ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি

প্রথম আলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জামায়াত আমিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রথম আলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জামায়াত আমিরের
প্রথম আলোর গত ৩০ মার্চের পত্রিকায় ঈদ শুভেচ্ছার কার্টুনে কুকুরের ছবি (লাল বৃত্ত)

প্রথম আলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি লিখেছেন, প্রথম আলো ঈদের মতো একটি পবিত্র ইবাদতকেও কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেনি। গত সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ কথা লেখেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান লেখেন, প্রথম আলোর ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবিএ কেমন অদ্ভুত আচরণ? প্রথম আলোর গত ৩০ মার্চের পত্রিকায় ঈদ শুভেচ্ছার কার্টুনে কুকুরের ছবি ব্যবহার করেছে।

পত্রিকাটা এর আগেও মহানবী (সা.)-কে অবমাননায় বায়তুল মোকাররমের খতিবের হাত ধরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান সম্পাদক মতিউর রহমান।

তিনি আরো লেখেন, মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি খুবই জঘন্য। প্রথম আলো ঈদের মতো একটি পবিত্র ইবাদতকেও কটাক্ষ করতে দ্বিধা করেনি। তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চের প্রথম আলো পত্রিকায় ঈদ শুভেচ্ছার কার্টুনে কুকুরের ছবি প্রকাশ করায় দেশের আলেমসমাজসহ সাধারণ মানুষ এর তীব্র নিন্দা জানানো অব্যাহত রেখেছে।

এর আগে ২০০৭ সালে আরেকবার ধর্ম অবমাননার কারণে সারা দেশের আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষ যখন মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার ও প্রথম আলো নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে, সে সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মধ্যস্থতায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের তৎকালীন খতিব মাওলানা উবায়দুল হকের হাত ধরে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবা করেন মতিউর রহমান। তাওবা করে বলেছিলেন, ধর্মে আঘাত আসে এমন কিছু আর কখনোই করবেন না।

কিন্তু গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন ৩০ মার্চ আবারও প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে ঈদ মোবারক লেখার পাশে কুকুরের ছবি ছেপে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ধর্ম অবমাননা করা হয়েছে।

নতুন করে ঈদ শুভেচ্ছার কার্টুনে কুকুরের ছবি ব্যবহার করে ধর্ম অবমাননা করার পর থেকে প্রথম আলো নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন দেশের আলেমসমাজ।

এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ বিভিন্ন ইসলামী দল তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির প্রথম আলোকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন।

এদিকে প্রথম আলোর ইসলামবিদ্বেষ ও ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদ করায় জামায়াতের আমিরকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন নেটিজেনরা। জামায়াতের আমিরকে সমর্থন করে নানা মন্তব্য লিখছেন তাঁরা।

আহনাফ মাহদি নামের এক ব্যক্তি ওই পোস্টে লিখেছেন, প্রথম আলোর ডিক্লারেশন বাতিলের পক্ষে আন্দোলন হতে হবে, এমন ইসলামবিরোধী, দেশবিরোধী পত্রিকা বাংলাদেশে চলতে পারে না। মো. সৌরভ হোসেন নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, অবিলম্বে প্রথম আলো নিষিদ্ধ করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

একইভাবে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের ওই পোস্ট শেয়ার করে ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদ করায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন হাজারো মানুষ। সুমন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, জামায়াতের আমিরকে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য ভেতর থেকে ভালোবাসা রইল। ফয়েজ আহমেদ লিখেছেন, বাংলাদেশে এদের সব প্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।

জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, ঈদের চাঁদের পাশে কুকুরের ছবি প্রকাশ আপত্তিকর। এটা ধর্মীয় অবমাননার শামিল। কুকুরের ছবি দিয়ে তারা কী বোঝাল?

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম বলেন, ঈদের খুশিতে একটা কুকুরের দৃশ্যমান ছবি দ্বারা মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাকে হেয় করা হলো। এটা ধর্ম অবমাননার শামিল।

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ঈদের চাঁদের কার্টুনের সঙ্গে কুকুরের ছবি আঁকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রথম আলো পত্রিকায় এই কার্টুন ছবির মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র ঈদের চাঁদের সঙ্গে কুকুরের ছবি এঁকে ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত করা হয়েছে। এই কার্টুনের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈদ উদযাপনকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে। এই কার্টুনের জন্য প্রথম আলো পত্রিকাকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

প্রথম আলোর এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। এক বিবৃতিতে দলের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক ও মহাসচিব মাওলানা মুমিনুল ইসলাম বলেন, প্রথম আলো ঈদ সংখ্যায় কার্টুনে কুকুরের ছবি দিয়ে দেশের কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে ও ঈমানে আঘাত করেছে। আমরা দেখছি যে ওই পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কিছুদিন পর পর ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আঘাত করে আসছে। ইসলামবিরোধী তৎপরতা উসকে দিচ্ছে। নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ইসলামবিরোধী তৎপরতা থেকে ফিরে আসার আহবান জানান।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক

শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশেষ দূত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশেষ দূত

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিক গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রথম দিনই তিনি প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর গতরাতে লুেফ সিদ্দিকী ফেসবুকে জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। লুেফ সিদ্দিকী লিখেছেন, আজ আমার দপ্তরে উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাই।

তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এজেন্ডায় দ্রুত ও গঠনমূলক সাড়া দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআর, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার আরো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচি ঠিক করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। তিনি অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

এর পাশাপাশি ন্যূনতম শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। সে সময় বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ। ট্রাম্প যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের রপ্তানি কম ও আমদানি বেশি, সেসব দেশের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তবে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার দিন অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ট্রাম্প ন্যূনতম ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন।
এর আগে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনায় আগ্রহ ও মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিল।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়ে পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনও সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠান।

বাংলাদেশের চিঠি দুটি পাঠানোর দুই দিন পর, অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনলাইন বৈঠক হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ পরিকল্পনার বিষয়ে ইউএসটিআর জানতে চায়।

ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিকের সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু হেরাপের আজ বুধবার ভোরে ঢাকায় আসার কথা। বাংলাদেশে অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরসঙ্গী হিসেবে মায়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনও আসছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার এটিই প্রথম ঢাকা সফর। এ সফরে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা ও মায়ানমার পরিস্থিতিসহ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

মন্তব্য

লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

লন্ডনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় এই সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে শীতল সম্পর্কের মধ্যে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করে হচ্ছে।

এই বৈঠকের পর দুই দলের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে দাঁড়ায়, তা এখন দেখার বিষয়।

প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে সোমবার সকালে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দেশে ফিরেছেন। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এখনো দেশে ফেরেননি।

লন্ডনে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন খালেদা জিয়া।

তিনি সেখানে থেকে লন্ডন ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তাঁর আবার পরীক্ষা হবে। এরপর তিনি দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত আমির গণমাধ্যমকে বলেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে।

তাঁরা একসঙ্গে অনেক দিন কাজ করেছেন। বেগম জিয়া অসুস্থ। তাঁর খোঁজখবর নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। বহুদিন পর দেখা হয়েছে। তাঁর জন্য দোয়া করেছি, তাঁর কাছে দোয়া চেয়েছি।

তারেক রহমানের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, দুজন মানুষ একসঙ্গে হলে তো অনেক কথাই হয়। অনেক কথাই হয়েছে। তবে তিনি এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি।

ধারণা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে যে দূরত্ব এই বৈঠকের মাধ্যমে তা নিরসন হতে পারে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একাধিক নেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তাঁরা কিছু বলতে পারেননি।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত ৪ এপ্রিল ব্রাসেলস সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আমিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ কর্মসূচি ছিল জামায়াত আমিরের। সফরকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ককাসের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক, ইইউয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সাউথ এশিয়া ডেস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় জামায়াত প্রতিনিধিদলের।

ব্রাসেলস থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের লন্ডনে যান।

এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমির সাক্ষাৎ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান গত রাতে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সাক্ষাতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। দুই ডাক্তারের (শফিকুর রহমান ও সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের) এই সাক্ষাৎ রাজনীতির রসায়নে নতুন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, নাকি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েই থাকবে, তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সামনের দিকে।

মারুফ কামাল খান আরো লেখেন, বেগম জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিলেত যাওয়ার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সস্ত্রীক তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার নিয়েও বিশদ কিছু জানা যায়নি।

মন্তব্য

প্রথমবারের মতো ছোট হচ্ছে বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রথমবারের মতো ছোট হচ্ছে বাজেট

স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার কমছে। উচ্চাভিলাষী বাজেটের ধারাবাহিকতা থেকে সরে এই পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ছোট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম।

বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

গতকাল মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭.৯৭ লাখ কোটি টাকা।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।

সভায় আগামী বাজেট বিষয়ে একটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

অর্থ মন্ত্রাণলয় সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজেটের আকার কমানো হয়েছে মূলত উন্নয়ন খাতে।

নতুন অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২.৩০ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২.৬৫ লাখ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া বেশির ভাগ মেগাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মেগাপ্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামী অর্থবছর প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমবে।

বাজেটের আকার কমলেও এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা না কমে বরং বাড়ছে। আগামী অর্থবছর সংস্থাটির জন্য ৫.১৮ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে অর্থ বিভাগ। যদিও এনবিআরের পক্ষ থেকে লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখের মধ্যে সীমাদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২.২৬ লাখ কোটি টাকা। মূলত চড়া সুদে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা সীমিত রাখার চেষ্টা করছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করবে সরকার।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫% প্রাক্কলন করছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৫% এবং মূল্যস্ফীতি ৬% প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২৫% ও মূল্যস্ফীতি ৮.৫% প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।

জানা গেছে, মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরো বলেন, বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

চলতি বাজেটে ঘাটতি ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন

ভারত থেকে সুতা, গুঁড়া দুধসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভারত থেকে সুতা, গুঁড়া দুধসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে সুতাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা আর থাকছে না। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সুতা, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন ধরনের কাগজ, কাগজের বোর্ডসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এনবিআরের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভারত থেকে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভির পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফ্যাব্রিকসএই পণ্যগুলো আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত এবং প্রক্রিয়াজাত সুতা ও আলু ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানি করা যাবে। ভ্যাট নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং অবৈধ রি-এক্সপোর্ট বা রিরাউটিং রোধ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বিশেষ করে টেক্সটাইল, কাগজ ও সিরামিক পণ্য খাতে দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রক্ষা করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এসংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।

জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

এ কারণে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)।

এ ছাড়া চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ