের সমাবেশ শুরু হয়। সেখানে অনেক বিক্ষোভকারী বেগুনি রঙের পোশাক পরে ‘আমরা চুপ থাকব না’, ‘আমরা ভীত নই, ‘আমরা মানব না’, ‘আমাদের নারীবাদী সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান সংবলিত ব্যানার প্রদর্শন করেন। তবে মিছিলটি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়।

 

আয়োজকরা জানিয়েছেন, মিছিলের সময় পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকের চেষ্টা করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে সমাবেশ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দেয়।

মিছিলের আয়োজকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ফেমিনিস্ট নাইট মার্চ শেষ হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাচ্ছিলেন। তখন পুলিশ আমাদের বন্ধুদের ‘উসকানিমূলক আচরণের’ অভিযোগে আটক করতে শুরু করে।

৮ মার্চ প্রায় ২০০ জন নারীকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে ব্যানার নিয়ে রাস্তায় মিছিল করে শহরের এশীয় অংশের কাদিকয় এলাকায় কয়েক শ বিক্ষোভকারীর সমাগম হয়।

ডিআইএসকে ট্রেড ইউনিয়নের চেয়ারওম্যান আরজু সেরকেজোগলু এএফপিকে বলেন, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ, নারী হত্যার বিরুদ্ধে ইস্তাম্বুল কনভেনশনের অনুমোদনের দাবি ও নারীদের ওপর যত্নের বোঝা চাপিয়ে না দেওয়া—এমন  সামাজিক নীতিমালার দাবিতে মিছিলটি বের করা হয়। 

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র, সমতা, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের জন্য আমাদের ৮ মার্চের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।

আরজু প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের ২০২১ সালে ইস্তাম্বুল কনভেনশন থেকে তুরস্ককে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই কনভেনশনে যুক্ত থাকতে হলে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ ও বিচারের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের শর্ত রয়েছে।

তুরস্ক নারী হত্যা সম্পর্কিত সরকারি পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে না। এই কাজটি নারী সংগঠনগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সংগঠনগুলো সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে খুন ও অন্যান্য সন্দেহজনক মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। উই উইল স্টপ ফেমিসাইড প্ল্যাটফরম অধিকার সংস্থার সংগৃহীত পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক ইস্তাম্বুল কনভেনশন থেকে সরে আসার পর পুরুষদের হাতে কমপক্ষে এক হাজার ৩১৮ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ