।
সম্পর্কিত খবর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু আমরা এখনো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আদর্শভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। আমরা আশা করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিকারের শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। এখান থেকে আদর্শ ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরি হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি কনভেনশন হলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনার আগে তিনি এসব কথা বলেন। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে ইসলামী ছাত্রশিবির এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
জামায়াত আমির বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে এ জাতি মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি।
এ সময় জামায়াতের শীর্ষ এই নেতা জুলাই আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৬ বছর আমাদের জন্য এক দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং যাত্রা ছিল। এই সময়ে আমরা ফ্যাসিবাদের করালগ্রাসে শতাধিক ভাইকে হারিয়েছি। অসংখ্য ভাই ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের শিকার হয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন, কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, হাজার হাজার ভাই গুম হয়েছেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তাফা হায়দার, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি রাশেদ প্রধানসহ রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা।
রাজনীতি করতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে : মিয়া গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অভিযোগ করেছেন, একটি গোষ্ঠী দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু ওই গোষ্ঠী চাইছে অবিলম্বে নির্বাচন হোক।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বকশীবাজারে কারা কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী চকবাজার থানা আয়োজিত ইফতার মাহফিলপূর্ব আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি নিজের ও দলের স্বার্থে নয়; বরং জনগণের কল্যাণে, দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করার আহ্বান জানান।
যারা বলে ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবে, তারা অতীতে ক্ষমতায় থেকে কী করেছে—এমন প্রশ্ন রেখে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণকে আর ধোঁকা দেওয়া যাবে না। বিশ্বায়নের যুগে মানুষ এখন সচেতন, তারা বাস্তবতা বোঝে। তাই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে রাজনীতি করা উচিত।
চকবাজার দক্ষিণ থানা আমির মো. আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও চকবাজার পশ্চিম থানা আমির আবুল হোসাইন রাজনের সঞ্চালনায় সভায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাজি হাফেজ এনায়েত উল্লাহ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ কর্মপরিষদের সদস্য আবদুর রহমান, অধ্যক্ষ এস এম আহসান উল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদ উদ্দিন খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ডাকা টানা দুই দিনের কর্মবিরতিতে বুধবার দেশের বেশির ভাগ হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। কিছু হাসপাতালে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা রোগী দেখেন। এতে দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা।
অনেকে টিকিট হাতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যায়।
এই কর্মসূচিতে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, শিশু হাসপাতালসহ আরো কয়েকটিতে দেরিতে হলেও কোনো কোনো বিভাগের বহির্বিভাগে রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা।
শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের দাবির মুখে গতকাল ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাঁদের নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গতকাল রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেননি শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা। ফলে আজ বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে জানান বেশির ভাগ চিকিৎসক।
এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার পর থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন। এর মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে খবর আসে, ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাঁদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একটি দাবি পূরণ হলেও বাকি চার দাবি আদায়ে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা সচিবালয় অভিমুখে যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় চিকিৎসক ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের লং মার্চ আটকে যাওয়ার পর চার দফা দাবি নিয়ে তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করছিল। ১৫ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সোহাগ।
পাঁচ দফা দাবি আদায়ে গঠিত ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য চিকিৎসক তাওহিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের একটি দাবি পূরণ করা হয়েছে। এখন আমাদের আরো চারটি দাবি রয়েছে।
দাবিগুলো হলো : রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস/বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না, আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনর্নির্ধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে। অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতনকাঠামো (পে স্কেল) তৈরি করতে হবে।
বরিশালে কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় চিকিৎসা না নিয়ে শত শত রোগী ফেরত যায়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ওটিসহ অভ্যন্তরীণ চিকিৎসাসেবা চালু আছে।
চমেক হাসপাতালে রোগীদের দুর্ভোগ : শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসেবায় প্রভাব না পড়লেও ইনডোর-আউটডোরে প্রভাব পড়েছে। কর্মবিরতির কারণে আগের দিনের মতো গতকালও বহির্বিভাগ চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে ফিরে গেছে। সকাল ১১টার পর থেকে আউটডোরে রোগীর টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় চিকিৎসক দেখাতে না পেরে রোগীরা ফিরে যায়। আর ইনডোরে প্রভাব পড়েছে দুপুর আড়াইটার পর থেকে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বহির্বিভাগে কিছুটা প্রভাব পড়লেও অন্তর্বিভাগে অন্যান্য চিকিৎসক থাকায় রোগীদের চিকিৎসাসেবায় সমস্যা হয়নি।
কর্মবিরতিতে অচল খুলনা : চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে অচল হয়ে পড়েছে খুলনার স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষ করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা পড়েছে বিপাকে। গতকাল হাইকোর্টের রায়ে চিকিৎসকদের মূল দাবি পূরণ হওয়ায় আগামীকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা করছে হাসপাতল কর্তৃপক্ষ।
রংপুরে চিকিৎসা কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব : রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একাডেমিক শাটডাউন, শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন এবং চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দ্বিতীয় দিনের মতো আউটডোর বন্ধসহ কর্মবিরতি পালন করায় চিকিৎসা কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে পড়ে। শত শত রোগী ও স্বজনরা আউটডোরের সামনে ভিড় করছে।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত, সাবেক এমপি এবং স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও জ্বালানি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সিনিয়র এই রাজনীতিবিদ। তিনি প্রাণবন্ত আলোচনা করেছেন সমসাময়িক রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। মূল্যবান মতামত দিয়েছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে।
প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস হলো। এই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল বা ব্যর্থ বলে মনে করেন?
উত্তর : প্রথম কথা হলো—এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেবে। গত ১৬ বছর জনগণ ভোটের অধিকার পায়নি। সেই লক্ষ্যে সরকার কোনো সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি এখনো।
প্রশ্ন : সব মিলিয়ে সরকারকে কত মার্ক দিতে চান?
উত্তর : আমি মার্ক দেওয়ার কেউ না। আমি মনে করি না মূল্যায়ন করার অধিকার আমার আছে। আমরা আশা করি, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে সরকার।
প্রশ্ন : সত্তরে গণপরিষদ নির্বাচন হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় এবারও জাতীয় জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনে যেন হয়ে যায়, এ বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন? বলা হচ্ছে, সত্তরে গণপরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উত্তর : বলা হবে কেন, যা হয়েছে তা তো চোখের সামনেই হয়েছে। ওটা ছিল পাকিস্তানি নির্বাচন। পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নির্বাচন এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলি নির্বাচন। তার পরে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাখো শহীদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বাধীন দেশে ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয় সংসদকে সেই সময় ঘোষণা দেওয়া হয়, এটি হচ্ছে গণপরিষদ। এখানে কোনো গণপরিষদে নির্বাচন হয়নি। এটা ভুল বোঝানো হচ্ছে। কেননা বর্তমানে যে নির্বাচন কমিশন আছে, তাদের যে দায়িত্বগুলো আছে, তাতে গণপরিষদ নির্বাচনের কোনো বিধান নেই।
প্রশ্ন : একসময় আন্দোলনের মিত্র ছিল জামায়াতে ইসলামী। সেই জায়গায় এখন অনেকটা টানাপড়েন দেখা যাচ্ছে। এ বিরোধের কারণে তৃতীয় পক্ষ কোনো সুবিধা নিচ্ছে কি না?
উত্তর : এখানে কোথায় টানাপড়েন হচ্ছে, আমি দেখতে পাচ্ছি না, কেননা জুলাই-আগস্ট আন্দোলন পর্যন্ত আমরা এই ছাত্র-জনতার সঙ্গে একতা ঘোষণা করে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়, দুর্নীতি ঘুষ অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছি। সে আন্দোলনে আমরা এখনো আছি। একটি সরকারের পতন হয়েছে, আরেকটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনে আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই একমত আছি। তবে আমরা এটা বলতে চাই না, নতুন দলটি সরকারের প্রতিষ্ঠিত একটি দল।
প্রশ্ন : বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কে জামায়াতের নামে বক্তব্য আসছে, আবার জামায়াতও বিএনপির নামে বক্তব্য দিচ্ছে, এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
উত্তর : বিএনপির নামে কিছু বলছে, এটা আমরা বলব না। বিএনপি কোনো দলের বিরুদ্ধে বলে না। আমরা আমাদের দলের যে আদর্শ, সে ব্যাপারে কথা বলি। বাংলাদেশে বর্তমান পর্যন্ত যারা আন্দোলনে আছে, তাদের অনেকেই জাতীয়তাবাদী ধারণায় বিশ্বাস করে না। তার মানে এই নয় যে সব দল যারা আন্দোলনে আছে, তাদের বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করতে হবে।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে শোনা যাচ্ছে, বিএনপিতে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। আপনারা কী ভাবছেন?
উত্তর : এটা হতেই পারে। একটি পতিত দল বাংলাদেশে আছে, অনেকে বিদেশে পালিয়ে গেছে। তারা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। এটা যেমন জনগণ বুঝছে এবং এই সরকারও তা প্রকাশ করেছে। অশান্তি সৃষ্টির জন্য তারা বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করবে। যারা নতুন দল করেছে সেই দলে এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে যে সেখানে অনুপ্রবেশ হয়েছে। আমরা এ ধরনের সংবাদ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রশ্ন : ছাত্রদের জন্য বিএনপি কী প্রতিশ্রুতি দেবে?
উত্তর : আমাদের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে সবার জন্য। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল। অতএব আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা নির্বাচনে আসবে, আমরা তাদের স্বাগত জানাব। জনগণের ওপর নির্ভর করবে জনগণ কাদের নির্বাচিত করবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এ সরকার নানাভাবে দুর্বলতা দেখাচ্ছে।
প্রশ্ন : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো জোট করার পরিকল্পনা আছে কি?
উত্তর : এখন পর্যন্ত এ ধরনের আলোচনা নিজেদের মধ্যে হয়নি। তবে অতীতে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, নির্বাচনের আগে যখন রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, তার পরে আলাপ-আলোচনা হতেও পারে, না-ও হতে পারে। এ সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাবে না।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী আর নেই। তিনি গতকাল বুধবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টা ৩১ মিনিট) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বেশ কিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।
সৈয়দ আলমাস কবির তাঁর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মৃত্যুর সময় তাঁর দুই সন্তানই বাবার শয্যার পাশে ছিলেন।’
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের উদ্যোক্তাজগতে সবার শ্রদ্ধাভাজন, দেশপ্রেমিক, শিল্পপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক জানাই। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের উদ্যোক্তাজগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এক শোকবার্তায় বলেন, ‘সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে বসুন্ধরা গ্রুপ ও আমার পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর জীবন ও কর্ম আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার বিরাট উৎস হয়ে থাকবে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মরদেহ দেশে আনার পর তাঁর জানাজা আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁকে বনানী কবরস্থানে স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুরের কবরের পাশে দাফন করা হবে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির (এমটিবি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাবসায়িক সংগঠক ছিলেন। বাণিজ্য ও শিল্পে অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ কর্তৃক ‘২০০০ সালের ব্যাবসায়িক নির্বাহী’ এবং ‘২০০২ সালের ব্যাবসায়িক ব্যক্তিত্ব’ পুরস্কার। তিনি দুইবার (১৯৯৬ ও ২০০১) বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর মঞ্জুর এলাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পর তিনি বহুজাতিক কম্পানি পাকিস্তান টোব্যাকোতে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি এপেক্স ট্যানারি প্রতিষ্ঠা করেন, যা তাঁর উদ্যোক্তাযাত্রার ভিত্তি স্থাপন করে।
আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি পরবর্তী সময়ে জাপানে জুতা রপ্তানির জন্য এপেক্স ফুটওয়্যার প্রতিষ্ঠা করেন। জাপানি নির্মাতাদের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করে এপেক্স ফুটওয়্যার বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি শিল্পে একটি অগ্রণী কম্পানিতে পরিণত হয়।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে জুতা রপ্তানির ক্ষেত্রেও মঞ্জুর এলাহী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এক পর্যায়ে তিনি ইতালীয় পাদুকা ব্যবসায়ী আদেলচির সঙ্গে অংশীদারির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে তাঁর উপস্থিতি আরো জোরদার করেন।
মঞ্জুর এলাহীর পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বাইনান গ্রামে। তিনি ১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করনে। তাঁর বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী কলকাতায় অবিভক্ত বাংলার প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বড় ভাই বিচারপতি এস এ মাসুদ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং ‘পদ্মভূষণ পুরস্কার’ এবং ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু’ সম্মানে ভূষিত হন।