ঢাকা, বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬
এক-এগারোর নীলনকশা

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র

  • দুর্নীতির অসত্য গল্প
  • ২১ আগস্টের কল্পকাহিনি
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র

তারেক রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে বিএনপিকে আগলে রেখেছেন। গত ১৭ বছর তিনি শুধু বিএনপিকেই আগলে রাখেননি, দলটিকে শক্তিশালীও করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

তাঁর ত্যাগ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এখন দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। অথচ এই তারেক রহমানকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। সাংবাদিকতার রীতিনীতি বিবর্জিত, কুিসত, নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছিল প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠী। তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/04.April/16-04-2025/kalerkantho-ft-8a.jpgবানিয়ে বিতর্কিত করার নীলনকশা বাস্তবায়নের মূল হোতা ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গোষ্ঠী তারেক রহমানকে জড়িয়ে ষড়যন্ত্র করে। আওয়ামী লীগকে খুশি করতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার কাল্পনিক গল্প ফাঁদে। এই দুটি পত্রিকা যেভাবে ২১ আগস্টের কল্পিত কাহিনি তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গোয়েন্দারা তাদের তদন্ত রিপোর্টই হুবহু কপি করেন। তারেক রহমান যেহেতু জাতীয়বাদী রাজনীতির ধারক-বাহক তাই ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই তাঁকে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট করার বিরামহীন চেষ্টা চালায় এই গোষ্ঠী।

এটাও সবার কাছে বদ্ধমূল ধারণা যে ২০০৭ সালে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গোষ্ঠীর বিরাজনৈতিকীকরণের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে এক-এগারো আসে। একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে। তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ ও ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে এই অনির্বাচিত সরকার প্রথম আলো, ডেইলি স্টার গোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন শুরু করে। আর এই চরিত্র হননের খেলায় মুখপাত্র ছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। এই সময় প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের ফর্মুলা অনুযায়ী শুরু হয় মাইনাস টু ফর্মুলা

কিন্তু দুই নেত্রীকে মাইনাস করলেই তো বিরাজনৈতিকীকরণ করা হবে না। কারণ ২০০১ সালের নির্বাচন থেকেই তারেক রহমান তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন এবং রাজনীতিতে নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনী ভাবনার প্রয়োগ ঘটাচ্ছেন। এ কারণেই প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের টার্গেট হন তারেক রহমান। প্রথম শুরু হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুিসত মিথ্যাচার। তারেক রহমানকে যে তথাকথিত দুর্নীতিবাজের অপবাদ ও তকমা লাগানো হয়েছিল সেটি ছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের একটি ভয়াবহ নমুনা। বাংলাদেশে অপসাংবাদিকতার ইতিহাসে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বড় উদাহরণ। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বাংলাদেশে অপসাংবাদিকতার জনক। তিনি শুধু দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’—এ রকম প্রতিবেদনই প্রকাশ করেননি, বরং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে স্বনামে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেন। ২০০৭ সালের ৭ জুন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায়। মন্তব্য প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল তারেকের দুর্নীতির বিচার হতেই হবে। ওই প্রতিবেদনে মতিউর রহমান লিখেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের একটি হলফনামার পূর্ণ বিবরণ ছাপা হয়েছে মানবজমিন পত্রিকায়। হলফনামাটিতে তারেক রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। বিলম্ব হলেও এ প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা হওয়া দরকার। প্রকাশিত হলফনামা বিবরণে বলা হচ্ছে, আমি তারেক রহমান নিম্নলিখিত ঘটনার জন্য আমি আমার পরিবার, দেশের মানুষ, জাতীয়তাবাদী দলের সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি, গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের প্ররোচনায় তার বহু অবৈধ আয় সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েও তা থেকে বিরত হইতে নিষেধ করি নাই, যা পরোক্ষভাবে তাকে সমর্থন দেয়া হয়। তার ওয়ান গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানে আমাকে মৌখিকভাবে সাথে রাখে এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়তে সে বিভিন্নভাবে অবৈধ আয় করে। এই অবৈধ আয় থেকে আমার, আমার রাজনৈতিক খরচের নামে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দেশে এবং বিদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমি তাকে বারণ করিনি।’”

শুধু তা-ই নয়, মতিউর রহমান এই মন্তব্য প্রতিবেদনে তারেক রহমানকে একজন দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে অভিহিত করেছিলেন এবং দ্রুত তারেক রহমানকে আইনের আওতায় এনে তাঁর বিচার দাবি করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অনুসন্ধানে দেখা যায় যে এ রকম কোনো হলফনামায় তারেক রহমান স্বাক্ষর করেননি। এটি ছিল তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের এক বানোয়াট চিঠি। তৎকালীন অনির্বাচিত সরকার তারেক রহমানকে নির্যাতন করেও কোনো দুর্নীতির হদিস পায়নি। এ কারণেই তারেক রহমানের স্বাক্ষর জাল করে এই ভুয়া হলফনামা তৈরি করেন তৎকালীন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। এই হলফনামাটির লেখক মতিউর রহমান। অথচ প্রথম আলো সেই রকম একটি আজগুবি বানোয়াট হলফনামার ভিত্তিতে বাংলাদেশের রাজনীতির তরুণদের কণ্ঠস্বর তারেক রহমানকে দুর্নীতিবাজ এবং তাঁকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছিল। পরবর্তী সময়ে যখন প্রমাণ হয় যে হলফনামাটি ভুয়া, তখনো মতিউর ক্ষমা চাননি, দুঃখ প্রকাশও করেননি।

এরপর ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমানের জঙ্গি কানেকশন আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়। এটি করতে চেয়ে মাইনাস ফর্মুলার জনক এই পত্রিকা দুটি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনার সঙ্গে মনগড়া গল্প রচনা করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএনপির সঙ্গে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সম্পৃক্ততাকে কল্পকাহিনি হিসেবে নাকচ করে দিয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সব আসামিকে খালাস দেন। অথচ প্রথম আলো ২১ আগস্টের ঘটনায় তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা প্রমাণে একের পর এক সাংবাদিকতার রীতিনীতিবিরুদ্ধ অসত্য-বানোয়াট রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২১ আগস্টের ঘটনায় প্রথম আলোর কল্পিত আবিষ্কার মুফতি হান্নান। শুধু তা-ই নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়ও প্রথম আলো জঙ্গিবাদ আবিষ্কার করেছিল। এই জঙ্গিবাদের ঘটনা নিয়ে বিভিন্নভাবে নানা রকম নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছিল প্রথম আলো গোষ্ঠী। শুধু তা-ই নয়, সারা দেশে জঙ্গিবাদ আবিষ্কারের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সব স্থানীয় প্রতিনিধিদের। সেই নির্দেশনার অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো, যে প্রতিবেদনের মধ্যে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে পত্রিকাটি। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল জঙ্গিবাদের মদদদাতা বিএনপির ৮ মন্ত্রী-সাংসদ। বিএনপির ৮ মন্ত্রী-সাংসদকে সরাসরিভাবে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করেছিল প্রথম আলো; যাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হক। এ ছাড়া সে এলাকার জনপ্রিয় এমপি ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নাদিম মোস্তফা ও বাংলা ভাইয়ের এলাকার এমপি আবু হেনাকেও তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিহিত করেছিল। তাঁদের ছবিসহ সংবাদ প্রথম পাতায় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করে। এটি কত বড় অপসাংবাদিকতা, তা চিন্তারও বাইরে। সরাসরিভাবে একটি রাজনৈতিক দলের আটজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সংসদ সদস্যকে কোনো রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়া জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করাটা একটি ভয়ংকর অপরাধ বটে। কিন্তু এ রকম ঘৃণ্য দেশবিরোধী অপরাধ করেও প্রথম আলো, ডেইলি স্টার গোষ্ঠী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিএনপির শাসনামলে প্রথম আলো একের পর এক জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কাল্পনিক মনগড়া বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করে।

মুফতি হান্নানের বক্তব্য আমি চার জোটের সমর্থক’—এর মাধ্যমে পুরো চারদলীয় জোটকেই প্রথম আলো জঙ্গি হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেছিল। পরবর্তী সময়ে এটি প্রমাণিত হয় যে মুফতি হান্নানের বক্তব্য ছিল অসত্য। এটা প্রথম আলোর আরেকটি মিথ্যাচার।

বিএনপিকে জঙ্গি রাজনৈতিক দল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম আলো মূলত বাংলাদেশকেই একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, যেটি আওয়ামী লীগ বিশ্বব্যাপী প্রচার করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার সুযোগ পেয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতেই প্রথম আলো-ডেইলি স্টার জঙ্গি নাটকে এত আগ্রহী ছিল। আওয়ামী লীগ ও ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নেই এসব করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায় যে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা, দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ এনে তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনাম। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নীতির গালভরা মিথ্যাচার প্রথম আলো, ডেইলি স্টারে লাগাতারভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথাকথিত অভিযোগ এনে জিয়া পরিবারকে কলুষিত করা, কলঙ্কিত করার জন্য একটি নোংরা খেলায় মেতেছিল প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। বিএনপিকে জঙ্গি প্রমাণে এই দুটি পত্রিকা তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব ভিত্তিহীন মিথ্যাচার করেছে তার বিচার এখন সময়ের দাবি বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক

শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশেষ দূত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশেষ দূত

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিক গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রথম দিনই তিনি প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর গতরাতে লুেফ সিদ্দিকী ফেসবুকে জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। লুেফ সিদ্দিকী লিখেছেন, আজ আমার দপ্তরে উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাই।

তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এজেন্ডায় দ্রুত ও গঠনমূলক সাড়া দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআর, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার আরো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচি ঠিক করা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। তিনি অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

এর পাশাপাশি ন্যূনতম শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। সে সময় বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ। ট্রাম্প যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের রপ্তানি কম ও আমদানি বেশি, সেসব দেশের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তবে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার দিন অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ট্রাম্প ন্যূনতম ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন।
এর আগে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনায় আগ্রহ ও মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছিল।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়ে পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনও সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠান।

বাংলাদেশের চিঠি দুটি পাঠানোর দুই দিন পর, অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনলাইন বৈঠক হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ পরিকল্পনার বিষয়ে ইউএসটিআর জানতে চায়।

ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিকের সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু হেরাপের আজ বুধবার ভোরে ঢাকায় আসার কথা। বাংলাদেশে অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরসঙ্গী হিসেবে মায়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনও আসছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার এটিই প্রথম ঢাকা সফর। এ সফরে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা ও মায়ানমার পরিস্থিতিসহ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

মন্তব্য

লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ

লন্ডনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় এই সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে শীতল সম্পর্কের মধ্যে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করে হচ্ছে।

এই বৈঠকের পর দুই দলের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে দাঁড়ায়, তা এখন দেখার বিষয়।

প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে সোমবার সকালে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দেশে ফিরেছেন। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এখনো দেশে ফেরেননি।

লন্ডনে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন খালেদা জিয়া।

তিনি সেখানে থেকে লন্ডন ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তাঁর আবার পরীক্ষা হবে। এরপর তিনি দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত আমির গণমাধ্যমকে বলেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে।

তাঁরা একসঙ্গে অনেক দিন কাজ করেছেন। বেগম জিয়া অসুস্থ। তাঁর খোঁজখবর নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। বহুদিন পর দেখা হয়েছে। তাঁর জন্য দোয়া করেছি, তাঁর কাছে দোয়া চেয়েছি।

তারেক রহমানের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, দুজন মানুষ একসঙ্গে হলে তো অনেক কথাই হয়। অনেক কথাই হয়েছে। তবে তিনি এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি।

ধারণা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে যে দূরত্ব এই বৈঠকের মাধ্যমে তা নিরসন হতে পারে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একাধিক নেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তাঁরা কিছু বলতে পারেননি।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত ৪ এপ্রিল ব্রাসেলস সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আমিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ কর্মসূচি ছিল জামায়াত আমিরের। সফরকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ককাসের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক, ইইউয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সাউথ এশিয়া ডেস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় জামায়াত প্রতিনিধিদলের।

ব্রাসেলস থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের লন্ডনে যান।

এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমির সাক্ষাৎ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান গত রাতে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি বলেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সাক্ষাতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। দুই ডাক্তারের (শফিকুর রহমান ও সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের) এই সাক্ষাৎ রাজনীতির রসায়নে নতুন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, নাকি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েই থাকবে, তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সামনের দিকে।

মারুফ কামাল খান আরো লেখেন, বেগম জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিলেত যাওয়ার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সস্ত্রীক তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার নিয়েও বিশদ কিছু জানা যায়নি।

মন্তব্য

প্রথমবারের মতো ছোট হচ্ছে বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রথমবারের মতো ছোট হচ্ছে বাজেট

স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার কমছে। উচ্চাভিলাষী বাজেটের ধারাবাহিকতা থেকে সরে এই পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ছোট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম।

বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

গতকাল মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭.৯৭ লাখ কোটি টাকা।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।

সভায় আগামী বাজেট বিষয়ে একটি উপস্থাপনা উপস্থাপন করেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

অর্থ মন্ত্রাণলয় সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজেটের আকার কমানো হয়েছে মূলত উন্নয়ন খাতে।

নতুন অর্থবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২.৩০ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২.৬৫ লাখ কোটি টাকা।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া বেশির ভাগ মেগাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মেগাপ্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামী অর্থবছর প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমবে।

বাজেটের আকার কমলেও এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা না কমে বরং বাড়ছে। আগামী অর্থবছর সংস্থাটির জন্য ৫.১৮ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে অর্থ বিভাগ। যদিও এনবিআরের পক্ষ থেকে লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখের মধ্যে সীমাদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২.২৬ লাখ কোটি টাকা। মূলত চড়া সুদে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা সীমিত রাখার চেষ্টা করছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করবে সরকার।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫% প্রাক্কলন করছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৫% এবং মূল্যস্ফীতি ৬% প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২৫% ও মূল্যস্ফীতি ৮.৫% প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।

জানা গেছে, মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরো বলেন, বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

চলতি বাজেটে ঘাটতি ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন

ভারত থেকে সুতা, গুঁড়া দুধসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভারত থেকে সুতা, গুঁড়া দুধসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা

ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে সুতাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা আর থাকছে না। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সুতা, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন ধরনের কাগজ, কাগজের বোর্ডসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এনবিআরের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভারত থেকে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভির পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফ্যাব্রিকসএই পণ্যগুলো আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তবে নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত এবং প্রক্রিয়াজাত সুতা ও আলু ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানি করা যাবে। ভ্যাট নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং অবৈধ রি-এক্সপোর্ট বা রিরাউটিং রোধ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বিশেষ করে টেক্সটাইল, কাগজ ও সিরামিক পণ্য খাতে দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রক্ষা করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এসংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।

জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

এ কারণে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ)।

এ ছাড়া চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ