ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এর জন্য নতুন সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে আমাজন বনের বিশাল অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এই জলবায়ু সম্মেলনের জন্য হাজার হাজার একর সুরক্ষিত আমাজন রেইনফরেস্টের মধ্য দিয়ে নতুন মহাসড়ক তৈরি করা হচ্ছে।
উত্তর ব্রাজিলের আমাজন শহর বেলেমে কপ৩০ আয়োজনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আট মাইল দীর্ঘ, চার লেনবিশিষ্ট এই মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সম্মেলনে প্রায় ৫০ হাজার প্রতিনিধি আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শহরের যানজট কমানোর লক্ষ্যে এই সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এই সড়ক তৈরির জন্য কয়েক হাজার একর বন উজাড় হয়ে গেছে।
রাজ্য সরকার মহাসড়কের কথা বললেও, এই কর্মকাণ্ড পরিবেশ সংরক্ষণ, কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যবিরোধী বলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বিশ্বের জন্য কার্বন শোষণ এবং জীববৈচিত্র্য জন্য আমাজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অনেকেই বলছেন, এই বন উজাড় জলবায়ু সম্মেলনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রেইনফরেস্টের মধ্য দিয়ে বেলেম পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার (৮ মাইল) এরও বেশি বিস্তৃত পরিষ্কার জমিতে কাঠের স্তূপ করা হয়েছে।
মেশিনগুলো বন উজাড় করে জলাভূমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করছে, রাস্তাটির একটি অংশ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে যাবে, যেখানে প্রায় ৮০০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ছত্রাক রয়েছে। সংরক্ষণবাদীরা বলছেন, এটি বন্য প্রাণীদের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।
রাস্তাটি যেখানে হবে সেখান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে থাকেন ক্লাউদিও ভেরেকুয়েট। তিনি জানান, এই জায়গাটিতে থাকা বহু গাছ থেকে আকাই বেরি সংগ্রহ করে আয় করতেন। তিনি বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের ফসল কেটে ফেলা হয়েছে। আমার এখন আয় নেই, আমাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য কিছু নেই।
’
তিনি আরো জানান, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি এবং বর্তমানে আগের করা সঞ্চয় দিয়ে চলছেন। তিনি উদ্বিগ্নও বটে। তার মতে, এই রাস্তাটি নির্মাণের ফলে ভবিষ্যতে আরো বন উজাড় হবে। কারণ এই এলাকাটি ব্যবসার জন্য সহজলভ্য।
আতঙ্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভয় হলো, একদিন কেউ এখানে এসে আমাদের এই এলাকাটিতে একটি পেট্রোল পাম্প তৈরি করতে চাইবে অথবা একটি গুদাম তৈরি করতে চাইবে এবং তারপর আমাদের চলে যেতে হবে। আমরা এখানেই জন্মগ্রহণ করেছি এবং বেড়ে উঠেছি। আমরা কোথায় যাব?’
আরো পড়ুন
চুলের চেয়ে ২ লাখ গুণ সূক্ষ্ম ধাতু বানাল চীন
রাস্তাটি দুটি বিচ্ছিন্ন সংরক্ষিত বনভূমি ছেড়ে দিয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন, এ ঘটনা বাস্তুতন্ত্রকে খণ্ডিত করবে এবং বন্যপ্রাণীদের চলাচল ব্যাহত করবে।
অধ্যাপক সিলভিয়া সার্দিনহা একজন বন্য প্রাণী পশুচিকিৎসক এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু হাসপাতালের গবেষক। তিনি এবং তার দল বন্য প্রাণীদের পুনর্বাসন করেন। যে সকল প্রাণী আঘাত পেয়েছে, বিশেষ করে মানুষ বা যানবাহনের কারণে তাদের চিকিৎসা দেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা তাদের আবার বনে ছেড়ে দেয়। অধ্যাপক সিলভিয়া বলেন, ‘তাদের দোরগোড়ায় একটি মহাসড়ক থাকলে বিষয়টি আরো কঠিন হবে। বন উজাড়ের ক্ষতি আছে। আমরা এই প্রাণীদের বনে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি এলাকা হারাতে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘স্থলজ প্রাণীরা অন্য দিকেও যেতে পারবে না, যার ফলে তারা যেখানে বাস করতে এবং বংশবৃদ্ধি করতে পারত সেই অঞ্চলগুলো হারিয়ে ফেলবে।’
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা বলেছেন, এটি আমাজনে আয়োজিত কপ, আমাজন সম্পর্কে কপ নয়। তিনি বলছেন, এই বৈঠকটি আমাজনের চাহিদার ওপর মনোনিবেশ করার, বিশ্বকে বন দেখানোর এবং ফেডারেল সরকার এটি রক্ষার জন্য কী করেছে তা উপস্থাপন করার সুযোগ দেবে। কিন্তু অধ্যাপক সিলভিয়া সার্দিনহা বলেছেন, যদিও এই কথোপকথনগুলো ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করলেও, আমাজনে বসবাসকারীদের কথা শোনা যাচ্ছে না।
সূত্র : বিবিসি