<p>বগুড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গতকাল রবিবার পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কাটা গাছ ক্রেনে উঠানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বগুড়া শহরের ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হওয়ার পর শখানেক গজ দূরে যেতেই সেউজগাড়ী আমতলা মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওপরের ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারের সঙ্গে রথের চূড়ার ধাক্কা লাগলেই আগুন ধরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রথের ওপরে বসা ও নিচে থাকা ৩০ জনের বেশি আহত হয়। তাদের মধ্যে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনজন ও ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়।</p> <p>মৃত ব্যক্তিরা হলেন জেলার শিবগঞ্জের কুলুপাড়ার মৃত নারায়ণ কুমারের ছেলে অলক কুমার (৪২), শাহজাহানপুর উপজেলার গোহাইল এলাকার মৃত সুদেব মোহন্তের মেয়ে রঞ্জিতা মোহন্ত (৬০), বগুড়া সদরের পুরান বগুড়ার (তিনমাথা) লস্কেরশ্বরের স্ত্রী আতসী রানী (৪০), আদমদীঘি উপজেলার কুণ্ডুগ্রামের ভবানী মোহন্তের ছেলে নরেশ মোহন্ত (৫০) ও অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী।</p> <p>মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান জানান, এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।</p> <p>প্রত্যক্ষদর্শী বগুড়া শহরের চেলোপাড়ার বাসিন্দা বিধান কুমার সিংহ জানান, হাজারো ভক্ত দড়ি ধরে একযোগে রথ টানছিল। আরো কয়েক হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী তাদের অনুসরণ করছিল। রথের চূড়াটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে এলেই আগুন ধরে যায়। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে অনেকেই আহত হয়। অনেকের পোশাকে আগুন ধরে যায়। শুরু হয় কান্নার রোল, ছোটাছুটি। হতভম্ভ, আতঙ্কিত লোকজন ছোটাছুটি করে স্বজনদের খুঁজতে থাকে। আহতদের মধ্যে খুঁজতে থাকে পরিবারের লোকজনকে। আনন্দ-উৎসব মুহূর্তে রূপ নেয় শোকে।</p> <p>জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শুভাশিস পোদ্দার লিটন ঘটনার পর হাসপাতালে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।</p> <p>বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, রথের চূড়াটি বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এলে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে চারজন ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে একজন মারা গেছে।</p> <p>বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার সময় একজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে হাসপাতালে চারজন মারা গেছে বলে জানতে পেরেছি। আহতদের চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।</p> <p>বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। কিভাবে ঘটনাটি ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’</p> <p>কর্তৃপক্ষ বলেছে, বৈদ্যুতিক তারের অবস্থান অনুযায়ী রথের নিরাপদ উচ্চতার ব্যাপারে আয়োজকদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল।</p> <p>রথযাত্রার আয়োজকরা বলেছেন, বৈদ্যুতিক তারে যাতে রথের চূড়ার স্পর্শ না লাগে সে জন্য চূড়া ওঠানামা করানোর জন্য দুজনকে দায়িত্ব  দেওয়া হয়েছিল। তাদের ভুলে রথের চূড়া নিচে নামানোর আগেই বৈদ্যুতিক তারের সঙ্গে স্পর্শ  লাগে।</p> <p>রথযাত্রা শুরুর আগে এক আলোচনাসভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। সভা শেষে রথ টানার কাজ শুরু হয়।</p> <p> </p> <p><strong>বিদ্যুৎস্পর্শে ক্রেনের চালকসহ মৃত্যু ২</strong></p> <p>এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কাটা গাছ ক্রেনে উঠানোর সময় বিদ্যুত্স্পর্শে ক্রেনটির চালক বাপ্পি ও তাঁর সহযোগী পারভেজের মৃত্যু হয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মনসকসাইর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।</p> <p>বিষয়টি নিশ্চিত করে কসবা থানার ওসি রাজু আহমেদ জানান, সড়ক প্রশস্ত করতে ওই এলাকায় গাছ কাটা হচ্ছে। কাটা গাছ তোলার সময় অসাবধানতাবশত ক্রেনটি বিদ্যুতায়িত হয়। এ সময় ক্রেনে থাকা চালক ও তাঁর সহযোগী বিদ্যুত্স্পর্শে মারা যান। তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।</p> <p> </p> <p> </p>