সাভারে রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানো, বকেয়া মজুরি প্রদান, মজুরি বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু দাবিতে এবং ১৩ শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় পার্শ্ববর্তী আনলিমা গার্মেন্টস, আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিকদেরও রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।
তাতে সাড়া না পেয়ে তাঁরা আনলিমা গার্মেন্টস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন।
খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা মহাসড়কের মূল লেন ছেড়ে ঢাকামুখী সার্ভিস লেনে অবস্থান নেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে মজুরি ও ওভারটাইম বৃদ্ধির আন্দোলন করলে মালিকপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কথা রাখেননি।
এ নিয়ে রবিবার শ্রমিকরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তারা আলোচনা করতে অস্বীকার করেন। তারপর গতকাল কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেন। এর প্রতিবাদেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের দাবি—বেতন ৯ শতাংশ হারে বাড়ানো, হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা করা, ইফতারির বিল বাড়ানো এবং বন্ধের দিন কাজ করালে ওভারটাইমের হারে বিল দিতে হবে।
এ ছাড়া বেতনের সমহারে ঈদ বোনাস, বার্ষিক ছুটির টাকা প্রদান, ওভারটাইমের বকেয়া প্রদান ও রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানোর দাবিও রয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুল কবির জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।
গাজীপুরে গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানা ভাঙচুর, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ গার্মেন্ট শ্রমিকরা। স্থানীয় প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিক লাবনীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত আফছানা আক্তার লাবনী (৩০) ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার পাররুখী গ্রামের আফসার আলীর মেয়ে। তিনি স্বামী হৃদয় হোসেনের (৩৫) সঙ্গে গাজীপুর সদর থানার হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুরে এক নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। পরের দিন (গতকাল) সকালে ‘কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মৃত্যু’ হয়েছে অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
একপর্যায়ে তাঁরা মহাসড়কে টায়ার ও আগুন ধরিয়ে দেন এবং কারখানায় ভাঙচুর চালান। কারখানার সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। এতে ওই এলাকার অন্য কারখানাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ডবাজার, নাওজোর, ছয়দানা মালেকের বাড়ি এলাকার অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ওই মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে সকাল ১০টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
লাবনীর মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। শ্রমিকদের দাবি, রবিবার কারখানায় কাজ করার সময় লাবনী অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিলে তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, লাবনী কারখানা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। ছাদে ওঠা এবং লাফ দিয়ে পড়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।
লাবনীর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা কারখানায় এসে ঘটনার জন্য স্বামী হৃদয়কে দায়ী করেন। চাকরি করা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া ও মনোমালিন্য চলছিল।
বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ জানান, লাবনীর স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী হৃদয়কে রবিবার বিকেলেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার পরও গুজব ছড়িয়ে শ্রমিকদের একটি মহল সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।