জাতীয় সংসদই সংবিধান সংস্কার করবে

  • ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে মতামত চূড়ান্ত বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জাতীয় সংসদই সংবিধান সংস্কার করবে

বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল না করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ন্যূনতম সময়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদ প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের ওপর মতামতে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছে বিএনপি।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে যে খসড়া ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, তার ওপর পরামর্শমূলক ঘোষণাপত্র তৈরি করেছে দলটি।

বিএনপি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এই ঘোষণাপত্রকে প্রোক্লেমেশন না বলে ডিক্লারেশন বলে উল্লেখ করেছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে দলটির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, কোনো বিপ্লব সফল করার আগে প্রোক্লেমেশন দেওয়া হয়। বিপ্লব হওয়ার পর দিলে তাকে ডিক্লারেশন বলতে হবে। বিএনপি এই ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে গণ্য করার পক্ষে নয়।

বিএনপির তৈরি করা মতামতের খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পরিক্রমা তুলে ধরা হয়েছে। ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী শাসন যাতে আর ফিরে না আসতে পারে, সে ব্যাপারে দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে।

এতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গুম-খুন থেকে শুরু করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী সব অপরাধের বিচার চায় বিএনপি।

সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া খসড়া ঘোষণাপত্রের মূল চেতনা অক্ষুুণ্ন রেখে নানা সংযোজন ও বিয়োজন করেছে বিএনপি।

এই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা উচিত বলে মনে করে দলটি।

মতামত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের কথা বলা হলেও বিএনপি তা পাশ কাটিয়ে পরবর্তী সংসদে তা সংস্কারের কথা বলেছে।

সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ ও অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ মানুষের মতামত ও প্রত্যাশাকে প্রতিফলন করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যর্থ করার পথ সুগম করেছিল। এ ছাড়া বিগত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন করে বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। তাই আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।

বিএনপি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, ফ্যাসিবাদের পতনের পর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

ঘোষণাপত্রে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার চাই বলা হলেও বিএনপি বলছে, বাংলাদেশের জনগণ ন্যূনতম সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গত ৩১ ডিসেম্বর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপির আপত্তির কারণে সেই ঘোষণাটা আসেনি। পরে সরকারের পক্ষ থেকেই এই ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত ১৬ জানুয়ারি সর্বদলীয় বৈঠক হয়। সেখানে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যেকোনো গণ-অভ্যুত্থান, গণ-আন্দোলনের রাজনৈতিক দলিল প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতৈক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এর আইনি ভিত্তি কী হবে, সে ব্যাপারেও যথেষ্ট আলোচনা-পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে।

এরপর বিএনপিদলীয় নীতিনির্ধারণী ফোরামে একাধিক বৈঠক করা হয়। ছাত্রদের প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগকে প্রত্যাখ্যান না করে বাস্তবতার নিরিখে খসড়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে মতামত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপি তাদের এই খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে এরই মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের মতামত নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার ১২ দলীয় জোট, খেলাফত ইসলামী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। এ ছাড়া বৈঠক করবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সঙ্গেও। কারণ বিএনপি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করতে চায়।

বিএনপির তৈরি করা পরামর্শমূলক ঘোষণাপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের খসড়া ঘোষণাপত্রে স্বাধীনতাযুদ্ধকে জনযুদ্ধ আর বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ বলেছে। দলটি ঘোষণাপত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার কথাও বলেছে, যেটি খসড়া ঘোষণাপত্রে নেই।

হাসিনার পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়েও ভিন্ন মত দিয়ে বিএনপি বলেছে, ফ্যাসিবাদের পতনের নিমিত্তে ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু খসড়া ঘোষণাপত্রে আছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ পরিচালনা করে এবং অবৈধ ও অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।

আওয়ামী শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হওয়াদের নিয়েও ভিন্নতা রয়েছে। খসড়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যত্র ছাত্র ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়।  

সরকারের খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী আপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যদিকে বিএনপির মতামতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম, খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে উল্লেখ করা হয়। এর সঙ্গেও দ্বিমত আছে বিএনপির।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বকেয়া মজুরি প্রদানসহ কয়েকটি দাবিতে সাভারে সড়ক অবরোধ শ্রমিকদের

    গাজীপুরে গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর ও সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর ও সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা
শেয়ার
বকেয়া মজুরি প্রদানসহ কয়েকটি দাবিতে সাভারে সড়ক অবরোধ শ্রমিকদের
বকেয়া মজুরি প্রদান, মজুরি বৃদ্ধি, ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল সাভারের উলাইল এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। ছবি : কালের কণ্ঠ

সাভারে রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানো, বকেয়া মজুরি প্রদান, মজুরি বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু দাবিতে এবং ১৩ শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ডায়নামিক সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাভারের উলাইল এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় পার্শ্ববর্তী আনলিমা গার্মেন্টস, আল মুসলিম গার্মেন্টসের শ্রমিকদেরও রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান আন্দোলনকারীরা।

তাতে সাড়া না পেয়ে তাঁরা আনলিমা গার্মেন্টস লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়েন।

খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা মহাসড়কের মূল লেন ছেড়ে ঢাকামুখী সার্ভিস লেনে অবস্থান নেন।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে মজুরি ও ওভারটাইম বৃদ্ধির আন্দোলন করলে মালিকপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু কথা রাখেননি।

এ নিয়ে রবিবার শ্রমিকরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তারা আলোচনা করতে অস্বীকার করেন। তারপর গতকাল কারখানা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেন। এর প্রতিবাদেই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের দাবিবেতন ৯ শতাংশ হারে বাড়ানো, হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা করা, ইফতারির বিল বাড়ানো এবং বন্ধের দিন কাজ করালে ওভারটাইমের হারে বিল দিতে হবে।

এ ছাড়া বেতনের সমহারে ঈদ বোনাস, বার্ষিক ছুটির টাকা প্রদান, ওভারটাইমের বকেয়া প্রদান ও রমজান মাসে কর্মঘণ্টা কমানোর দাবিও রয়েছে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুল কবির জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।

গাজীপুরে গুজব ছড়িয়ে ভাঙচুর

গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস এলাকায় এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারখানা ভাঙচুর, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ গার্মেন্ট শ্রমিকরা। স্থানীয় প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিক লাবনীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহত আফছানা আক্তার লাবনী (৩০) ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার পাররুখী গ্রামের আফসার আলীর মেয়ে। তিনি স্বামী হৃদয় হোসেনের (৩৫) সঙ্গে গাজীপুর সদর থানার হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুরে এক নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। পরের দিন (গতকাল) সকালে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

একপর্যায়ে তাঁরা মহাসড়কে টায়ার ও আগুন ধরিয়ে দেন এবং কারখানায় ভাঙচুর চালান। কারখানার সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। এতে ওই এলাকার অন্য কারখানাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ডবাজার, নাওজোর, ছয়দানা মালেকের বাড়ি এলাকার অন্তত ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ওই মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে সকাল ১০টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

লাবনীর মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। শ্রমিকদের দাবি, রবিবার কারখানায় কাজ করার সময় লাবনী অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিলে তিনি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, লাবনী কারখানা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। ছাদে ওঠা এবং লাফ দিয়ে পড়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।

লাবনীর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা কারখানায় এসে ঘটনার জন্য স্বামী হৃদয়কে দায়ী করেন। চাকরি করা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া ও মনোমালিন্য চলছিল।

বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ জানান, লাবনীর স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বামী হৃদয়কে রবিবার বিকেলেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার পরও গুজব ছড়িয়ে শ্রমিকদের একটি মহল সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

মন্তব্য

বরিশালে যুবদল নেতাসহ চট্টগ্রাম-মোহনগঞ্জে তিন খুন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বরিশালে যুবদল নেতাসহ চট্টগ্রাম-মোহনগঞ্জে তিন খুন

বরিশালে জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধের জেরে এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে খুনের অভিযোগ উঠেছে যুবকের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ছুরিকাঘাতে দুজনকে খুন করা হয়েছে।

এ ছাড়া কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও রাজশাহীর পবা উপজেলায় দুই মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

বরিশাল : বরিশালে জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধের জেরে সুরুজ গাজী (৩৫) নামের এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহীন হাওলাদারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর কাউনিয়া শের-ই-বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।

সুরুজ গাজী ওই এলাকার কাঞ্চন গাজীর ছেলে এবং সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া আহত নয়ন গাজী একই এলাকার তসলিম গাজীর ছেলে এবং ওই ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। শাহীনও একই ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাহীন হাওলাদার ও সুরুজ গাজী অন্যের জমি বিক্রির কাজের সঙ্গে জড়িত।

এ নিয়ে দুজনের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। বিষয়টি নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে শাহীন হাওলাদারের নেতৃত্বে তাঁর ছেলে ইমনসহ কয়েকজন গিয়ে সুরুজ গাজীকে কুপিয়ে জখম করে। সুরুজকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে নয়নকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। স্থানীয় লোকজন দুজনকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরুজকে মৃত ঘোষণা করেন।
নয়ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে শাহীনের বাড়িতে আগুন দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

জানতে চাইলে কাউনিয়া থানার ওসি নাজমুল নিশাত বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কুপিয়েছে। এতে একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ মাঠে রয়েছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গত রবিবার মধ্যরাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার জেল রোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর শাহেদ হোসেন নামের হামলাকারীকে ধরে পুলিশে দিয়েছে পথচারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছুরি নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে জেল রোডের মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহেদ হোসেন। এ সময় আমানত শাহ মাজার সংলগ্ন এলাকায় ভবঘুরে যুবকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি শুরু হয় তাঁর। এক পর্যায়ে শাহেদ ওই ভবঘুরে যুবককে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পথচারীরা তাঁকে ধরে পুলিশে দেয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কসবায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে খুনের অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গত রবিবার গভীর রাতে উপজেলার ধজনগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার সকালে পুলিশ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন ধজনগর গ্রামের রওশন আলীর মেয়ে যুঁথী আক্তার (২২) ও তাঁর বোন স্মৃতি আক্তার (১৪)। যুঁথী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। বছর দেড়েক আগে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জামতলী গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে আমীর হোসেনের সঙ্গে যুঁথীর বিয়ে হয়। স্মৃতি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। তাদের বাবা বেঁচে নেই। একটি মামলায় মা জেলহাজতে আছেন। বড় এক ভাই প্রবাসে থাকেন।

যুঁথী ও স্মৃতির মামাতো ভাই মো. মহসীন বলেন, বিকেলে আমাকে জানানো হয়, তাদের ঘরে ইফতার করার মতো কিছু নেই। আমি ইফতার কিনে দিই। আমাকে ইফতার করার জন্য বলা হলেও আমি আসতে পারিনি। আজ (সোমবার) সকালে দুই বোনের লাশ খাটে পড়ে থাকার খবর পাই।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ ছিল উল্লেখ করে মহসীন বলেন, রবিবার রাতে যুঁথীর স্বামী আমীর হোসেন এ বাড়িতেই (শ্বশুরবাড়ি) ছিলেন। শ্যালক জাহিদকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বলেন। রাতে জাহিদ উঠে তার বোনরা রোজা রাখবে কি না জানার জন্য ডাকতে যেতে চাইলে আমীর বাধা দেন। এক পর্যায়ে তিনি ঘর থেকে সটকে পড়েন।

কসবা থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল কাদের জানান, দুজনকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার কারণ জানা যায়নি।

নেত্রকোনা : মোহনগঞ্জ উপজেলার টেংগাপাড়ায় গত রবিবার রাতে রাব্বি (২২) নামের এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাব্বি টেংগাপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী আনিছ মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন টেংগাপাড়া এলাকার রাফি মিয়া ও নওহাল এলাকার সুজন মিয়া। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাব্বি তাঁর বাবার সঙ্গে মাছের ব্যবসা করতেন। গত রবিবার রাত ৮টার দিকে তাঁকে ওই এলাকার রেলস্টেশন পুকুরপারে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

কুষ্টিয়া : নিখোঁজের পাঁচ দিন পর কুমারখালী উপজেলায় বালুভর্তি বস্তার নিচ থেকে শিহাব (১০) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার চর ঘোষপুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। শিহাব ঘোষপুর এলাকার রতন শেখের ছেলে। বাবা নিরুদ্দেশ হওয়ার পর শিহাব তার মা তাসলিমা খাতুনের সঙ্গে সরকারি আবাসন প্রকল্প গুচ্ছগ্রামে থাকত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয় সে।

রাজশাহী : নদীর ধার থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে পবা উপজেলার বারনই নদীর ধার বাকসারা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। মৃত আলতাফ হোসেন (৪৫) পেশায় ভ্যানচালক। তিনি উপজেলার বাকসারা নওদাপাড়ার মনসুর আলীর ছেলে।

মন্তব্য
জামায়াত আমির

অমর্ত্য সেন স্বৈরাচারের পক্ষে ওকালতি করছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অমর্ত্য সেন স্বৈরাচারের পক্ষে ওকালতি করছেন

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তীব্র ভাষায় তার সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ টানা সাড়ে ১৫ বছর সেক্যুলারিজমের নামে চরম ভণ্ডামি প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে খোলামেলা ওকালতি করছেন, যা বিস্ময়কর, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

ফেসবুক পোস্টে শফিকুর রহমান বলেন, ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত নাক গলানোর মতো কথা বলেছেন। জানি না তাঁর বিবেক কোথায়। বাংলাদেশকে সহনশীলতার সবক দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি যে দেশে এবং সমাজে বসবাস করেন, সেই সমাজের আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করুন।

তিনি পোস্টে আরো লেখেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে যা বলেছেন তার বদ্ধমূল ধারণা থেকে বলতে চেয়েছেন। বাস্তবতা পুরোটাই উল্টো। সংখ্যালঘু বলে তিনি যাদের চিহ্নিত করেছেন, সেই সব ভাই-বোনের ওপর নির্যাতনকারী দানবের নাম হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সাহস থাকলে তা বলে দিন।

পারবেন না। কারণ আপনারা সীমাবদ্ধ সুশীল।

শফিকুর রহমান লেখেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সময়-অসময়ে নাক গলানো দেশপ্রেমিক জনগণ একেবারেই পছন্দ করেন না।

শহীদের রক্ত নিয়ে জামায়াত রাজনীতি করে না : ঢাকার লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে গতকাল এক অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান বলেন, শহীদের রক্ত নিয়ে যারা রাজনীতি করে করুক, জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের নিয়ে রাজনীতি করবে না। জামায়াত শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের জাতীয় সম্পদ হিসেবেই মূল্যায়ন করে এবং করবে।

আহত, পঙ্গু, শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজনে ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

মডেল রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন আদর্শবাদী লোক : গোলাম পরওয়ার

খুলনা অফিস জানায়, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি মডেল রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে আদর্শবাদী ও চরিত্রবান লোক তৈরি করতে হবে। এ জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তিনি গতকাল খুলনা নগরের তারের পুকুরে দলের খুলনা মহানগরীর অফিস উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

জামায়াতের মহানগর আমির মাহফুজুর রহমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

 

 

 

মন্তব্য
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা

আপিলেও খালাস খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আপিলেও খালাস খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জোনরেল অনীক রুশদ হক।

দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম, জাকির হোসেন ভূঁইয়া।

আদেশের পর আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য দুদককে ব্যবহার করে মামলা দিয়েছিল।

আর আদালতকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছিল। বিচারিক আদালত সাজা দিলেও হাইকোর্টের পর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন।

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটিতে অভিযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কিন্তু মামলার বাদী, তদন্তকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সব সাক্ষী এককথায় স্বীকার করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর কোথাও ছিল না।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর এ মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

শুধু তা-ই নয়, ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছিলেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান। ওই বছর ১৪ নভেম্বর রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার চার দিন পর ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার আপিলের সঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনও করা হয়েছিল।

বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড বাতিল ও খালাস চাওয়া হয় আপিলে। পরে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল এই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। এরপর গত ছয় বছর এই মামলার কোনো অগ্রগতি ছিল না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। পতনের পরদিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি। দণ্ড মওকুফের পরও জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা আইনিভাবে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এ কারণে গত বছর নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে দুটি আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। দুটি আবেদনের একটি ছিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিলের পেপারবুক তৈরির অনুমতি চেয়ে আবেদন। গত বছর ৩ নভেম্বর অনুমতি পাওয়ার পর আপিল শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি করা হয়। সে ধারাবাহিকতায় শুনানির পর ২৭ নভেম্বর রায় দেন উচ্চ আদালত। বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বিএনপির চেয়ারপারসনের আপিল মঞ্জুর করে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করে রাষ্ট্রপক্ষ। দুদকও পরে আবেদন করে। দুটি আবেদনে শুনানির পর তা খারিজ করে দিলেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে হাইকোর্টের খালাসের রায়ই বহাল থাকল।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ