<p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দুই বছর আগে থেকেই এর পরিকল্পনা হয়। দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০০৭ সালেই বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তাপসের সঙ্গে তাঁদের  বৈঠক হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাপস বিডিআর ডিজি (মহাপরিচালক) ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা অনুুমোদন করেন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শেখ সেলিমের সঙ্গেও ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য দেখা করেন। বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের জানানো হয়েছিল, ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে শেখ হাসিনা সরকারের সম্মতি আছে। সে সময় পিলখানাজুড়ে জয় বাংলা স্লোগান শোনা গেছে।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্বর ওই ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এবং তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া বিডিআরের খুনি সদস্যদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে আসে। সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির কাছেও একই স্বীকারোক্তি দেন হত্যাকারীরা। কিন্তু হত্যা পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা তো দূরের কথা, তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদেরও বাইরে থেকে যান।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) ঢাকার পিলখানা সদর দপ্তরে বিডিআর বিদ্রোহের নামে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৮ জন সেনা সদস্যকে (৫৭ জন কর্মকর্তা এবং একজন সৈনিক) নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। হত্যা করা হয় মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের স্ত্রী নাজনীন হোসেন শাকিলকেও। ওই বছরের ২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামানকে সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সদস্যসচিব করে ১০ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সশস্ত্রবাহিনীর তিনজন প্রতিনিধিও রাখা হয়। এই তিনজন প্রতিনিধির অন্যতম ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসান নাসির গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তদন্তে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপসসহ আরো কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তদন্ত কমিটির কাছে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কামরুল ইসলাম। কমিটির সভাপতি এ দুুজনকে দায়সারা গোছের কিছু প্রশ্ন করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হ্যাঁ, না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ধরনের সংক্ষিপ্ত জবাব পান। এটি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা।আমাদেরকে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়নি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, মির্জা আজম এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি দুজন মহিলা সংসদসদস্যসহ  যেসব আওয়ামী লীগ নেতা পিলখানায় ঢুকেছিলেন, তাঁরা সবাই জড়িত ছিলেন বলে আমরা মনে করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই ঘটনা তদন্তে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে যে সেনাবাহিনীর কমিটি করা হয়, সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন লে. কর্নেল (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনালের পদে অবসরপ্রাপ্ত) এ কে এম শামসুল ইসলাম শামস। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বিডিআর সদস্যরা আমাদের তদন্ত কমিটির কাছে যে স্বীকারোক্তি দেন, তাতে স্পষ্ট হয় যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িত ছিলেন। বিডিআরের দাবি, ক্ষোভ থেকে ওই নৃশংস ঘটনা ঘটেনি। এটি ছিল সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে, দেশকে অকার্যকর করতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে কাজে লাগানো হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেনাবাহিনীর তদন্ত সম্পর্কে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমেদ গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় আমি যখন তদন্তের আদেশ দিই, তখন আমাকে বলা হয়, যখন সরকার এই বিষয়ে তদন্ত করছে, তখন সেনাবাহিনী থেকে তদন্তের প্রয়োজনটা কী? ওই তদন্ত করতে সরকারের কাছ থেকে যে সাহায্য প্রয়োজন, তা আমরা পাইনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অবশ্য পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জেনারেল মঈনের ভূমিকাও সন্দেহমুক্ত নয় বলে অনেকে মনে করেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><strong><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিপাহি আশরাফুল আলমের জবানবন্দি </span></span></span></span></span></strong></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তদন্ত কমিটির কাছে যেসব বিডিআর সদস্য স্বীকারোক্তিমূলক  জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাঁদের একজন হচ্ছেন সিপাহি মো. আশরাফুল আলম ব্রান্ড। নম্বর ৫৯১১৫। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা বগুড়ার ধুনটের বেলকুচি গ্রামে। বাবার নাম মনুরুদ্দিন আকন্দ।     </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশরাফুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে বিভিন্ন সময় আমাদের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো পরিকল্পনা চলতে থাকে। আমাদের দাবিদাওয়া পূরণের লক্ষ্যে হাজারীবাগ এলাকায় ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি তখন আশ্বাস দেন  যে তাঁকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে তিনি বিডিআরের দাবিদাওয়া পূরণ করবেন। ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি জানতে পারি দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অফিসারদের জিম্মি করা হবে। সদর ব্যাটালিয়নের ব্যান্ড প্লাটুনের হাবিলদার সামাদ এ কথা আমাদের জানান। একই দিন আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ডিএডি হারুনের নেতৃত্বে রোলকলের পর গলফ গ্রাউন্ডে একটি  বৈঠক হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈঠকে নিজে এবং ডিএডি হারুন, ডিএডি তৌহিদ, সুবেদার আসাদ (৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), নায়েক সুবেদার সুলতান (৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) এবং আরো প্রায় ২৭ জন  বিডিআর সসস্য উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে আশরাফুল আলম বলেন, ওই দিন ডিএডি হারুন আমাদের সবাইকে বলেন, যেদিনই দরবার হোক, সেদিনই অফিসারদের জিম্মি করা হবে এবং আমাদের দাবিদাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। দাবিদাওয়া পূরণ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে অফিসারদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর থেকে ছোট ছোট দলে আমাদের নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হতো। ২০০৯ সালের ১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানার গলফ মাঠে ২০-২৫ জনের আরেকটি বৈঠক হয়। সেখানে ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বৈঠকের সবাই উপস্থিত ছিলেন এবং মনোবল উঁচু রেখে আগের বৈঠকের সব বিষয় কঠিনভাবে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে লিফলেট ছাপানো হয় এবং সেগুলো প্রতিটি গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে আরএসইউয়ের এফএস  সেগুলো খুলে নিয়ে আসে। এরপর ১৯  ফেব্রুয়ারি আনুমানিক রাত ৮টার দিকে হাজারীবাগ ট্যানারির  মোড়ে আউট লিভিংরত বিডিআর সদস্য নায়েক জয়নালের (৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) বাসায় আরেকটি বৈঠক হয়। বৈঠকে যোগ দেন হাবিলদার (ব্যান্ড) সামাদ, নায়েক সাত্তার (২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), হাবিলদার সামাদ (৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), হাবিলদার জয়নাল (২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) এবং  আমিসহ আরো প্রায় ১১ জন। বৈঠকে হাবিলদার সামাদ শুধু ডিজি এবং ডিজি ম্যাডামকে মেরে ফেলা হবে এবং এই ব্যাপারে  ওপরের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানান। ওই দুজনকে (ডিজি ও ডিজি ম্যাডাম) হত্যা করে লাশের  ব্যবস্থা করতে ১৯ ফেব্রুয়ারির বৈঠকেই হাজারীবাগের দুজন কসাইয়ের (কসাই হারুন ও কসাই মজিবুর)  সঙ্গে বনিবনা করা হয়। কসাই দুজনকে এই কাজের জন্য হাবিলদার সামাদ অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশরাফুল আলম তাঁর জবানবন্দিতে আরো উল্লেখ করেন, ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যারিস্টার তাপসের উপস্থিতিতে অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর (সন্ত্রাসী  লেদার লিটনের পিতা) বাসায় বৈঠক হয়। বৈঠকের সময়সীমা ছিল আনুমানিক ১৯৩০ থেকে ২১০০ ঘটিকা। এ  বৈঠকে ডিএডি   তৌহিদ, ডিএডি জলিল, হাবিলদার জসীম, হাবিলদার মোস্তফা, হাবিলদার কাওসার, হাবিলদার সামাদ, হাবিলদার বক্কর, নায়েক সুজন বডুয়া, নায়েক আজিজ, সিপাহি তারেক, সিপাহি জাকির, সিপাহি রণজিৎ, সিপাহি আলমগীর শেখ, সিপাহি আবদুল হাকিম এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। বৈঠকে আমাদের দাবিদাওয়া এবং পরিকল্পনার কথা ব্যারিস্টার তাপসকে জানানো হয়। তিনি আমাদের পরিকল্পনার কথা শোনেন এবং তাতে সম্মতি দেন। তিনি আমাদের বেশি অফিসারকে না মেরে প্রয়োজনে দু-একজনকে হত্যা করার সম্মতি দেন। ওই  বৈঠকে ব্যারিস্টার তাপসের সঙ্গে আরেকজন সংসদ সদস্য (মোচওয়ালা,  কোঁকড়ানো চুল, চশমা পরিহিত, ফরসা রং) উপস্থিত ছিলেন।  বৈঠক শেষে আনুমানিক ২১০০ ঘটিকার বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে পিলখানায় চলে আসেন। ওই  সময় ৫ নম্বর গেটে  কোনো ইন-আউট চেক হতো না। আমার জানামতে সিপাহি তারেকের সঙ্গে সংসদ সদস্য তাপসের  যোগাযোগ ছিল। তাপসের মাধ্যমে তিনি তাঁর একজন আত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। এরপর ২৩-২৪  ফেব্রুয়ারি ডিএডি তৌহিদ আমাদের মোট পাঁচটি গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন কাজ বণ্টন করে দেন। ৩৬ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার বাতেনকে তাঁর দলসহ ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের ম্যাগাজিন ভাঙার এবং ব্যান্ডের হাবিলদার সামাদের নেতৃত্বে তাঁর দলকে কেন্দ্রীয় ম্যাগাজিন ভাঙার আদেশ দেওয়া হয়। সদর ব্যাটালিয়নের হাবিলদার ফজলু ও নায়েক আনিসের নেতৃত্বে ডিজির বাসার প্রহরীদের নিরস্ত্র করার জন্য বাটা হয়। এ ছাড়া ব্যান্ডের নায়েক সুজন বড়ুয়ার নেতৃত্বে আমাকেসহ একটি বড় দলকে ৩৬ রাইফেলের ম্যাগাজিনের সব গ্রেনেড সংগ্রহ করে সবাইকে বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ব্যান্ডের হাবিলদার ফজলুর নেতৃত্বে আরেকটি দল সেন্ট্রাল কাত ভেঙে অস্ত্র সংগ্রহ এবং তা দুটি গাড়ির মাধ্যমে দরবার হলে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আশরাফুলের স্বীকারোক্তি,  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২৫  ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সকাল ০৬৩০ ঘটিকায় হাবিলদার সামাদ সদর ব্যাটালিয়নের সামনে প্রায় ৮০-৯০ জনকে ফলইন করিয়ে ব্রিফিং দেন। পরিকল্পনা মোতাবেক সকাল ৯টা থেকে সোয়া ৯টার মধ্যে আমি আমার দলের অন্য সদস্যসহ দরবার হলের পেছনে অবস্থান নিই। সিপাহি মইনুল, সিপাহি তারেক (সদর ব্যান্ড) সর্বপ্রথম দরবার হলে ঢুকে পরিকল্পনামাফিক অস্ত্র নিয়ে ডিজির পাশে অবস্থান নেন। কিন্তু সিপাহি মইনুল ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সিপাহি তারেক কিছুক্ষণের জন্য বাইরে চলে আসেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গেই সিপাহি তারেকসহ ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের নায়েক ফরহাদ ও সিপাহি তোতা মিয়া সদর ব্যান্ডের সিপাহি জসিম ও আরটিসি অ্যান্ডএস ব্যান্ডের সিপাহি শাহাবুদ্দীন এসএমজি নিয়ে দরবার হলের ভেতরে প্রবেশ করেন। সিপাহি তারেক এরপর সব অফিসারকে দরবার হলের বাইরে গিয়ে সিঙ্গেল লাইনে দাঁড়াতে বলেন। এ সময় অনেকেই চিৎকার করতে থাকেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেনাবাহিনী ও র‌্যাব পিলখানায় প্রবেশ করেছে বিডিআরদের মেরে ফেলার জন্য। সিপাহি তারেক এ সময় ডিজিকে লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি ও সিপাহি শাহাবুদ্দীনসহ আরো অনেকে লাইনে দাঁড়ানো অফিসারদের গুলি করা শুরু করি। সিপাহি তারেকের গুলিতে ডিজি মারা যান এবং আমার সামনে দাঁড়ানো কর্নেল নাফিজ আমার গুলিতে মারা যান। এরপর আমি দরবার হলের পেছন দিকে গিয়ে ঢাকার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবকেও হত্যা করি। আমাদের দলের এক সিপাহি শহীদ ক্যাপ্টেন তানভীরকে গুলি করে মেরে  ফেলে। এরপর আমি আমাদের ইএমই লাইনের দিকে চলে যাই এবং সবাইকে অস্ত্র নিতে বলি। ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের হাবিলদার মেজর (নাম জানা নেই) এবং সিপাহি পারভেজ তাঁদের উপ-অধিনায়ককে লাইন থেকে নামিয়ে এনে  গুলি করে। আমার জানামতে, দরবারে গুলি শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রায় সব অফিসারকে মেরে ফেলা হয়। শুধু যাঁরা পালিয়ে থাকতে পেরেছিলেন, তাঁরা বেঁচে যান। এরপর বিকেল ৪টার দিকে এমটির লোকজন দরবার হল ও অন্যান্য জায়গা থেকে লাশগুলো তুলে এনে হাসপাতালের কাছে এনে রাখে। সিপাহি আলমগীর লাশগুলো আনা-নেওয়ার কাজে সহায়তা করেন। হাসপাতালের নার্সরা মৃত অফিসারদের ইউনিফর্ম কেটে খুলে ফেলে এবং এমটির সৈনিকরা ইউনিফর্মগুলোতে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। লাশগুলো গুম করার জন্য দুটি গণকবর খোঁড়া হয়। একটি ১৩ ব্যাটালিয়নের মাঠে, অপরটি হাসপাতালের কাছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি লাশগুলোকে গণকবর দেওয়া হয়। ৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সুবেদার মেজর গণকবরে সব লাশ জায়গা না হওয়ায় কিছু লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়ার আদেশ দেন। ৪৪, ৩৬ ও ২৪ রাইফেলের লোকজন হাবিলদার আমজাদের নেতৃত্বে ডিজির বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে রাতে তাঁরা অন্য অফিসারদের বাসায় যান এবং লুটতরাজ করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার জানামতে, সিপাহি আলমগীর চারজনকে খুন করেন। ডিজির বাসায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আলমগীরও জড়িত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ২৪ ব্যাটালিয়নের বেশ কিছু সদস্য যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা ডিজি ম্যাডামসহ বাসায় অবস্থানরত দুজন  মেহমান এবং বাসার কাজের বুয়াসহ সবাইকে হত্যা করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরপর রাতের বেলায় আমি শুনতে পাই, অফিসারদের পরিবারদের কেন্দ্রীয় কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। এ কাজে জড়িত ছিলেন সিপাহি তারেক (সদর-ব্যান্ড), সিপাহি আতিক (সদর), সিপাহি সামাদ (২৪ রাইফেল), হাবিলদার সুভাস, হাবিলদার বাবুল কান্তি, সিপাহি বিজয় (ব্যান্ড), সিপাহি আজাদ (ব্যান্ড), হাবিলদার আজাদ (ব্যান্ড), সিপাহি মনির (১৩ রাইফেল), সিপাহি শাহীন (১৩ রাইফেল) এবং সিপাহি আখতার (১৩ রাইফেল)। বিভিন্ন সময় ধরে সমগ্র পিলখানায় জয় বাংলা  স্লোগানটি শুনতে পাই এবং আমাদের পেছনে সরকারের সমর্থন আছে বলে সিনিয়র বিডিআর সদস্যরা জানান।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিপাহি নম্বর ৫৯১০০ মো. আলমগীর শেখও একই ধরনের তথ্য জানান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তদন্ত প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি কালের কণ্ঠ সংগ্রহ করেছে। এ প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে বলা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো হচ্ছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনের আগে (নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন) বিডিআরের বেশ কিছু সদস্য ব্যারিস্টার তাপসের অফিসে যান। নির্বাচনের তিন-চার দিন পর পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিডিআর সদস্য তাপসের বাসভন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্কাই স্টার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এ যান। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি শেখ সেলিমের বাসায় দুজন ডিএডি এবং বেসামরিক জাকিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য সাক্ষাৎ করেন। ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টায় তিন নম্বর গেটের সামনে বিডিআরের পক্ষে শতাধিক মানুষের মিছিল হয়। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয় বাংলা, জয় বিডিআর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিডিআর-জনতা ভাই ভাই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> স্লোগান শোনা যায়। জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম ১৪ সদস্যের বিডিআর প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলোচনার জন্য যমুনার উদ্দেশে  নিয়ে যান। কিন্তু ওই ১৪ জনের নামের তালিকা তদন্ত কমিশনে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বিদ্রোহীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। রাজনৈতিক সমাধানের প্রচেষ্টা অধিকতর গুরুত্ব পাওয়ায় এবং বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের দাবির মুখে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের আদেশ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক সমাধান ফলপ্রসূ না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের অন্তরালে বিদ্রোহীরা হত্যাকাণ্ড, লাশ গুম করা, নির্যাতন ও লুটতরাজ শেষে পালানোর জন্য একটি রাতসহ দীর্ঘ সময় পায়। প্রতিবেদনে অধিনায়কসহ ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সদস্যদের ভূমিকা সন্দেহজনক উল্লেখ করে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন বলে জানায়। এ ছাড়া  গোয়েন্দাদের গোপন সূত্রের খবর অনুসারে নাসিরউদ্দিন পিন্টুর (প্রয়াত বিএনপি নেতা) সমর্থকরা বিডিআর জওয়ানদের ট্রলারযোগে পালাতে সহায়তা করেছিল কি না, তা তদন্তের মাধ্যমে তলিয়ে দেখতে বলা হয়। সেনাবাহিনী সম্পর্কে বাস্তবতাবিবর্জিত অপপ্রচার চালানোর জন্য গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করা হয়।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেও বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাকারী কারা ছিল তা শনাক্ত সম্ভব হয়নি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা জানানো হয়।</span></span></span></span></span></p>