<p>আনাস ইবনে মালেক (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিখ্যাত সাহাবি। তাঁর উপনাম আবু হামজা ও আবু সুমামা। পিতা মালেক। মা উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা.)। তিনি মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার সন্তান। তিনি রাসুল (সা.)-এর  বিশেষ খাদেম। কারি, মুফতি ও মুহাদ্দিস সাহাবি। অঢেল সম্পদ ও অধিক আওলাদের মালিক। (আত তাবকাতুল কুবরা : ৭/১২, পৃষ্ঠা ২৮৩৭; উসদুল গাবাহ : ১/১৫১, পৃষ্ঠা ২৫৮; সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৪২৩, পৃষ্ঠা ২৮৪)</p> <p>হিজরতের ১০ বছর আগে মদিনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন আট থেকে ৯ বছর তখন তাঁর মা ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ক্ষুব্ধ হয়ে স্ত্রী ও পুত্রকে ছেড়ে সিরিয়ায় চলে যান এবং সেখানেই কুফরি অবস্থায় মারা যান। স্বামীর ইন্তেকালের পর পুত্র আনাসের লালন-পালনের কথা ভেবে উম্মে সুলাইম কিছুকাল অন্যত্র বিবাহ বসেননি। পরে সাহাবি আবু তালহা আনসারী (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।</p> <p> </p> <p><strong>রাসুল (সা.)-এর খিদমতে আত্মনিয়োগ</strong></p> <p>রাসুল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন তখনই আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সাহাবি হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। তখন তাঁর বয়স ১০ বছর। কিছুদিন পর তাঁর মা তাঁকে নিয়ে উপস্থিত হলেন রাসুল (সা.)-এর দরবারে। বলেন, আনসারদের নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই আপনাকে কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়েছে; আমি তো কিছু দিতে পারিনি। আমার আছে এই ছেলে। সে লিখতে জানে। আপনার খিদমতের জন্য একে কবুল করে নিন। সেদিন থেকে আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর খিদমতে আত্মনিয়োগ করেন এবং রাসুল (সা.)-এর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটানা ১০ বছর খিদমত করেন। (আনসাবুল আশরাফ : ১/৫০৬, পৃষ্ঠা ১০২২)</p> <p> </p> <p><strong>বরকতের দোয়া</strong></p> <p>একদা রাসুল (সা.) আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইমের ঘরে এলেন। ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায় করলেন আর উম্মে সুলাইম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া করেন। এই সুযোগে উম্মে সুলাইম (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার একটি প্রিয় ছেলে আছে, তার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করুন। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কে সে? বলেন, আপনার খাদেম আনাস।’ অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁর জন্য এমনভাবে দোয়া করেন, যাতে দুনিয়া-আখিরাতের কোনো কল্যাণের বিষয় বাদ দেননি। নবীজি দোয়া করেন, হে আল্লাহ! তাকে ধনে-জনে বরকত দান করুন। (বুখারি : ২/২৬৬)</p> <p>রাসুল (সা.)-এর এই দোয়ার বরকতে তিনি সুদীর্ঘ হায়াত, অঢেল সম্পদ ও অনেক সন্তান লাভ করেন। ৯০ মতান্তরে ১০৩ বছর হায়াত লাভ করেন। তাঁর বংশ থেকে ১০০ জন, মতান্তরে ৮০ জন সন্তান (৭৮ ছেলে ও দুই মেয়ে) জন্মলাভ করে। (মিশকাত, আসমাউর রিজাল : ৫৮৫)</p> <p> </p> <p><strong>যুদ্ধে অংশগ্রহণ</strong></p> <p>স্বল্প বয়সেও তিনি সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বদর যুদ্ধেও যোগদান করেছেন। তবে যোদ্ধা হিসেবে নয়। কারণ সে যুদ্ধে বয়সের বাধ্যবাধকতা ছিল। তবু তিনি রাসুল (সা.)-এর সেবা ও মুজাহিদিনের মাল-সামান দেখাশোনার দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। ষষ্ঠ হিজরি বাইআতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণ করেন। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। সপ্তম হিজরি সনে উমরাতুল কাজা আদায় করেন। একই বছর খাইবার বিজিত হয়। খাইবার অভিযানে তিনি আবু তালহা (রা.)-এর  সঙ্গে উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন। (আসহাবে রাসুলের জীবনকথা : ৩/১৮৬, ১৮৭)</p> <p>প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) তাঁকে বাহরাইনের সদকার মালামাল উসুলের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.)-এর খিলাফতামলে তিনি মদিনা থেকে বসরা শহরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। খলিফার পক্ষ থেকে বসরাবাসীর ফিকহ ও ফাতাওয়ার দায়িত্ব যাঁদের ওপর অর্পিত হয় আনাস (রা.) তাঁদেরই একজন। জীবনের বাকি অংশ তিনি এই বসরাতেই কাটিয়ে দেন। (প্রাগুক্ত ৩/১৮৮)</p> <p> </p> <p><strong>হাদিস বর্ণনা</strong></p> <p>আল্লামা জাহাবি (রহ.) বলেন, আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর দুই হাজার ২৮৬টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে যৌথভাবে বুখারি-মুসলিম ১৮০টি এবং এককভাবে বুখারি ৮০টি ও মুসলিম ৯০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৪২৩; আল-আলাম : ২/২৫)</p> <p>যাঁদের থেকে তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন, তাঁরা হলেন রাসুল (সা.), আবু বকর (রা.), উমর (রা.), উসমান (রা.) মুআজ (রা.), উসাইদ ইবনে হুজাইর (রা.), আবু তালহা (রা.), মা উম্মে সুলাইম (রা.), খালা উম্মে হারাম (রা.), উবাদাহ ইবনে সামিত (রা.), আবু জার (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), ফাতিমা বিনতে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রমুখ। আর তাঁর থেকে যাঁরা হাদিস বর্ণনা করেছেন, তাঁদের ফিরিস্তি সুদীর্ঘ। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৪১৭)</p> <p> </p> <p><strong>ইন্তেকাল</strong></p> <p>আনাস (রা.)-এর মৃত্যুসন ও বয়স নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যথা : ৯০/৯১/৯২/৯৩ হিজরি। অনুরূপভাবে বয়স নিয়েও রয়েছে অনেক অভিমত। আল্লামা জাহাবি (রহ.) বলেন, তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ অভিমত হলো, তিনি ৯৩ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। তিনি বসরায় ইন্তেকালকারী সর্বশেষ সাহাবি। তাঁর ইন্তেকালের পর সারা দুনিয়ায় একমাত্র আবুত তুফাইল (রা.) ছাড়া অন্য কোনো সাহাবি জীবিত ছিলেন না। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৪২৩, পৃষ্ঠা ২৮৪)</p> <p> </p>