<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহান আল্লাহ বান্দাদের তাঁর ভালোবাসা ও সান্নিধ্য দানের জন্যই রমজান মাস দান করেন। এ মাসের রোজা শুধু আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ নিজেই রোজার প্রতিদান অথবা আল্লাহ নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। রোজার মাধ্যমে প্রতিদান লাভের জন্য রোজাকে নিখুঁত করতে হবে। প্রত্যেক ইবাদতকেই বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে সুন্দর ও নিখুঁত করতে হয়, তাহলেই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। রোজাকেও উভয় দিক থেকে সুন্দর ও নিখুঁত করতে হবে। রোজার বাহ্যিক সৌন্দর্য হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। এই বিরত থাকার মাধ্যমে মানুষের পেট ও যৌন চাহিদা সংযমী হয়। রমজান মাসজুড়ে সিয়াম সাধনার কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে পেট ও যৌনাঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ দুটি অঙ্গ দ্বারাই বেশির ভাগ পাপ সংঘটিত হয়। রোজার অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য হলো, রোজা অবস্থায় মিথ্যাচার, মিথ্যা কাজ, গিবত, পরনিন্দা, অশ্লীলতা, বাগবিতণ্ডা ও মারামারিতে লিপ্ত না হয়ে বরং সব অঙ্গকে পাপ থেকে নিবৃত্ত রাখা। অবশ্য এসব শুধু রোজার সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়, বরং রোজা রেখে এগুলো থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সংযত ও পাপমুক্ত জীবন যাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যেন সারা বছর সংযত ও পাপমুক্ত জীবন যাপন করা যায়। রোজাকে নিখুঁত ও পরিপূর্ণ করতে নিম্নে বর্ণিত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ পরিহার : মিথ্যা কথার ব্যাপকতায় মিথ্যা শপথ, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা অপবাদ, গিবত-শেকায়েত, চোগলখুরিসহ মুখনিঃসৃত সব অপরাধই অন্তর্ভুক্ত। আবার মিথ্যা কাজের ব্যাপকতায় মিথ্যা সত্যায়ন, মিথ্যা প্রতিবেদন, প্রতারণা, ভেজাল দেওয়া, কাজ ও দায়িত্বে ফাঁকি দেওয়া এবং দুর্নীতিসহ অনৈতিক সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত। কাজেই রোজাকে কার্যকর ও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করতে এসব কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ পরিত্যাগ করে না, সে ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহ্র কাছে কোনোই গুরুত্ব রাখে না। (বুখারি, হাদিস : ১৮০৪) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লেখ্য, এখানে রোজা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ পরিত্যাগ না করলে তার রোজাকে নবী (সা.) রোজা হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। বরং বলেছেন যে সে ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২. কুদৃষ্টি পরিহার : চোখের কুদৃষ্টি পাপের প্রথম ধাপ। এটি শয়তানের তীর, যা সরাসরি অন্তরে আঘাত করে। ফলে অন্তরে তাকওয়ার আলো জ্বলে না। তাকওয়াই রোজার মূল উদ্দেশ্য। কাজেই রোজাকে নিখুঁত করতে রমজান মাসে নৃত্য, সিনেমা ও গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া এবং বেপর্দা চলাফেরা থেকে বিরত থাকতে হবে। নবী (সা.) ইরশাদ করেন, কুদৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীরগুলো থেকে একটি তীর। (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ১৩০৬৮; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ৭৮৭৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩. অবৈধ শ্রবণ পরিহার : যে কথা মুখে উচ্চারণ করা নাজায়েজ, তা শ্রবণ করাও নাজায়েজ। সুতরাং রোজা অবস্থায় গান-বাজনা, গিবত-পরনিন্দা ইত্যাদি শোনা থেকেও বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যখন তারা অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন তারা তা উপেক্ষা করে চলে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৪. সব অঙ্গের নাফরমানি পরিহার : আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি অঙ্গই মানুষের জন্য অমূল্য নিয়ামত। তিনি মানুষকে তা দান করেছেন সঠিক পথে ব্যবহার করার জন্য। যদি তা দিয়ে আল্লাহর নাফরমানি করা হয়, তাহলে কিয়ামতের দিনে সেসব অঙ্গ ওই ব্যক্তির বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। তাই সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা : হা-মিম সিজদা, আয়াত : ২০) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫. অতিভোজন ও যৌনাচার পরিহার : অতিভোজনের ফলে কামভাব ও পশু প্রবৃত্তি দমিত হয় না। অথচ রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নফসের চাহিদা ও পশু প্রবৃত্তি দমন করা। তাই রমজান মাসে বেশি খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। আর অবৈধ যৌনাচার তো সর্বাবস্থায় পরিহার করতে হবে। রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও সব ধরনের যৌনাচার পরিহার করতে হবে। রোজা তো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহারসহ যৌনাচার থেকে বিরত থাকারই নাম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৬. কোনো কিছুর স্ব্বাদ অনুভব পরিহার : রোজা অবস্থায় সতর্কতাবশত কোনো খাদ্যদ্রব্য মুখে নেওয়া বা কোনো কিছু জিহ্বায় নিয়ে স্ব্বাদ অনুভব করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এসবের স্বাদ গলার ভেতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গলার ভেতর স্বাদ চলে গেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। এ আশঙ্কা থেকে রোজা অবস্থায় সতর্কতাবশত তরকারির স্বাদ পরীক্ষা করা, বাচ্চাদের খাবার চিবিয়ে দেওয়া, টুথ পাউডার ও পেস্ট ব্যবহার করা, পান-গুল-জর্দা-তামাক মুখে রাখা, নারীদের লিপস্টিক বা লিপজেল ব্যবহার করা, কুলি করার সময় গড়গড়া করা, নাকের নরম অংশের ওপর পানি পৌঁছানোর চেষ্টা করা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, সিরকা বা কোনো কিছুর স্বাদ গলায় পৌঁছে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (মুসান্নাফ, হাদিস : ৯২৭৭)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৭. শরীর বেশি দুর্বল হয়ে যায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন কাজ পরিহার : রোজা অবস্থায় শরীর বেশি দুর্বল হয়ে যায় এমন কাজ পরিহার করতে হবে। যেন শারীরিক এই দূর্বলতা রোজায় কোনো ধরনের প্রভাব ফেলতে না পারে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে শরীরের রক্ত দেওয়া জায়েজ। কিন্তু এতে যদি রোজাদার রক্তদাতা শারীরিক দুর্বলতার কারণে রোজা ভেঙে ফেলার মতো অবস্থার সম্মুখীন হয় তাহলে রক্ত দেওয়া পরিহার করতে হবে। আনাস বিন মালিক (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে তোমরা কি রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো (যাতে রক্ত বের করা হয়) অপছন্দ করো? তিনি বলেন, না, তবে (শারীরিক) দুর্বলতার কারণে অপছন্দ করি। (বুখারি, হাদিস : ১৮৩৮) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিশেষে বলা যায়, যেকোনো ইবাদত আদায় করে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হওয়ার আশা এবং কবুল না হওয়ার ভয় রাখা উচিত। রোজাদারের দিন কাটবে আল্লাহর আজাবের ভয় এবং রহমতের আশার মধ্য দিয়ে আর রাত কাটবে নামাজ, দোয়া ও কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে। তাহলে রমজানের সওয়াব, বরকত ও রহমত পূর্ণভাবে পাওয়া যাবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহযোগী অধ্যাপক</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় </span></span></span></span></p> <p> </p>