ফিরে দেখা পিলখানা ট্র্যাজেডি-২

হাসিনা সরকারের সম্মতিতেই হত্যাকাণ্ড

কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
হাসিনা সরকারের সম্মতিতেই হত্যাকাণ্ড

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দুই বছর আগে থেকেই এর পরিকল্পনা হয়। দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০০৭ সালেই বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তাপসের সঙ্গে তাঁদের  বৈঠক হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাপস বিডিআর ডিজি (মহাপরিচালক) ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা অনুুমোদন করেন।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শেখ সেলিমের সঙ্গেও ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য দেখা করেন। বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের জানানো হয়েছিল, ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে শেখ হাসিনা সরকারের সম্মতি আছে। সে সময় পিলখানাজুড়ে জয় বাংলা স্লোগান শোনা গেছে। 

বর্বর ওই ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এবং তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া বিডিআরের খুনি সদস্যদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে আসে।

সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির কাছেও একই স্বীকারোক্তি দেন হত্যাকারীরা। কিন্তু হত্যা পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা তো দূরের কথা, তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদেরও বাইরে থেকে যান।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে বিডিআর বিদ্রোহের নামে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৮ জন সেনা সদস্যকে (৫৭ জন কর্মকর্তা এবং একজন সৈনিক) নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। হত্যা করা হয় মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের স্ত্রী নাজনীন হোসেন শাকিলকেও।

ওই বছরের ২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামানকে সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সশস্ত্রবাহিনীর তিনজন প্রতিনিধিও রাখা হয়। এই তিনজন প্রতিনিধির অন্যতম ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির। 

হাসান নাসির গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্তে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপসসহ আরো কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তদন্ত কমিটির কাছে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কামরুল ইসলাম।

কমিটির সভাপতি এ দুুজনকে দায়সারা গোছের কিছু প্রশ্ন করে হ্যাঁ, না ধরনের সংক্ষিপ্ত জবাব পান। এটি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা।আমাদেরকে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়নি।

তিনি আরো বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, মির্জা আজম এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি দুজন মহিলা সংসদসদস্যসহ  যেসব আওয়ামী লীগ নেতা পিলখানায় ঢুকেছিলেন, তাঁরা সবাই জড়িত ছিলেন বলে আমরা মনে করি।

ওই ঘটনা তদন্তে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে যে সেনাবাহিনীর কমিটি করা হয়, সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন লে. কর্নেল (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনালের পদে অবসরপ্রাপ্ত) এ কে এম শামসুল ইসলাম শামস। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বিডিআর সদস্যরা আমাদের তদন্ত কমিটির কাছে যে স্বীকারোক্তি দেন, তাতে স্পষ্ট হয় যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িত ছিলেন। বিডিআরের দাবি, ক্ষোভ থেকে ওই নৃশংস ঘটনা ঘটেনি। এটি ছিল সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে, দেশকে অকার্যকর করতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে কাজে লাগানো হয়েছে।

সেনাবাহিনীর তদন্ত সম্পর্কে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় আমি যখন তদন্তের আদেশ দিই, তখন আমাকে বলা হয়, যখন সরকার এই বিষয়ে তদন্ত করছে, তখন সেনাবাহিনী থেকে তদন্তের প্রয়োজনটা কী? ওই তদন্ত করতে সরকারের কাছ থেকে যে সাহায্য প্রয়োজন, তা আমরা পাইনি। অবশ্য পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জেনারেল মঈনের ভূমিকাও সন্দেহমুক্ত নয় বলে অনেকে মনে করেন।

সিপাহি আশরাফুল আলমের জবানবন্দি

তদন্ত কমিটির কাছে যেসব বিডিআর সদস্য স্বীকারোক্তিমূলক  জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাঁদের একজন হচ্ছেন সিপাহি মো. আশরাফুল আলম ব্রান্ড। নম্বর ৫৯১১৫। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা বগুড়ার ধুনটের বেলকুচি গ্রামে। বাবার নাম মনুরুদ্দিন আকন্দ।    

আশরাফুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে বিভিন্ন সময় আমাদের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো পরিকল্পনা চলতে থাকে। আমাদের দাবিদাওয়া পূরণের লক্ষ্যে হাজারীবাগ এলাকায় ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি তখন আশ্বাস দেন  যে তাঁকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে তিনি বিডিআরের দাবিদাওয়া পূরণ করবেন। ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি জানতে পারি দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অফিসারদের জিম্মি করা হবে। সদর ব্যাটালিয়নের ব্যান্ড প্লাটুনের হাবিলদার সামাদ এ কথা আমাদের জানান। একই দিন আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ডিএডি হারুনের নেতৃত্বে রোলকলের পর গলফ গ্রাউন্ডে একটি  বৈঠক হয়।

বৈঠকে নিজে এবং ডিএডি হারুন, ডিএডি তৌহিদ, সুবেদার আসাদ (৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), নায়েক সুবেদার সুলতান (৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) এবং আরো প্রায় ২৭ জন  বিডিআর সসস্য উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে আশরাফুল আলম বলেন, ওই দিন ডিএডি হারুন আমাদের সবাইকে বলেন, যেদিনই দরবার হোক, সেদিনই অফিসারদের জিম্মি করা হবে এবং আমাদের দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। দাবিদাওয়া পূরণ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে অফিসারদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর থেকে ছোট ছোট দলে আমাদের নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হতো। ২০০৯ সালের ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানার গলফ মাঠে ২০-২৫ জনের আরেকটি বৈঠক হয়। সেখানে ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকের সবাই উপস্থিত ছিলেন এবং মনোবল উঁচু রেখে আগের বৈঠকের সব বিষয় কঠিনভাবে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে লিফলেট ছাপানো হয় এবং সেগুলো প্রতিটি গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে আরএসইউয়ের এফএস  সেগুলো খুলে নিয়ে আসে। এরপর ১৯  ফেব্রুয়ারি আনুমানিক রাত ৮টার দিকে হাজারীবাগ ট্যানারির  মোড়ে আউট লিভিংরত বিডিআর সদস্য নায়েক জয়নালের (৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) বাসায় আরেকটি বৈঠক হয়। বৈঠকে যোগ দেন হাবিলদার (ব্যান্ড) সামাদ, নায়েক সাত্তার (২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), হাবিলদার সামাদ (৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), হাবিলদার জয়নাল (২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) এবং  আমিসহ আরো প্রায় ১১ জন। বৈঠকে হাবিলদার সামাদ শুধু ডিজি এবং ডিজি ম্যাডামকে মেরে ফেলা হবে এবং এই ব্যাপারে  ওপরের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান। ওই দুজনকে (ডিজি ও ডিজি ম্যাডাম) হত্যা করে লাশের  ব্যবস্থা করতে ১৯ ফেব্রুয়ারির বৈঠকেই হাজারীবাগের দুজন কসাইয়ের (কসাই হারুন ও কসাই মজিবুর)  সঙ্গে বনিবনা করা হয়। কসাই দুজনকে এই কাজের জন্য হাবিলদার সামাদ অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দেন।

আশরাফুল আলম তাঁর জবানবন্দিতে আরো উল্লেখ করেন, ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যারিস্টার তাপসের উপস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর (সন্ত্রাসী  লেদার লিটনের পিতা) বাসায় বৈঠক হয়। বৈঠকের সময়সীমা ছিল আনুমানিক ১৯৩০ থেকে ২১০০ ঘটিকা। এ  বৈঠকে ডিএডি   তৌহিদ, ডিএডি জলিল, হাবিলদার জসীম, হাবিলদার মোস্তফা, হাবিলদার কাওসার, হাবিলদার সামাদ, হাবিলদার বক্কর, নায়েক সুজন বডুয়া, নায়েক আজিজ, সিপাহি তারেক, সিপাহি জাকির, সিপাহি রণজিৎ, সিপাহি আলমগীর শেখ, সিপাহি আবদুল হাকিম এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে আমাদের দাবিদাওয়া এবং পরিকল্পনার কথা ব্যারিস্টার তাপসকে জানানো হয়। তিনি আমাদের পরিকল্পনার কথা শোনেন এবং তাতে সম্মতি দেন। তিনি আমাদের বেশি অফিসারকে না মেরে প্রয়োজনে দু-একজনকে হত্যা করার সম্মতি দেন। ওই  বৈঠকে ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে আরেকজন সংসদ সদস্য (মোচওয়ালা,  কোঁকড়ানো চুল, চশমা পরিহিত, ফরসা রং) উপস্থিত ছিলেন।  বৈঠক শেষে আনুমানিক ২১০০ ঘটিকার বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পিলখানায় চলে আসেন। ওই  সময় ৫ নম্বর গেটে  কোনো ইন-আউট চেক হতো না। আমার জানামতে সিপাহি তারেকের সঙ্গে সংসদ সদস্য তাপসের  যোগাযোগ ছিল। তাপসের মাধ্যমে তিনি তাঁর একজন আত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এরপর ২৩-২৪  ফেব্রুয়ারি ডিএডি তৌহিদ আমাদের মোট পাঁচটি গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন কাজ বণ্টন করে দেন। ৩৬ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার বাতেনকে তাঁর দলসহ ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ম্যাগাজিন ভাঙার এবং ব্যান্ডের হাবিলদার সামাদের নেতৃত্বে তাঁর দলকে কেন্দ্রীয় ম্যাগাজিন ভাঙার আদেশ দেওয়া হয়। সদর ব্যাটালিয়নের হাবিলদার ফজলু ও নায়েক আনিসের নেতৃত্বে ডিজির বাসার প্রহরীদের নিরস্ত্র করার জন্য বাটা হয়। এ ছাড়া ব্যান্ডের নায়েক সুজন বড়ুয়ার নেতৃত্বে আমাকেসহ একটি বড় দলকে ৩৬ রাইফেলের ম্যাগাজিনের সব গ্রেনেড সংগ্রহ করে সবাইকে বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ব্যান্ডের হাবিলদার ফজলুর নেতৃত্বে আরেকটি দল সেন্ট্রাল কাত ভেঙে অস্ত্র সংগ্রহ এবং তা দুটি গাড়ির মাধ্যমে দরবার হলে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আশরাফুলের স্বীকারোক্তি,  ২৫  ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ০৬৩০ ঘটিকায় হাবিলদার সামাদ সদর ব্যাটালিয়নের সামনে প্রায় ৮০-৯০ জনকে ফলইন করিয়ে ব্রিফিং দেন। পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল ৯টা থেকে সোয়া ৯টার মধ্যে আমি আমার দলের অন্য সদস্যসহ দরবার হলের পেছনে অবস্থান নিই। সিপাহি মইনুল, সিপাহি তারেক (সদর ব্যান্ড) সর্বপ্রথম দরবার হলে ঢুকে পরিকল্পনামাফিক অস্ত্র নিয়ে ডিজির পাশে অবস্থান নেন। কিন্তু সিপাহি মইনুল ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সিপাহি তারেক কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই সিপাহি তারেকসহ ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের নায়েক ফরহাদ ও সিপাহি তোতা মিয়া সদর ব্যান্ডের সিপাহি জসিম ও আরটিসি অ্যান্ডএস ব্যান্ডের সিপাহি শাহাবুদ্দীন এসএমজি নিয়ে দরবার হলের ভেতরে প্রবেশ করেন। সিপাহি তারেক এরপর সব অফিসারকে দরবার হলের বাইরে গিয়ে সিঙ্গেল লাইনে দাঁড়াতে বলেন। এ সময় অনেকেই চিৎকার করতে থাকেনসেনাবাহিনী ও র‌্যাব পিলখানায় প্রবেশ করেছে বিডিআরদের মেরে ফেলার জন্য। সিপাহি তারেক এ সময় ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি ও সিপাহি শাহাবুদ্দীনসহ আরো অনেকে লাইনে দাঁড়ানো অফিসারদের গুলি করা শুরু করি। সিপাহি তারেকের গুলিতে ডিজি মারা যান এবং আমার সামনে দাঁড়ানো কর্নেল নাফিজ আমার গুলিতে মারা যান। এরপর আমি দরবার হলের পেছন দিকে গিয়ে ঢাকার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবকেও হত্যা করি। আমাদের দলের এক সিপাহি শহীদ ক্যাপ্টেন তানভীরকে গুলি করে মেরে  ফেলে। এরপর আমি আমাদের ইএমই লাইনের দিকে চলে যাই এবং সবাইকে অস্ত্র নিতে বলি। ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের হাবিলদার মেজর (নাম জানা নেই) এবং সিপাহি পারভেজ তাঁদের উপ-অধিনায়ককে লাইন থেকে নামিয়ে এনে  গুলি করে। আমার জানামতে, দরবারে গুলি শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রায় সব অফিসারকে মেরে ফেলা হয়। শুধু যাঁরা পালিয়ে থাকতে পেরেছিলেন, তাঁরা বেঁচে যান। এরপর বিকেল ৪টার দিকে এমটির লোকজন দরবার হল ও অন্যান্য জায়গা থেকে লাশগুলো তুলে এনে হাসপাতালের কাছে এনে রাখে। সিপাহি আলমগীর লাশগুলো আনা-নেওয়ার কাজে সহায়তা করেন। হাসপাতালের নার্সরা মৃত অফিসারদের ইউনিফর্ম কেটে খুলে ফেলে এবং এমটির সৈনিকরা ইউনিফর্মগুলোতে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। লাশগুলো গুম করার জন্য দুটি গণকবর খোঁড়া হয়। একটি ১৩ ব্যাটালিয়নের মাঠে, অপরটি হাসপাতালের কাছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি লাশগুলোকে গণকবর দেওয়া হয়। ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গণকবরে সব লাশ জায়গা না হওয়ায় কিছু লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেন। ৪৪, ৩৬ ও ২৪ রাইফেলের লোকজন হাবিলদার আমজাদের নেতৃত্বে ডিজির বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে রাতে তাঁরা অন্য অফিসারদের বাসায় যান এবং লুটতরাজ করেন।

আমার জানামতে, সিপাহি আলমগীর চারজনকে খুন করেন। ডিজির বাসায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আলমগীরও জড়িত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ২৪ ব্যাটালিয়নের বেশ কিছু সদস্য যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা ডিজি ম্যাডামসহ বাসায় অবস্থানরত দুজন  মেহমান এবং বাসার কাজের বুয়াসহ সবাইকে হত্যা করেন।

এরপর রাতের বেলায় আমি শুনতে পাই, অফিসারদের পরিবারদের কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। এ কাজে জড়িত ছিলেন সিপাহি তারেক (সদর-ব্যান্ড), সিপাহি আতিক (সদর), সিপাহি সামাদ (২৪ রাইফেল), হাবিলদার সুভাস, হাবিলদার বাবুল কান্তি, সিপাহি বিজয় (ব্যান্ড), সিপাহি আজাদ (ব্যান্ড), হাবিলদার আজাদ (ব্যান্ড), সিপাহি মনির (১৩ রাইফেল), সিপাহি শাহীন (১৩ রাইফেল) এবং সিপাহি আখতার (১৩ রাইফেল)। বিভিন্ন সময় ধরে সমগ্র পিলখানায় জয় বাংলা  স্লোগানটি শুনতে পাই এবং আমাদের পেছনে সরকারের সমর্থন আছে বলে সিনিয়র বিডিআর সদস্যরা জানান। সিপাহি নম্বর ৫৯১০০ মো. আলমগীর শেখও একই ধরনের তথ্য জানান।

তদন্ত প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠ সংগ্রহ করেছে। এ প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে বলা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো হচ্ছেনির্বাচনের আগে (নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) বিডিআরের বেশ কিছু সদস্য ব্যারিস্টার তাপসের অফিসে যান। নির্বাচনের তিন-চার দিন পর পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিডিআর সদস্য তাপসের বাসভন স্কাই স্টার-এ যান। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি শেখ সেলিমের বাসায় দুজন ডিএডি এবং বেসামরিক জাকিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য সাক্ষাৎ করেন। ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় তিন নম্বর গেটের সামনে বিডিআরের পক্ষে শতাধিক মানুষের মিছিল হয়। জয় বাংলা, জয় বিডিআর, বিডিআর-জনতা ভাই ভাই স্লোগান শোনা যায়। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম ১৪ সদস্যের বিডিআর প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলোচনার জন্য যমুনার উদ্দেশে  নিয়ে যান। কিন্তু ওই ১৪ জনের নামের তালিকা তদন্ত কমিশনে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বিদ্রোহীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা অধিকতর গুরুত্ব পাওয়ায় এবং বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের দাবির মুখে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের আদেশ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক সমাধান ফলপ্রসূ না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের অন্তরালে বিদ্রোহীরা হত্যাকাণ্ড, লাশ গুম করা, নির্যাতন ও লুটতরাজ শেষে পালানোর জন্য একটি রাতসহ দীর্ঘ সময় পায়। প্রতিবেদনে অধিনায়কসহ ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সদস্যদের ভূমিকা সন্দেহজনক উল্লেখ করে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলে জানায়। এ ছাড়া  গোয়েন্দাদের গোপন সূত্রের খবর অনুসারে নাসিরউদ্দিন পিন্টুর (প্রয়াত বিএনপি নেতা) সমর্থকরা বিডিআর জওয়ানদের ট্রলারযোগে পালাতে সহায়তা করেছিল কি না, তা তদন্তের মাধ্যমে তলিয়ে দেখতে বলা হয়। সেনাবাহিনী সম্পর্কে বাস্তবতাবিবর্জিত অপপ্রচার চালানোর জন্য গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করা হয়। 

তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেও বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাকারী কারা ছিল তা শনাক্ত সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা জানানো হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শিরোপা ভারত নাকি নিউজিল্যান্ডের?

মাসুদ পারভেজ, দুবাই থেকে
মাসুদ পারভেজ, দুবাই থেকে
শেয়ার
শিরোপা ভারত নাকি নিউজিল্যান্ডের?

তাদের না পারার গল্পের চর্চাই হয় বেশি। তবে এমন নয় যে নিউজিল্যান্ডের পেরে ওঠার গল্পও দু-একটা নেই। আছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যের শিকার তারা এত বেশি হয়েছে যে সৌভাগ্যের পরশ পাওয়ার ব্যাপারটি এর আড়ালে ঢাকা পড়েই থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে কেউ একজন তাদের সৌভাগ্যের কথা তুলতেই তাই চমকিত হলেন মিচেল স্যান্টনার।

কিউই অধিনায়ক বিষয়টি লুফেও নিলেন এক রকম, আশা করছি, এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সৌভাগ্যের মুখ দেখব আমরা। যদিও গত এক দশকের বিশ্ব আসরগুলো নিউজিল্যান্ডের জন্য কেবলই ব্যর্থতার। এক ওয়ানডে সংস্করণেরই চার আসরের দুটোর ফাইনালে গিয়ে হেরেছে তারা। তবে পাঁচ আসরের মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে যখন সামনে ভারত, তখন তাদের পেরে ওঠার গল্পও পিছু না নিয়ে পারেই না।
যে সাফল্যের গল্প শুধুই ভারতের বিপক্ষে।

ফাইনালে ভারতকে পেলে যে কিউইরা পারে, এর প্রথম ঘটনা ২৫ বছর আগের। ২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্ট (যেটি পরে নাম বদলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হয়) শিরোপায় রাঙিয়েছিল তারা। দুই দশক পর ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও উঁচিয়ে ধরা ভারতকে হারিয়েই।

আজ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের সামনে পড়া কিউইরা যে তৃতীয় সৌভাগ্যের সাক্ষাৎ চাইবে, সেটি খুব স্বাভাবিক।

কিন্তু ফাইনাল ভারতের জন্যও কম বড় বেদনার প্রতিশব্দ হয়ে নেই। ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতার পর থেকে তাদের আরেকটি ট্রফির অপেক্ষা ফুরাতেই চাইছিল না। ২০২৩ সালে নিজেদের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে যেতেই গোটা ভারতবর্ষ আগাম উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দেয় অস্ট্রেলিয়ার জয়।

সেই ব্যথা এখনো ভোলেননি শুভমান গিল। ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক ভুলতে চান এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা দিয়ে, ভারতের হয়ে আইসিসির প্রতিযোগিতায় এটি আমার দ্বিতীয় ফাইনাল। রোমাঞ্চিত অবশ্যই। তবে আগেরবার যা করতে পারিনি, এবার তা করতে চাই।

তা করার জন্য ১৯ দিনের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায়ও আছে ভারত। পাকিস্তান আয়োজক হলেও সেখানে গিয়ে খেলবে না বলে ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলেছে দুবাইতে। এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ধাতস্থও হয়ে গেছে তারা। তবে কিউইরা কোথাও থিতু হতে পারেনি। করাচি-রাওয়ালপিন্ডি-দুবাই-লাহোর-দুবাই করতে করতে সাত হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণও করা হয়ে গেছে তাদের। যদিও পারফরম্যান্সে সেই ভ্রমণক্লান্তির ছাপ নেই। লাহোরের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৬২ রানের পাহাড় গড়ে ফাইনালে আসা দলের অধিনায়ক তাই বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন, ভারত বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই। ওরা এই কন্ডিশনটা খুব ভালো বোঝে এবং খেলছেও দারুণ। তবে আমরাও কিন্তু দুর্দান্ত খেলছি।

দুটো সেঞ্চুরি করা তরুণ রাচিন রবীন্দ্র আছেন তুখোড় ফর্মে। অধিনায়ক স্যান্টনারও তার বাঁহাতি স্পিনে দারুণ কার্যকরী। কেন উইলিয়ামসনের অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্স কিউইদের দিয়েছে স্থিরতা। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে এক নিমেষে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানা গ্লেন ফিলিপসের বাজপাখির মতো ক্ষিপ্রতায় ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতা শিরোপা সম্ভাবনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে রাখছে না কিউইদের। এদিকে গিলও দেখালেন নিজ দলের শক্তির গভীরতা, আমি খেলেছি, এমন ভারতীয় দলের সেরা ব্যাটিং লাইনআপ এটি। পরের দিকে লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার, হার্দিক পাণ্ডে ও রবীন্দ্র জাদেজাদের উপস্থিতি আমার মতো শুরুর দিকের ব্যাটারদের নির্ভার হয়ে ব্যাটিং করার স্বাধীনতা দেয়।

অবশ্য ফাইনালের চাপ ভিন্ন জিনিস। সেটি জয় করার সাম্প্রতিক নজিরও আছে ভারতের। ওয়ানডে বিশ্বকাপের হতাশা তারা ভুলেছে গত বছর জুনে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরের ট্রফি নিয়ে উৎসব করে। গিল অবশ্য সেই দলের অংশ ছিলেন না। তবে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আরেকটি আইসিসি প্রতিযোগিতার শিরোপার নাগাল পেতে সেই সাফল্য ভীষণ সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন, অনেক সময় একটি শিরোপা জয় (ফাইনালে গিয়ে না পারার) ধারাটা ভেঙে দেয়। সেই সঙ্গে ধরিয়ে দেয় জেতার ছন্দটাও। এবারও আমরা জেতার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না।

ভারতের সুবিধা দুবাইয়ের কন্ডিশনে কিউইদের চেয়ে বেশি অভ্যস্ততা। যদিও আসরটি শেষ হতে হতে এখানকার আবহাওয়ায়ও কিছুটা বদল এসেছে। ফাইনাল হবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হওয়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উইকেটে। এরপর আর ব্যবহৃত না হওয়া উইকেটে রান বন্যাও বয়ে যাবে না বলে নিশ্চিত গিল, আবহাওয়া কিছুটা বদলালেও উইকেটে ভিন্ন কিছু হবে বলে মনে হয় না। এটি লাহোরের মতো উইকেটও নয়। লাহোরে অনেক রান হলেও দুবাইতে তা হওয়ার কথা নয়। স্যান্টনার মনে করেন, অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটি, নকআউট ম্যাচের ব্যাপারটি আলাদা। এখানে চাপ সামলে যারা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে, ভাগ্য তাদের পক্ষেই যাবে।

কিউইদের পক্ষে গেলে সেটি হবে তাদের তৃতীয় সৌভাগ্য। অবশ্য নিকট অতীতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা ভারতেরও আছে ভাগ্য পক্ষে আনার দৃঢ়তা!

মন্তব্য

রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম
রিয়াজুল ইসলাম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান হিসেবে আগামী দুই বছরের জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন সংস্থাটির সদস্য প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম। তিনি ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের স্থলাভিষিক্ত হবেন। গতকাল শনিবার চুক্তিভিত্তিক এই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এতে বলা হয়, দ্য টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৩ অনুযায়ী প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলামকে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর মেয়াদে রাজউকের চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা  হলো।

রিয়াজুল ইসলাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি। গত বছরের ২৪ অক্টোবর ওই কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সভাপতিও ছিলেন। গত ৪ মার্চ ওই কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি।

বর্তমান চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ছিদ্দিকুর রহমান সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। দুই দিন বাদে সেই আদেশ বাতিল করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

মন্তব্য
ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতার পদ স্থগিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
শেয়ার
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতার পদ স্থগিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া অপুর বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে সাংগঠনিক আচরণবিধি ভঙ্গ ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণ দেখিয়ে তাঁর পদ স্থগিত করেছে সংগঠনটি।

অপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

গত শুক্রবার রাতে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে অপুর বিরুদ্ধে চাঁদা পক্ষের মধ্যে দর-কষাকষি চলছিল।

প্রথমে অভিযুক্ত অপু ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। প্রতি-উত্তরে ইন্টারনেট ব্যবসায়ী বলেন, এই পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে যায়। অফিস দিতে পারবে না। এ সময় ব্যবসায়ী ২০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হন।
পরে অভিযুক্ত অপু ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তা নিয়ে রাতে দেখা করতে বলেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া অপু লিখিত বক্তব্যে জানান, ইউসিএল কম্পানি হলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য তাঁর সাহায্য কামনা করে। আগে তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানত এবং একজন শিক্ষার্থীর রেফারেন্স দিয়ে ব্যবসার অনুমতি পেত। তিনি তাদের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

ফোনে সেই জামানতের কথাই বলেছেন তিনি।

এদিকে শুক্রবার রাতে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহিদ আহসান সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত অপুর সদস্য পদ স্থগিত করা হয়। সাংগঠনিক আচরণবিধি ভঙ্গ ও নৈতিক স্খলনজনিত কারণ দেখিয়ে এটি করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্তকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে নাএ জন্য এক কার্যদিবসের মধ্যে আহ্বায়ক বরাবর সদুত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, গোলাম কিবরিয়া অপুর বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি।

তাকে থানায় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাদী না থাকায় মামলা হয়নি। পরে তার অভিভাবকের দায়িত্বে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

 

মন্তব্য
বিশেষ লেখা

মব জাস্টিস ধ্বংস করছে গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জন

    অদিতি করিম
শেয়ার
মব জাস্টিস ধ্বংস করছে গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জন

এক গ্লাস দুধ নষ্ট করতে যেমন এক ফোঁটা চোনাই যথেষ্ট, একটি সাজানো বাগান তছনছ করতে যেমন একটি দুষ্ট বানরই যথেষ্ট, তেমনি একটি বিরাট অর্জনও ধ্বংস করতে পারে একটি বিচ্যুতি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জনকে এখন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে মব নামের উচ্ছৃঙ্খলতা। গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সরকার মব জাস্টিস বন্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এ ধরনের মব জাস্টিস বন্ধের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপদেষ্টা যেদিন এই সংবাদ সম্মেলন করলেন, সেদিনই মধ্যরাতের পর রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে প্রকাশ্যে আক্রমণ চালায় কিছু দুর্বৃত্ত। তারা নিজেদের ছাত্র-জনতা পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে নির্বিচারে ফ্ল্যাটটি তছনছ ও লুটপাট করে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এই লুটপাট। তাদের তাণ্ডব শেষ হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হন।
তাঁরা ওই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। ওই দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পথে চিৎকার করে বলেছিল, তারা শুনেছে, ওই ফ্ল্যাটে এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এ কারণে তারা এসেছিল। অথচ যদি কেউ শুনে থাকেন, কোনো অপরাধী তার অবৈধ সম্পদ কোনো ফ্ল্যাট বা বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে, তাহলে তিনি কী করবেন? তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানাবেন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অবহিত না করে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার যে ভয়ংকর প্রবণতা, যাকে আমরা এখন বলছি মব জাস্টিস, মানুষ সেটির এক ভয়ংকর রূপ দেখল গুলশানে। এ ঘটনায় জনগণ তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানালে ছাত্র-জনতা নামধারী ডাকাতদলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নাকের ডগায় এ ঘটনা ঘটেছে। তারা কতটুকু লুটপাট করেছে, সে কথা না হয় বাদ দিলাম, তারা যে একটি বাড়িতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে, তালা ভেঙেছে, এটি বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
শুধু এটিই নয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এর মধ্যে ঢাকার খবর আমরা জানছি। কিন্তু বেশির ভাগ জেলার খবর আমাদের অগোচরে থেকে যাচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিস করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে ২৩৩টি। অন্যদিকে গত সাত মাসে এ ধরনের ২৩৩টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। দেশের কোনো জায়গা মব জাস্টিস থেকে মুক্ত নয়। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি, এমনকি নারীরা পর্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছে। সরকার যদি এসব প্রতিরোধ করতে না পারে, তাহলে গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এর সুফলও আমরা ঘরে তুলতে পারব না।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন এ দেশের ছাত্র-তরুণরা, তাঁরা কিন্তু এভাবে নির্বিচারে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, পাড়া-মহল্লায় নতুন দানব তৈরি হোক, তা চাননি। তাঁরা চেয়েছিলেন এমন একটি বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশে কেউ ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারবে না। কেউ কাউকে দমন করবে না, কেউ কাউকে নিষ্পেষণ করবে না। অর্থাৎ একটা নিষ্পেষণ ও পরাধীনতামুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বুকে নিয়েই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা দেখছি প্রতিনিয়ত নানা রকম মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটছে। খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত সাত মাসে পাড়া-মহল্লায় কিছু সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। অপরাধীচক্র বর্তমানে ছাত্র-জনতার বেশে অপরাধ করছে। এই অপরাধীরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এসবের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নায়কদের ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে। সমাজে তাঁদের সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি ভয়ংকর একটি প্রবণতা। গুলশানে যেভাবে একটি বাড়িতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইচ্ছামতো ঢুকে পড়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে বিভিন্ন স্থানে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে ইচ্ছামতো বিচার নিজ হাতে তুলে নিচ্ছে। নিরীহ মানুষের ওপর চড়াও হচ্ছে। মব জাস্টিস-এর আক্রমণ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও বাদ যাচ্ছেন না। দেশে এভাবে নৈরাজ্যকর এক মাস্তানতন্ত্র তৈরি হয়েছে। আপনি যদি ২০ থেকে ২৫ জন লোক জড়ো করতে পারেন, তাহলেই আপনি আপনার চিহ্নিত শত্রুকে পথেঘাটে ইচ্ছামতো পেটাতে পারবেন। আপনার এই অন্যায়কে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। এই ২০ থেকে ২৫ জনের সঙ্গে আরো কিছু উত্সুক জনতা যুক্ত হয়ে পৈশাচিক উৎসব করবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এসেও দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা বোঝার চেষ্টা করবে আসলে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে? ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে যাবে।

গত ৪ মার্চ (মঙ্গলবার) রাজধানীর ভাটারার জগন্নাথপুর এলাকায় মব তৈরি করে ইরানের দুজন নাগরিকসহ তিনজনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ওই দুই বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ জানায়, ইরানের আহত দুই নাগরিকের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ আহমদ (৭৪) এবং তাঁর নাতি মো. মেহেদি (১৮)। তাঁরা বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। আহত অন্যজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুই ইরানি নাগরিককে তিনি তাঁর গাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। ঘটনার পরে তিনি পালিয়ে যান। এখন প্রশ্ন হলো, বিদেশি নাগরিকরাই যদি এ ধরনের ঘটনার শিকার হন, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?

৫ আগস্টের পর থেকে কিছু সুযোগসন্ধানী এ ধরনের সুযোগ নিতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারে, বর্তমানে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। পুলিশ বাহিনী অকার্যকর। পুলিশ কোথাও কাজ করছে না। সেনাবাহিনীও অনেকটা পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। এ রকম পরিস্থিতিতে প্রথমে তারা কিছু চিহ্নিত বাড়িঘরে নির্বিচারে লুটপাট করে। ৫ আগস্ট বিভিন্ন বাড়িঘরে যারা লুটপাট করেছে তারা কেউ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আন্দোলনের চেতনার সঙ্গেও এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এরা দুর্বৃত্ত ও অপরাধী।

ধীরে ধীরে যখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে, পুলিশ কাজে যোগ দিতে শুরু করে, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়, তখন এই অপরাধীরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করে। যেহেতু ছাত্ররা গণ-অভ্যুত্থানের পর আলাদা একটি শক্তি হিসেবে এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকেও অন্য রকম একটি অবস্থানে পৌঁছেছে, ফলে দুর্বৃত্তরা কৌশল হিসেবে ছাত্র-জনতার পরিচয় ব্যবহার করা শুরু করে। এই দুর্বৃত্তরা সন্ত্রাসী কায়দায় বিভিন্ন বাড়িঘরে আক্রমণ চালিয়ে, চাঁদাবাজির মাধ্যমে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

ধরা যাক, আপনার সঙ্গে একজন ব্যক্তির সমস্যা রয়েছে। আপনি একজন মাস্তান ভাড়া করলেন এবং সেই মাস্তান আরো কয়েকজনকে জড়ো করল, তারা নিজেদের ছাত্র-জনতা পরিচয় দিল, কেউ পরিচয় দিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা হিসেবে। এ অবস্থায় কে যাচাই করবে আসলে তারা কে? এভাবে তারা একটি বাড়িতে, অফিসে, দোকানে, কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করল। অথচ এসব ঘটনায় বদনাম হচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের। এটি দ্রুত বন্ধ করা না গেলে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা অগ্রণী সৈনিক ছিলেন বা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁরা কখনো এ ধরনের দুর্বৃত্তায়ন, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। তাঁরা নতুন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরও একইভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের চরিত্র হননের নানা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধীরা লুটপাট, ছিনতাই, রাহাজানি করেছিল। এর কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল জাতিকে। ষড়যন্ত্রকারীরা সেই সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করে সফল হয়েছিল। এখনো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নায়কদের বিতর্কিত করার চক্রান্ত চলছে। মনে রাখতে হবে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। কাজেই তাঁদের নাম ব্যবহার করে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তারা আসলে ফ্যাসিবাদের দোসর, তারা স্বৈরাচারের সহযাত্রী। তারাই বাংলাদেশে স্বৈরাচার পুনর্বাসন করতে চায়। এ কারণেই তারা এ ধরনের কুিসত এবং অগ্রহণযোগ্য খেলায় মেতে উঠেছে।

এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, সরকারকে দায়িত্বশীল ও কঠোর হতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ ব্যাপারে নির্মোহ হতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, অপরাধীর কোনো দল নেই, পরিচয় নেই। যারা আক্রমণ করছে তারা আক্রমণকারী। তারা ছাত্র কি অছাত্র, জনতা কি দুর্বৃত্ত এটি দেখা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাজ নয়। অপরাধীকে নির্মোহভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। মব জাস্টিস যদি বন্ধ না হয় তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। মব জাস্টিস এখন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিবিপ্লবের আবহ সৃষ্টি করছে এই মব জাস্টিস। মব জাস্টিসকে বন্ধ করার জন্য শুধু কথা নয়, কাজও দরকার।

 

 লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

auditekarim@gmail.com

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ