বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে সিলভানা কাদের সিনহার একটি নিবন্ধ। তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ওষুধ কম্পানি অ্যাকমি ল্যাবরেটরিজ প্রতিষ্ঠার পেছনে অন্যতম একজন উদ্যোক্তা হামিদুর রহমান সিনহার নাতনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত একজন আইনজীবী, পাশাপাশি প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তাঁর নিবন্ধটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
তিনি লেখেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত এ মুহূর্তে এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় বিনিয়োগক্ষেত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখানে একদিকে যেমন রয়েছে উন্নত সেবার জন্য উত্সুক বিশাল জনগোষ্ঠী, অন্যদিকে তেমনি রয়েছে বেসরকারি অংশগ্রহণে উৎসাহী সরকারও। আর সেই সঙ্গে রয়েছে একটি বাজার, যেখানে চাহিদা প্রতিনিয়ত সরবরাহকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এখনই সময় ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলার এবং এক অর্থবহ ব্যবসা নির্মাণের।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ শুধু একটি লাভজনক ব্যাবসায়িক সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি বিচক্ষণ, আকারে বর্ধিতকরণের সুযোগযোগ্য এবং বহুল প্রতীক্ষিত উদ্যোগ। যাঁরা এখন এগিয়ে আসবেন, তাঁদের লাভ শুধু আর্থিক মুনাফায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা পরিমাপ হবে কোটি মানুষের জীবনে আনা ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এখনই বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। মানসম্মত চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাজারে যে বিশাল ফাঁক রয়েছে, সেটি পূরণ করতে এখনো আগেভাগেই প্রবেশ করা সম্ভব।
সরকারও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় নানা প্রণোদনা দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ১০০ শতাংশ বৈদেশিক মালিকানার অনুমতি ও করছাড় সুবিধা।
বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু স্বাস্থ্য খরচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম, তবে ২০৪০ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে; যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি দুর্লভ সুযোগ। গত দুই দশকে দেশে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ছয় গুণ বেড়েছে। তবে এখনো মানসম্পন্ন চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান গড়ার জায়গা অনেক। প্রাভা হেলথ বর্তমানে বাংলাদেশের মাত্র ১১টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি।
অর্থাৎ প্রতি ১.৬ কোটি বাংলাদেশির জন্য এ ধরনের মাত্র একটি নির্ভরযোগ্য সেন্টার রয়েছে, যেখানে ভারতে প্রতি ৫.৭৫ লাখ মানুষের জন্য একটি করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ।
স্পষ্ট করে বলা যায়, বাংলাদেশের মতো অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ শুধু চিকিৎসার অভাব নয়, বরং মানসম্মত চিকিৎসার অভাব। আমাদের প্রয়োজন আরো মানসম্পন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাব ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র; একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য অবকাঠামো। এই খাতে বিনিয়োগ যেমন জরুরি, তেমনি তা দীর্ঘ মেয়াদে লাভজনক বলেই প্রমাণিত হয়েছে। সারা এশিয়াতেই এখন স্বাস্থ্য খাত থেকে কোটি কোটি টাকা অর্জনকারী ব্যবসায়ী উঠে আসছেন। স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন শুধু জনস্বাস্থ্য রক্ষাই নয়, এটি একটি বুদ্ধিদীপ্ত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে বাংলাদেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষ কোনো ধরনের স্বাস্থ্য বীমার আওতায় রয়েছে। এটি এক বিশাল সম্ভাবনাময় ও উন্মোচনের অপেক্ষায় থাকা বাজার।